ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, মোঃ মাইন উদ্দিন : শিকলে বাঁধা জীবন যদিও মানুষের কাম্য নয়, তবু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কেউ কেউ বাঁধা পড়ে শিকলে। আর এমনই একজন ফায়েজ উদ্দিন ওরুফে ফালু মিয়া নামের বৃদ্ধ, পাগল নয় তবুও সে শিকলে বাঁধা।
শিকলে বাঁধা ফালু মিয়া কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের ভূঞা বাড়ির দক্ষিণ পাশের খনহার বাড়ির আব্দুল হেকিমের পুত্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়া নেই এমন একটি ছোট টিনের ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে ফালু মিয়াকে। ফালু মিয়া এই প্রতিনিধিকে দেখেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। নাম জিজ্ঞেস করতেই নিজের নামসহ দুই পুত্র ও দুই মেয়ের নাম বলে এবং এক পুত্র বিদেশে আছেন বলেও জানান।
ফালু মিয়াকে পাগল আখ্যা দিয়ে বেঁধে রাখা হলেও তার কথায় ও অঙ্গ ভঙ্গিতে পাগলের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তিনি স্যার বলে সম্ভোধন করে বাঁচার আকুতি জানান এই প্রতিনিধির কাছে।
ফালু মিয়াকে বেঁধে রাখার কারণ জানতে চাইলে তার ছেলে মোহাম্মদ আলী বলেন, বাবা অনেকদিন যাবৎ পাগল। সে নগ্ন হয়ে স্থানীয় আনন্দ বাজারে ঘুরাফেরা করে এবং বাড়িতে মায়ের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে। এমনকি দা দিয়ে মাকে কোপাতেও যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিকিৎসা এখনও করানো হয়নি তবে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।
ফালু মিয়ার ছোট ভাই মোঃ ফরিদ মিয়া (৩৭) জানান তার ভাই পাগল নয়, তাকে তার স্ত্রী সন্তানরা পাগল আখ্যা দিয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছেন। শিকলে বেঁধে রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বড় ভাই ফালু মিয়া একজন বয়স্ক ভাতাভোগী। সে গত ৫/৬ দিন আগে বয়স্ক ভাতার ১৫০০ টাকা উত্তোলন করার পর ওই টাকা তার বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী নিয়ে যায়। পরে ঐ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দাবি করেন ফালু মিয়া। কিন্তু মোহাম্মদ আলী তার বাবাকে দেয় ২০০ টাকা। এ নিয়ে বাবা-পুত্র ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে তিনদিন না খেয়ে থেকে অপশেষে টাকা না পেয়ে দা দিয়ে স্ত্রীকে দৌড়ায়। এরপর স্ত্রী-পুত্র সহ আশপাশের আরো কয়েকজন মিলে তাকে স্থানীয় আনন্দ বাজার থেকে ডেকে বাড়িতে এনে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। বাঁধা অবস্থায় এখানে সে এখন বৃষ্টিতে ভেজে আর হাজার হাজার মশার কামড় খায়।
ফালু মিয়ার ৯০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা মা জুবায়দা খাতুন তার পুত্র পাগল না বলে কান্না জড়ানো কণ্ঠে জানান, তার ছেলে ফালু মিয়াকে তার স্ত্রী পুত্ররা খাবার দেয়নি। না খেয়ে থাকতে থাকতে অবশেষে স্ত্রীকে মারতে যায়। আর এই অপরাধে তাকে শিকলে দিয়ে বেঁধে রাখা হয়ে। শিকলে বাঁধা ফালু মিয়ার বৃদ্ধা মা ও ছোট ভাইসহ এলাকাবাসী ফালু মিয়ার শিকল মুক্ত জীবন চেয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কমনা করেছেন।
সোমবার ৪ জুলাই সকাল ১০ ঘটিকার দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফালু মিয়া শিকলে বাঁধা ছিল।