• আজ ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি, জনদুর্ভোগ চরমে

| নিউজ রুম এডিটর ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ | জুন ২, ২০২২ সারাদেশ, সিলেট

আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: বিগত কয়েক দিনের বন্যায় সিলেট জুড়ে রাস্তা ঘাটের অবস্থা নাজুক হলে যোগাযোগ অবস্থায় দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ চরমে।

জানা গেছে, নগরীসহ সিলেট সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১২০টি সড়কে ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন ৮টি সড়কে ৫৫ কিলোমিটার, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার সড়ক বন্যা প্লাবিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবীর বলেন, সিলেট জেলায় এলজিইডির ৭ হাজার ৫১০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। পাকা সড়ক ২ হাজার ৪৯১ কিলোমিটার এবং কাঁচামাটির সড়ক ৫ হাজার ১৯ কিলোমিটার। এরমধ্যে বন্যা কবলিত হয়ে ১৩ উপজেলায় ১২০টি সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭৮ কিলোমিটার। এসব সড়কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সিলেটের ১০টি সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ৭২ কিলোমিটার আপাতত চলাচলের উপযোগী করে দিতে প্রয়োজন ৫ কোটি টাকা। আর বন্যায় সড়কগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে ৫০ কিলোমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক পুরোপুরি সংস্কারের জন্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন ১০টি সড়কে ৭২ কিলোমিটার বন্যা প্লাবিত হয়ে ক্ষতি হয়েছে। এই সড়ক দুই ধাপে মেরামত করা হবে। বেশী ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো আপাতত চলাচলের উপযোগী করে দেয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সামনে বাজেট তাই নতুন বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে এই মেরামত দিয়ে আগামীর দিনগুলো চলতে হবে। এরপরও স্থায়ী মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আমরা হেডকোয়ার্টারে আবেদন করেছি। বরাদ্দ পেলে স্থায়ী মেরামত কাজ শুরু হবে।

এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইনামুল কবির বলেন, বন্যার পানির নামা শুরু হলে আমরা ক্ষয়ক্ষতির একটা পরিমাণ নির্ণয় করেছিলাম। পানি পুরোপুরি নামার পর উপজেলা পর্যায় থেকে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২জুন) আমরা সিলেট জেলার উপজেলা পর্যায়ের সকল প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছি। এই বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও মেরামত-নির্মাণের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রুপরেখা প্রণয়ন করা হবে। তবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সাময়িক মেরামতের কোন সুযোগ নেই। এজন্য ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আমাদের সদর দফতরে আবেদন করেছি। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে। আপাতত আমরা গোয়াইনঘাট এলাকায় বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় নিজস্ব উপকরণ দিয়ে জরুরী সংস্কার করেছি। এভাবে খুব বেশী ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক গুলোতে তাৎক্ষণিক মেরামত চলছে। তবে জরুরী ভিত্তিতে পূণর্নিমাণ না হলে এসব মেরামত বেশীদিন ঠিকবেনা।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, সিসিক এলাকার ৫০০ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেকই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডের প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার সড়ক বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারি- গোয়াইনঘাট ২য় থেকে ১৬ তম কিলোমিটার পর্যন্ত ১২ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার, সিলেট-তামাবিল-জাফলং সড়ক ১ দশমিক ২০ কিলোমিটার, কানাইঘাটের দরবস্ত-কানাইঘাট-শাহবাগ সড়ক ৭ থেকে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ৩য় থেকে ৫ম এবং ৮ থেকে ১৩তম কিলোমিটার পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুর-লামাকাজি সড়ক ১৫ থেকে ১৭ তম কিলোমিটার পর্যন্ত ২ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ-ছাতক সড়ক ১ থেকে ১২ তম কিলোমিটার পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৫ পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, শেওলা সুতারকান্দি সড়কে ১ থেকে ৪র্থ কিলোমিটার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, বিমানবন্দর-বাদাঘাট-কুমারগাঁও (টুকেরবাজার) সড়কে ৫ থেকে ৯, ১১ ও ১২ তম কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট সদরের ১২টি সড়কে ১৭ দশমিক ১ কিলোমিটার ও ১৬ মিটারের একটি কালভার্ট মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। বিশ্বনাথে ৫টি সড়কে ১৮ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার সড়কে ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বালাগঞ্জে ৩টি সড়কে প্রায় আধা কিলোমিটার (দশমিক ৩৩৪ কি.মি.) ১২ লাখ টাকা, ওসমানীনগর উপজেলায় ১টি সড়কে পৌনে ২ কিলোমিটারে ৫০ লাখ টাকা, দক্ষিণ সুরমায় ৬টি সড়কে ১৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার সড়কের জন্য ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ফেঞ্চুগঞ্জে ১টি সড়কে ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সড়কে ২ কোটি টাকা, গোয়াইনঘাটে ২৭টি সড়কে ৯২ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার ৬৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, জৈন্তাপুরে ৯টি সড়কে ৩০ দশমিক ০৩ কিলোমিটারের জন্য ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কোম্পানিগঞ্জে ১২ সড়কে ৪২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক ও ১২ মিটার কালভার্টের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, কানাইঘাটে ৭টি সড়কে ২০ দশমিক ২৯১ কিলোমিটার ক্ষতি হয়েছে। মেরামতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৫ কোটি টাকা, জকিগঞ্জে ৭টি সড়কে ১৬ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সড়কে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, গোলাপগঞ্জে ২০টি সড়কে ২৩ দশমিক ৪৫৯ কিলোমিটার সড়কে ৪৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা মেরামত ব্যয় ধরা হয়েছে। এছাড়া বিয়ানীবাজারের ১০টি সড়কে ১১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার সড়কে ক্ষতির ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

স্মরণকালের আকস্মিক ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে সিলেটের লাখো মানুষ আপাতত মুক্তি পেলেও। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বয়ে যেতে হবে অনেক দিন। বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সিলেটের মানুষকে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।