• আজ ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না | শাহবাগীদের সতর্ক করে হাসনাত আবদুল্লাহ’র পোস্ট | হাবিবুল্লাহ বাহারের  উপাধ্যক্ষকে কুপিয়ে হত্যা, ফরিদপুর থেকে দম্পতি গ্রেফতার  | গণজাগরণের লাকির গ্রেপ্তারের দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি | হত্যাকান্ড ধামাচাঁপা দিতে ওসির ‘জজ মিয়া’ নাটক | নারী নিপীড়ন ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি | শেখ হাসিনা-রেহানা পরিবারের জমি-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ | মাগুরায় শিশু ধর্ষণ : গভীর রাতে শুনানি, ৪ আসামি রিমান্ডে | গাড়ি চাপায় পোশাক শ্রমিক নিহত বনানী – মহাখালী রাস্তা অবরোধ | আশুলিয়া ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি |

এসএসসি পাস করলেন নাটোরের চার নারী ইউপি সদস্য ।

| Evan Adil ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ | মে ১৩, ২০২৪ জাতীয়

 

জেলা প্রতিনিধি, নাটোর

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় (ভোকেশনাল শাখা থেকে) একসঙ্গে পাস করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের দুই নারী সদস্য। তারা সম্পর্কে দুই বোন। এছাড়া একসঙ্গে পাস করেছে ছোটবোনের এক ছেলে।

একই পরিবারের তিন বোনই এই ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য। এদের মধ্যে বড় বোন হালিমা বেগম (৪৮) ও মেঝ বোন মোছা. নাছিমা বেগম (৪০) স্থানীয় বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান সদস্য। তারা দুজনই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ওমর গাড়ি ফাজিল মাদরাসার পরীক্ষার্থী ছিলেন।

আর ইউপি সদস্য নাছিমার ছেলে মো. সোহানুর রহমান সোহান (১৬) নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এসএসসি ভোকেশনাল শাখা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। অর্থাৎ সোহান তার মা ও খালা একসঙ্গে এসএসসি পাস করলো। ফলাফলে বড় বোন হালিমা বেগম জিপিএ-৩ দশমিক ৮৯ এবং নাছিমা বেগম জিপিএ- ৩ দশমিক ৬৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এদিকে জেলার বাগাতিপাড়ায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া সাবেক-বর্তমান দুই নারী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য পাস করেছেন।

তারা বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের কারিগরি শাখা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শিলা খাতুন এবং একই ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্য শাহানাজ পারভীন।

তবে পরীক্ষার এ লড়াইয়ে পাস করতে পারেননি বাগাতিপাড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মুর্শিদা বেগম।

রোববার ফল প্রকাশের পর দু-বোন ও তাদের সন্তানের সাফল্যের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এতে উচ্ছ্বসিত হয়ে তারা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। তারা জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার কৃষ্ণপুর দিঘা ও মির্জাপুর দিঘা গ্রামের বাসিন্দা। বড় বোন হালিমা বেগম নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও মেঝ বোন নাছিমা বেগম একই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য।

মাধ্যমিক পাস করা নাছিমা বেগম উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে জানান, লেখাপড়া করার ইচ্ছে ছিল প্রবল। অর্থাভাবে বাবার বাড়িতে সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাদের দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় বোন হালিমা বেগম এবং নাছিমা বেগম সেসময় মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

নাছিমা বেগম জানান, সংসারে আমার দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সন্তানের অনুপ্রেরণায় আমরা দুই বোন একইসঙ্গে ওমর গাড়ি ফাজিল মাদরাসায় ভর্তি হয়েছিলাম। অনেকে অনেক কথা বলেছে তবুও হাল ছাড়িনি। সন্তানের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে গেছিন। আজ আমরা দুই বোন ও ছেলে একসঙ্গে মাধ্যমিক পাস করায় খুব খুশি।

ফলাফল জানার পর আশপাশের মানুষ আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। নাছিমা আরও বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লেখাপড়া জানাটা খুব প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়ার পর আরও বেশি লেখাপড়ার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছি। তাই এই বয়সে এসে লেখাপড়া করার সিদ্ধান্তটা নেই। জীবনে আরও বড় কিছু হওয়ার ইচ্ছে আছে। এজন্য লেখাপড়াটা জানা দরকার। তাই উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার ইচ্ছে আছে।

