

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আবুল কালাম আজাদ এর ঢাকাস্থ বাড্ডা থানাধীন, সাতারকুল রোডের ফ্ল্যাট বাসায় দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সাংবাদিক আজাদ এর স্ত্রীর দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, গত ১০/১০/২০২৫ (শুক্রবার) ভোর ৭টায় বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। সাংবাদিক আজাদ এর কন্যা মুনতাহা মাহি (১১) দরজা খুলতেই মাস্ক পরিহিত ৪/৫ জন অপরিচিত ব্যক্তি অতর্কিত বাসায় ঢুকে পড়ে।
এসময় আজাদের স্ত্রী বাথরুমে ছিলেন এবং তার বড় ছেলে আরিয়ান (১৪) ও ছোট ছেলে রাইয়ান (২) ঘুমে ছিল। বাসায় ঢুকেই দুর্বৃত্তরা অস্রের মুখে বাসার আলমারি, শোকেস এর তালা ভেংগে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করে। আজাদ এর স্ত্রী বাথরুম থেকে বের হয়ে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে, তারা সাংবাদিক আজাদকে উদ্দেশ্য করে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং কোন কথা বললে বা ডাক চিৎকার দিলে গুলি করার ভয় দেখায়।
আজাদ এর স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের জানান, সন্ত্রাসীরা বারবার বলতে থাকে আজাদ দেশে আসলে তাকে হত্যা করা হবে। এরমধ্যে তার দুই ছেলে আচমকা ঘুম থেকে জেগে উঠে এসব দৃশ্য দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কান্না করলে, তারা বড় ছেলের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে কোনরকম শব্দ না করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় বাচ্চাগুলো বাকরুদ্ব হয়ে গেছে, তারা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।
অস্রের মুখে প্রায় ১৫ মিনিট তারা বাসায় তাণ্ডবলীলা চালিয়ে, নগদ প্রায় ২০ লাখ টাকা ও ২০ ভড়ি স্বর্ণালংকার নিয়ে বীরদর্পে চলে যায়। সন্ত্রাসীদের অস্রের ভয়ে ভুক্তভোগীরা ডাক চিৎকার করতে পারেনি। সন্ত্রাসীরা লিফটে উঠে যাওয়ার পর সাংবাদিক আজাদের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা ডাক চিৎকার দিলে, পাশের ফ্ল্যাট থাকা প্রতিবেশী সাংবাদিক নাজমা সুলতানা সহ অন্যান্যরা ছুটে আসেন। ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা চলে যায়।
উল্লেখ্য যে, মাদক-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লেখালেখি করার কারণে, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়ে জীবন মৃত্যুর মুখোমুখী হয়েছিলেন, সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ। তিনি একাধিকবার হত্যা চেষ্টা সহ শারীরিক ও মাানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে, গুলশান থেকে রাতে বাসায় ফেরার পথে, অপহৃত হয়ে শারীরিকভাবে রাতভর পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এসময় সন্ত্রাসীরা নির্যাতন করে তার পায়ের হার ভেংগে ফেলে। অপহরণকারীরা মৃত ভেবে তাকে ভোরে রাস্তায় ফেলে যায়, পরবর্তীতে পথচারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আওয়ামীলীগের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির কিছু সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ও মাদকব্যবসায়ী আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে, সাধারন মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। এরা সীমাহীন অপকর্মে জড়িয়ে পরে। এরমধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরদের হাতে মাদক তুলে দেয়া, মাদক বিক্রি করা, কিশোর গ্যাং তৈরি করে তাদের দিয়ে ছিনতাই ও হত্যার মতো জঘন্য কাজ করানো, এলাকায় চাঁদাবাজী, নদী থেকে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন যার ফলে উপকূলে বসবাসরত মানুষের জীবন নদীভাংগনের হুমকিতে ছিল। এসবের বিরুদ্বে প্রতিবাদ ও সংবাদ প্রকাশ করায় ঐসব সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদের চক্ষুশূল ছিল প্রতিবাদী সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ।
সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজরা বিভিন্ন গ্রুপে সংঘবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্বে একের পর এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। তার বিরুদ্বে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। সেসময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সামাজিক ও সাংবাদিক সংগঠন এসব মিথ্যা মামলা ও হামলার বিরুদ্বে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছিল।
সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকিতে সেসময় তার প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত ভয় আর আতংকে কাটতে থাকে। অবশেষে ২০২৩ সালের ৫ই মার্চ প্রাণ বাচাতে তিনি দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান।
জানা যায়, আমেরিকায় যাওয়ার পরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ তার বিরুদ্বে কয়েকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। এমনকি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তাকে হত্যার হুমকি দেয় বাহাদুর চৌধুরী নামে এক মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী।
সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ এর ঘনিষ্ঠজনেরা এই প্রতিবেদককে জানান, আজাদের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। আজাদ দেশে ফিরলে তাকে হত্যা করার সম্ভাবনা রয়েছে।