• আজ ১৪ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাপা সিরাপের ‘রিঅ্যাকশন’ রহস্যজনক: ওষুধ প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

| নিউজ রুম এডিটর ৮:৫৭ অপরাহ্ণ | মার্চ ১৩, ২০২২ সারাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ দুই সহোদরের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি। এ কমিটির সদস্যরা জানান- নাপা সিরাপের ‘রিঅ্যাকশন’ রহস্যজনক।

রোববার দুপুরে তারা এসব কথা জানান। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ওই দুই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে।

ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আকিব হোসেন। তার সঙ্গে অধিদপ্তরের দুইজন উপ-পরিচালক ও দুইজন সহকারী পরিচালক এবং একজন পরিদর্শক আছেন।

তদন্ত কমিটি মৃত দুই শিশুর মা লিমা বেগম ও চাচা উজ্জ্বল মিয়া ও দাদি লিলুফা বেগমের সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আকিব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, যে সিরাপটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই ওষুধের অন্যান্য ব্যাচের ওষুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, শিশুদের স্বজনরা জানিয়েছে, ওষুধ খাওয়ানোর পরই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ওষুধটিতে কী এমন উপাদান ছিল- যেটি খাওয়ার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে রিঅ্যাকশন করল- এটি আসলে রহস্যজনক বিষয়। এই রহস্য উদঘাটন করতে হয়তো সময় লাগবে।

এর আগে গত ১০ মার্চ রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ তোলেন স্বজনরা। মৃতরা দুর্গাপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাঈল হোসেন ওরফে সুজন খানের ছেলে।

এর আগে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান এর মা লিমা বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আশুগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ১০ টাকার টিকেট কাটা হয়। পরে কর্তব্যরত ডাক্তার কোনো চিকিৎসা না করেই বাচ্চাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে বলেন। অনেক অনুরোধ করলেও কোনো চিকিৎসা দেয়নি ডাক্তার অভিযোগ করেন রিশা বেগম।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে শিশু দুটির চিকিৎসা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সুস্থ হওয়ার আগেই দায়িত্বরতরা কীভাবে শিশু দুটিকে ছেড়ে দিলেন। শিশুর স্বজনরা গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন, তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকিট কাটলেও শিশুরা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়নি। দালালদের প্ররোচনায় তারা বাড়ির পথ ধরতে পারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে শিশু দুটিকে নিয়ে যান তাদের চাচা উজ্জ্বল। জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমরা সদর হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, ‘শিশুরা সুস্থ আছে, তাদের বাড়ি নিয়ে যান’। এজন্য বাড়ি নিয়ে আসি। বাড়ি আনার পথে একজন এবং বাড়িতে ফেরার পর আরেকজন মারা যায়।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. সোলায়মান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, শিশু দুটি জরুরি বিভাগে এলে তাদের টিকিট কাটতে বলা হয়। টিকিট কেটে তারা আর ফিরে আসেনি।

আগেরদিন শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. ওয়াহিদ উজ্জামান বলেছিলেন, ‘শিশু দুটির চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের টিকিট কাটা হয়েছিল। তবে তারা চিকিৎসা নেয়নি। আমার ধারণা, সম্ভবত তারা দালালের খপ্পরে পড়ে চিকিৎসা না নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছিল।’

শিশুর স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে শনিবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মোবাইলে ফোন করে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. সোলায়মান বলেন, তারা দালালদের খপ্পরে পড়তেও পারে। দালালদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওরা অনেক প্রভাবশালী। ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।