বড় বোন হালিমা বেগম জানান, এই বয়সে এসে লেখাপড়া করার কথা শুনে অনেকে হাসাহাসি করেছেন, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছেন। এতে তারা পিছপা হননি। বরং তারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। আজ পরীক্ষায় পাস করার পর তাদের খুব ভাল লাগছে। রেজাল্ট পেয়ে প্রথমে স্বপ্নে মতো মনে হয়েছিল। এখন দেখি বাস্তবেই মাধ্যমিক পাস করেছেন, এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। সুযোগ পেলে তিনিও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চান।

নাছিমা বেগমের ছোট ছেলে সোহান জানায়, নাটোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাসুদেবপুর থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অংশ নেয়। ফলাফলে জিপিএ-৩ দশমিক ৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে মায়ের চেয়ে তার রেজাল্ট এগিয়ে রয়েছে। সোহান বলেন, একসঙ্গে লেখাপড়া করতে গিয়ে মাকে তার বন্ধুর মতোই মনে হয়েছে। সুখ-দুঃখ একসঙ্গে ভাগ করে নিয়েই লেখাপড়া করেছেন তারা। সাফল্যও এসেছে একসঙ্গেই। মা-ছেলে এক সঙ্গে পাস করায় খুব ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে মাকে সঙ্গে নিয়ে লেখাপড়া করতে চান সোহান।

বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী জানান, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড এই স্লোগান সবাইকে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। কেন না একজন শিক্ষিত মা শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারে পরবর্তী প্রজন্মকে। তিনি আরও বলেন, আমার গর্ব হচ্ছে এই ভেবে যে, ৪০ বছর বয়সের বেশি সময়ে দুইজন ইউপি সদস্য নিজেদের শিক্ষিত হিসাবে গড়ে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। আগামীতে তারা এই ধারা অব্যাহত রাখুক প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি তাদের পড়ালেখা চালাতে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তিনি তা করবেন।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ওমর গাড়ি ফাজিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আজিজ উল আলম বলেন, লেখাপড়া করতে বয়স লাগে না, নাছিমা ও হালিমা তা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের মতো দেশের সবাই এগিয়ে এলে খুব সহজে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। মা-ছেলে ও দুই বোনের এই সাফল্য সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা। বয়স কোনো বিষয় না, চেষ্টা থাকলে মানুষ যে কোনো বয়সে সাফল্য অর্জন করতে পারে। আমি তাদের সফলতা কামনা করি।

উল্লেখ যে, গত ২০২২ সালে ৫ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একই পরিবার থেকে ৩ বোন ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে বড় বোন হালিমা বেগম নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও মেঝবোন নাছিমা বেগম একই ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য। ছোট বোন শাহনাজ পারভিন সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য। এছাড়াও নলডাঙ্গার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে তাদের মাও দুইবার সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ছিলেন।

এদিকে, বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, শিলা খাতুন ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজারভেশন ট্রেড থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ২৯ এবং শাহানাজ পারভীন একই ট্রেড থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ১১ পেয়ে এবারে এসএসসি পাস করেছেন। তারা সবাই বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনষ্টিটিউট কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।

ইউপি সদস্য শিলা খাতুন (৩৬) জানান, অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেয়ায় লেখাপড়ার করার আক্ষেপটা রয়ে যায়। ভোটে বিজয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় তিনি আবার লেখা পড়া শুরু করেন। অবশেষে এবার এসএসসি পাস করায় তিনি আনন্দিত। তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চান বলেও জানান।

অপর সাবেক ইউপি সদস্য শাহানাজ পারভীন (৩৯) জানান, অল্প বয়সে বিয়ে দেয় তার পরিবার। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকেই দীর্ঘসময় পর কারিগরি শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। এসএসসি পাস করায় তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সকলের দোয়া চান।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সামসুন্নাহার বলেন, বয়সের বাধাকে উপেক্ষা করে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দুই নারী জনপ্রতিনিধির পাস করায় তাদের অভিনন্দন। যিনি পাস করতে পারেননি, তিনিও যেন আগামী বছর পাস করতে পারেন তার জন্য শুভকামনা জানান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।