লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের আলোচিত বিএনপি নেতা আবুল খায়ের চেয়ারম্যান এখন যেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ‘কাণ্ডারি’। তার ব্যক্তিগত অফিস এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। ওই অফিস থেকেই দলীয় কর্মকাণ্ড ও সভা-সমাবেশ পরিচালিত হয়ে আসছে।
সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বিকল্প কাউকে পাওয়া যায়নি বলে বিএনপি নেতা আবুল খায়ের চেয়ারম্যানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জানান।
নেতাদের ম্যানেজ করে দলীয় পদ দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি খায়ের রাতারাতি আওয়ামী লীগের ‘বড় নেতা’হয়ে উঠায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করা হয়েছে।
আবুল খায়ের কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে তিনি বিভিন্ন সময় বিএনপির নানান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ছিলেন রামগতি উপজেলা বিএনপির সদস্য, চর কালিকিনি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট ইউনিয়ন বিএনপির সম্মানিত সদস্য ও পরবর্তীতে উপদেষ্টাও ছিলেন। তার স্ত্রী কহিনুর বেগমের নামও বিএনপির কমিটিতে রয়েছে।
আবুল খায়ের চেয়ারম্যান বর্তমানেও বিএনপির কমিটিতে বহাল আছেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কূটকৌশল করে ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে বসেন। তবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তাকে পদে চাইছেন না।
গঠনতন্ত্রের আলোকে ভোটের মাধ্যমে সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, বিএনপি নেতা আবুল খায়ের উড়ে এসে জুড়ে বসেন। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে ‘পকেট কমিটির’মাধ্যমে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। মানা হয়নি দলের গঠনতন্ত্র। এতে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে।
এদিকে সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগও দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আবুল খায়ের চেয়ারম্যান বিএনপির সমর্থন নিয়ে একাধিকবার ইউপি নির্বাচন করেছেন। নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছেন। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে দলীয় কিছু নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিজেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিচ্ছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে কিছুদিন আগ থেকে আবুল খায়ের চেয়ারম্যান নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে আসছেন।
আবুল খায়ের চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিএনপি করতাম; তবে কোনো পদে ছিলাম না। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগ আমাকে মৌখিকভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে।
কমলনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা চৌধুরী বলেন, আবুল খায়ের ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও তিনি বিএনপির পদ থেকে অব্যাহতি নেননি।
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন আজম বলেন, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভূতপূর্ব বা বর্তমান সদস্য আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য শ্রেণিভুক্ত হতে যে প্রক্রিয়া রয়েছে; তা আবুল খায়ের চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি। কেন এমন হয়েছে তা আমার জানা নেই।
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন মাস্টার বলেন, সাহেবেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বিকল্প কাউকে পাওয়া যায়নি। যে কারণে আবুল খায়ের চেয়ারম্যানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার পরও নেতা তৈরি হয়নি কেন? জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।