টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে গোবিন্দাসী বাজারে জুয়েল ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। তার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে জটিল রোগসহ নানা রোগে ভুগেছেন একাধিক রোগী।
সাইফুল ইসলাম জুয়েল সামান্য পল্লী চিকিৎসার প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তার বনে গিয়েছেন। নামের আগে ডাক্তার উপাধি ব্যবহার করে তার নিজস্ব প্যাডে নিয়মিত লিখছেন প্রেসক্রিপশন এবং দিচ্ছেন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট। প্যাথলজিক্যাল টেস্টের বিনিময়ে পাচ্ছেন মোটা অংকের কমিশন।
ভুক্তভোগী ইয়ামিন সরকার জানান, হালকা ঠান্ডা জ্বর নিয়ে আমি জুয়েল ডাক্তারের কাছে যাই। সে আমাকে কয়েকটি টেস্ট করার জন্য একটি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে পাঠায়।
সাবিনা আক্তার বলেন, পেট ব্যথা নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে আমাকে ব্রেঞ্চে বসিয়ে ইঞ্জেকশন পুষ করে হাতে একগাদা ওষুধ ধরিয়ে দেয়। পরে ব্যথা না কমলে আমাকে বাড়ি গিয়ে রেস্টে থাকতে বলে। কিন্তু এতেও ঠিক না হলে পরে বাড়ির লোকজন আমাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেবার আমাকে ৪দিন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, মাথা ব্যথা ইত্যাদি রোগের লক্ষণ দেখেলেই সে রোগীকে বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে হয়রানি করেন। পরে না জেনে বুঝে নিজের ফার্মেসিতে বসেই নিজস্ব ডাক্তারী প্যাডে রোগীদের প্রেসক্রাইব করেন। বিভিন্ন প্রেসক্রাইব ঘেটে দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেশি লাভের আশায় নিম্নমানের কোম্পানির নামে বেনামের ওষুধ লিখে থাকেন। আর রোগ না বুঝে দিয়ে থাকেন বাড়তি অ্যান্টিবায়েটিক। দিনের পর দিন চলছে তার এই অপচিকিৎসা।
অপরদিকে জালাল হোসেন গাছ থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে আসলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে না পাঠিয়ে নিজেই ডাক্তার সেজে করেন সার্জারি ও লিখেন ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়েটিক সহ বিভিন্ন ওষুধ। পাশাপাশি করিয়ে নেন অপ্রয়োজনীয় কিছু টেস্ট। এমন অভিযোগ করে সে বলেন এতে আমার মাথার আঘাত শুকিয়ে গেলেও থেকে যায় প্রচণ্ড ব্যথা। পরবর্তীতে টাঙ্গাইল গিয়ে জানতে পারি ভুল সার্জারির ফলে ভেতরে ঘা পেকে ব্যথা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোবিন্দাসী বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির এক সদস্য জানান, তার অপচিকিৎসার বিষয়ে বাজারে কোন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হলে সে দোকানে তালা ঝুলিয়ে বাজার থেকে পালিয়ে যান। দূর থেকে নানান রকম তদবিরের চেস্টা করেন।
পল্লী চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম জুয়েল অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমি বিভিন্ন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে লিখি। এরপরেও লেখালেখিতে তেমন কিছু হবেনা আমি সবকিছু ম্যানেজ করেই চলছি। তবে এরপর থেকে আমি আর লিখবো না আমাকে ক্ষমা করে দিন।
এই ব্যাপারে তার বক্তব্য চাইতে গেলে বিভিন্ন অফার দেওয়ার চেষ্টা করেন ও ক্ষমা চেয়ে দায় সারতে চান।
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আল মামুন জানান, কোনভাবেই একজন পল্লী চিকিৎসক নামের আগে ডাক্তার এমনকি কোন নিজস্ব প্যাড ব্যবহার করতে পারবেন না। আর রেজিস্টার্ড ডাক্তার ছাড়া কোন এন্টিবায়োটিক লিখতে পারবে না এবং দিতেও পারেন না কোন ধরনের টেস্ট।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শেখ আলাউল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।