• আজ ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘কাঁচা সোনা’য় পাল্টে গেছে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের জীবন

| নিউজ রুম এডিটর ৭:৩৫ অপরাহ্ণ | মে ২৩, ২০২২ সারাদেশ

কিশোরগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র নদপাড়ের চরাঞ্চলের উৎসবের আমেজে চলছে ভুট্টা ঘরে তোলার ধুম। এ অঞ্চলের শত-শত পরিবার ভুট্টা চাষ করে জীবিকা নির্বাহের নতুন অবলম্বনের সন্ধান পেয়েছে। ফিরেছে সংসারের সচ্ছলতাও। আর এ কারণে ভুট্টা ফসল এখন এখানকার কিষাণ-কিষাণীদের কাছে কাঁচা সোনা হিসেবে বিবেচিত।

চাষিরা বলছেন- এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও পাচ্ছেন আশানুরূপ।

এবার এ অঞ্চলে ৩ হাজার ৫শ টনেরও বেশি ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে; যার বাজার মূল্য পাঁচ কোটি টাকারও বেশি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চর ফরাদী ও এগারসিন্দুর ইউনিয়নের নয়টি গ্রাম এক সময়ের প্রবল-প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদেরপাড়ে অবস্থিত। এ নদের ভাঙাগড়ার খেলার সঙ্গে আবর্তিত হতো এসব গ্রামের কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী মানুষের পূর্ব পুরুষদের জীবনচিত্র। কালের রুদ্ররোষে ব্রহ্মপুত্র নদের সেই ভয়াল রূপ নেই। যৌবন হারিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ আজ মৃত প্রায়। দুইপাড়ে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর।

সত্তর দশক ধরে এসব চর আবাদ করে সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহের পথ খোঁজে এ চরাঞ্চলের দারিদ্র্য পীড়িত অধিবাসীরা। কিন্তু সবজি চাষে কিছুতেই মিটছিল না তাদের পারিবারিক চাহিদা।

দেশে পোল্ট্রি শিল্প এবং ফিড মিলের বিকাশ ঘটায় এ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্রচুর পরিমাণ ভুট্টার চাহিদা দেখা দেয়। প্রতি বছর রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন ভুট্টা আমদানি করতে হয়। আর এমন সুযোগে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ভুট্টা চাষের তাগিদ বোধ করেন এ চরাঞ্চলের কৃষকরা। গত আট-দশ বছর ধরে তারা সবজি চাষের পরিবর্তে বেশি করে ভুট্টা চাষে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ফলও পান জাদুমন্ত্রের মতো।

ব্যাপক ভিত্তিতে ভুট্টা চাষাবাদের খবরে এমন মৌসুমে কিশোরগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র নদপাড়ের এ চরাঞ্চলে ভিড় করছেন পোল্ট্রি এবং ফিড মিল শিল্পের প্রতিনিধি ও পাইকাররা। তারা সরাসরি এখান থেকেই ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে কিনে নিচ্ছেন এসব ভুট্টা।

ভুট্টা ফসল চাষ করে ব্রহ্মপুত্রের এ চরাঞ্চলের দারিদ্র্য পীড়িত অধিবাসীরা সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। শুরু হয়েছে সম্ভাবনাময় নতুন জীবনের পালা।

এবারও ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজে কাঁচা সোনা খ্যাত ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করে ঘরে তোলার ধুম পড়েছে।

রোববার বিকালে কিশোরগঞ্জের ওই ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের দক্ষিণ চরটেকি গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শনকালে নদ তীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা গেছে কাঁচা সোনার মতো রৌদ্রে ঝলমল করছে শত শত মণ ভুট্টা।

এ সময় গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ কৃষক রইছ উদ্দিন মুনশি, ষাটোর্ধ কৃষক ফারুক মিয়া, রাজা মিয়া, ষাটোর্ধ কিষাণী বেগম, নববধূ ময়না বেগম ও রাহেলা খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। তারা অভিন্ন ভাষায় জানালেন তাদের মনের কথা। যুগান্তরকে বললেন, এ ভুট্টা চাষ করে তাদের মতো এ অঞ্চলের শত-শত পরিবার তাদের নিত্যসঙ্গী অভাব-দারিদ্র ঘুচিয়ে সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন, স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর এজন্যই তারা এ সময় এ ভুট্টা ফসলকে কাঁচা সোনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

একই সময় দেখা হলে কথা হয় এ দক্ষিণ চরটেকি ব্লকের কৃষি কর্মকর্তা মো. বজলুল হকের সঙ্গে। তিনি এ সময় যুগান্তরকে জানান, এ উপজেলার চরফরাদী ও এগারসিন্দুর ইউনিয়নের নয়টি গ্রামে পাঁচ শতাধিক হেক্টর চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ হয়েছে। কাঠাপ্রতি উৎপাদনও হয়েছে ৯ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা।

তিনি দাবি করেন, এ অঞ্চলে এবার সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা ফলেছে। এর বাজার মূল্য পাঁচ কোটি টাকারও বেশি।