• আজ ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ কে মিথ্যা মামলা সহ হত্যার হুমকি

| নিউজ রুম এডিটর ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ২৪, ২০২৩ গণমাধ্যম

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদক, সন্ত্রাস, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্বে লেখালেখি করে, দুর্বৃত্তদের চক্ষুশূল হয়েছেন সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ।

শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা অসংখ্যবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন, অপহরণ হয়েছেন কয়েকবার। বলা যায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন বারবার। লেখালেখি থেকে বিরত রাখতে তার বিরুদ্বে বিভিন্ন মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায়ও ফাঁসানো হয়েছে। অবশেষে উপায়ান্তর না পেয়ে প্রাণ বাচাতে আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছেন সাংবাদিক এ কে আজাদ।

আমেরিকায় যেয়েও সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য প্রাননাশের হুমকির শিকার হচ্ছেন এই সাংবাদিক। সম্প্রতি বাহাদুর চৌধুরী নামক এক মাদক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত  সন্ত্রাসী ফেসবুকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আবুল কালাম আজাদকে হত্যার হুমকি দেন।

ভিডিওতে উক্ত বাহাদুর চৌধুরী নামক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ কে কেউ তার হাতে তুলে দিলে তাকে নগদ দুই লক্ষ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে, এই বলে তিনি দুটি টাকার বান্ডেল প্রদর্শন করেন।

গত ১৬/১১/২০২৩ইং ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে তার বিরুদ্ধে  নতুন আরও একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার নং – ৫৬৮/২৩। মামলাটির বাদী ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলাধীন, পক্ষিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন সর্দারের ছেলে ইমন হোসেন রোহান। মামলায় ধারা দেয়া হয়েছে যথাক্রমে :CSA- ২৩(২),২২(২),২৫(২),২৯/৩১(২)।

উক্ত মিথ্যা মামলার বিষয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গনমাধ্যমকর্মীগণ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন, তিনি বর্তমানে  সার্ক জার্নালিষ্ট ফোরাম বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,  এবং দুই মেয়াদে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক এর দায়ীত্বে ছিলেন। সর্বশেষ দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এর দায়ীত্বে ছিলেন। তিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

জানা যায়, সাংবাদিক আজাদ প্রথমবার অপহরণ হন ৩১ জানুয়ারি রাত ১১টায় গুলশান থেকে৷ সেদিন রাতে তার সাংবাদিক বন্ধুদের আয়োজনে জম্মদিন পালন শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকে অস্রের মুখে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চোখ বেধে নির্যাতন করা হয়, এবং অজ্ঞাত একটি পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে বুট জুতা দিয়ে মুড়িয়ে তার বাম পায়ের হাড় ভেঙে ফেলে। সন্ত্রাসীদের ভাষ্য ছিল একটাই যেন চিরতরে সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন তিনি। অন্যথায় তাকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে৷ সেদিন সারারাত নির্যাতন শেষে, ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে মুচলেকা নিয়ে ১লা ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ভোর ৬টায় তাকে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন ১০০ফিট মাদানি এভিনিউতে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা।

এ সময় পথচারীদের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় চলে যান৷ কারণ তখন হাসপাতালও তার জন্য নিরাপদ ছিলনা ৷

এ ঘটনার কিছুদিন পর ২০১৯ সালের ১৪মে (রমজান মাসে) বেলা ১২ ঘটিকায় রাজধানীর ২৪৪, উত্তর বাড্ডা (জিএম বাড়ি) সাতারকুল রোডস্থ নিজ বাসভবনের সামনে ঢাকার চিহ্নিত  সন্ত্রাসী ডিজে অনিক, জুয়েল ও মাহবুব সহ ৫/৬ জন অস্রধারী সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার শিকার হন সাংবাদিক আজাদ। সে সময় সন্ত্রাসীরা প্রথমেই ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ভেংগে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে যেন প্রমাণ না থাকে। তাকে উদ্ধার করতে ভবনের দায়ীত্বরত সিকিউরিটি গার্ড মিলন (৪৫) এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাকেও পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে।

এ সময় ভবনের বাসিন্দা অপর সাংবাদিক নাজমা সুলতানা নীলা সহ কয়েকজন মিলে রক্তাক্ত সাংবাদিক আজাদ ও সিকিউরিটি গার্ড মিলনকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক নাজমা সুলতানা নীলা জানান, অনিক এলাকার চিহ্নিত  সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ও অস্র ব্যবসায়ী। আজাদ তার অপকর্মের কিছু চিত্র ফেসবুকে তুলে ধরায়, আজাদকে এভাবে প্রকাশ্যে দিনেদুপুরে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা সময়মত এসে না পৌছালে হয়তো মেরেই ফেলতো সেদিন।

উক্ত ঘটনায় সেসময় সোস্যাল মিডিয়াসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল বিষয়টি। বাড্ডা থানায় উক্ত বিষয়ে মামলা করতে গেলে, থানার ততকালীন ওসি আব্দুল জলিল দিনব্যাপী কালক্ষেপন করে প্রভাবশালীদের চাপে সন্ধ্যায় মামলা নিতে অস্বীকার করে।
উক্ত বিষয়ে বাড্ডা থানায় যোগাযোগ করা হলে, থানা কর্তৃপক্ষ বক্তব্য দিতে অপারগতা জানায়।

ভোলা ২ আসনের এমপি আলী আজম মুকুল এর দুর্নীতির সংবাদ প্রচার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আজাদকে শায়েস্তা করতে, তার আশীর্বাদপুষ্ট চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন সর্দারকে মেসেঞ্জারে নির্দেশ প্রদান করে এমন একটি ভিডিও কিছুদিন আগে ভাইরাল হয়েছিল।

গত ৩১ মার্চ ২০২০ইং মঙ্গলবার  বেলা ১১টায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদরের রাজমনি সিনেমা হলের সামনে, চাউল চুরির নিউজ প্রকাশ করায়, সাংবাদিক সাগর চৌধুরীকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে উপজেলার মানিকা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম হায়দারের ছেলে নাবিল। উক্ত ঘটনায় সাংবাদিক আজাদ উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদ করায়, ভোলা ২ আসনের সাংসদ আলী আজম মুকুলের নির্দেশে আজাদকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকায় একটি বানোয়াট নিউজ লিড করা হয়। যা প্রকাশিত হবার পর সারাদেশের অসংখ্য সংবাদ মাধ্যম নিন্দা জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে এবং দেশের সাংবাদিকগণ প্রতিবাদ কর্মসূচি ও মানববন্ধন পালন করেন৷

দৈনিক আজকের আলোকিত সকাল পত্রিকায় সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর ভাতিজা ইউপি চেয়ারম্যান ইফতারুল হাসান স্বপন এর দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায়, সাংবাদিক আজাদকে না পেয়ে, পত্রিকার রিপোর্টার সাংবাদিক ফরিদুল ইসলাম ও দাউদ ইব্রাহীমকে গত ৪/৮/২০২১ ইং অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায় উক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইফতারুল হাসান স্বপন তার ভাই কামরুল হাসান মিলন ও নাজমুল হাসান বাচ্চু। দিনভর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে, সন্ধায় মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে ওই দুই সাংবাদিককে প্রায় দুই মাস জেল খাটায়।

সন্ত্রাসীদের ভয়ে নিজের প্রাণ বাচাতে, সাংবাদিক আজাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে অবশেষে আমেরিকায় পাড়ি জমান।।