• আজ ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাইয়ের অনুরোধে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ!

অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অচলাবস্থাসহ বহুমুখী সংকটে বিপর্যস্ত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এর জেরে চলছে টানা বিক্ষোভ, পদত্যাগের চাপে রয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। চলমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে তাই সম্প্রতি নিজের ভাইকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান গোতাবায়া। অবশেষে মাহিন্দা রাজাপক্ষে সেই অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কলম্বো পেজের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমসসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট হাউসে দেশটির মন্ত্রিসভার এক বিশেষ বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে সম্মত হন।

শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে নিজের পদ ছাড়তে রাজি হয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি জানান, শ্রীলঙ্কার ক্রমাগত অর্থনৈতিক সংকটের একমাত্র সমাধান যদি তার পদত্যাগ হয়, তবে তিনি তা করতে ইচ্ছুক। মাহিন্দার পদত্যাগের ফলে মন্ত্রিসভাও ভেঙে যাবে।

এর মধ্যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেও স্বীকার করেছেন যে জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র জানান, ‘জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে’ শুক্রবার (৬ মে) মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। খবর আলজাজিরার।

এর আগে চরম অর্থনৈতিক সংকট ও দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে দেশটির জনগণ। শুক্রবার (০৬ মে) থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুল-কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আসে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার (৬ মে) শ্রীলঙ্কার প্রধান রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চল থেকে কমপক্ষে ৩ হাজার কারখানা শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেন। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রাভি কুমুদেশ বলেন, আমরা প্রেসিডেন্টের (গোতাবায়া রাজাপক্ষে) নীতিগত ভুলগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি, যা দেশের অর্থনীতিকে দুর্দশার দিকে নিয়ে গেছে। তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।

আমদানিকৃত খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতির প্রতিবাদে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটির বিভিন্ন শহরে থেমে থেমে বিক্ষোভ চলছে। শুক্রবার (৬ মে) শ্রীলঙ্কার বড় শহরগুলোর দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজধানী কলম্বোর প্রধান রেল স্টেশনও। ধর্মঘটে যোগ দেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তবে চালু রাখা হয় জরুরি পরিষেবা।

এদিকে সড়কের পাশাপাশি অনলাইনেও জোরদার হচ্ছে শ্রীলঙ্কার সরকারবিরোধী আন্দোলন। রাজাপক্ষে সরকারকে হটাতে আন্তর্জাতিক সংস্থার হস্তক্ষেপ চেয়েছে দেশটির নাগরিকরা।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ‘সেভ শ্রীলঙ্কা’ নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অধীনে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে আবেদন। এতে লঙ্কান সরকারের ভুল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কথা তুলে ধরা হয়।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তার মন্ত্রিপরিষদ উৎখাতে সম্প্রতি অনাস্থার ঘোষণা দেয় দেশটির প্রধান বিরোধীদল। পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবিওয়ারদেনার কাছে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব দেওয়া হয়।