

হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা, যাতায়াতের রাস্তাসহ শতাধিক একর আবাদী জমি বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে চর শাকাহাতি কমিউনিটি ক্লিনিক, বৈদ্যুতিক খুটি, হাজার-হাজার একর ফসলি জমিসহ আরো বাড়িঘর। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা না গেলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে প্রাচীন এই জনপদটি। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প নেবার দাবী স্থানীয়দের।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রহ্মপূত্র নদ বেষ্টিত কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত চর শাকাহাতি গ্রাম। এই গ্রামগুলোর চারদিকে ঘিরে রয়েছে ব্রহ্মপূত্র নদ। দ্বীপ চরের মতো গত ৩৫ বছর ধরে এই গ্রামে লোকজন বসবাস করে আসছেন। চলতি বছরে তীব্র নদী ভাঙনের ফলে গ্রামটি মানচিত্র থেকে বিলিন হওয়ার পথে রয়েছে। এখানকার মানুষের বাড়িঘর, আবাদি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রহ্মপূত্র নদের করাল গ্রাসে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগ নিলেও তা আর কাজ করছে না।
চর শাকাহাতি গ্রামের রজব আলী (৫৪), জয়নুদ্দি (৬০), চান মোল্লা (৬৫) ও হারুন মিয়া (৩৫) জানান, ব্রহ্মপূত্র নদের ভাঙনে আমাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা কোন রকমে অন্য জায়গায় গিয়ে অবস্থান নিয়েছি।
এই গ্রামের হাসেম আলী (৬৫), সফিকুল (২৫) ও নুর মোহাম্মদ (৪০) জানান, যে কোন মূহুর্তে এই গ্রামের মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান ও ব্রাক অফিস নদী গর্ভে চলে যাবে। ভাঙনের তীব্রতার কারণে লোকজন বাড়িঘর সড়াচ্ছেন।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম জানান, ৩৫ বছর ধরে আমরা এই চরে বসবাস করে আসছি। নদী ভাঙনের ফলে মানুষজন খুব অসহায় হয়ে পরেছে। আমি বেশ কয়েকজনকে বসবাসের জন্য জমি দিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বসতভিটা হারিয়ে অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। কোথায় ঠাঁই নিবেন এই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে ৫০/৬০টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। তাদেরকে আমরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান দেয়া হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। এখানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সদাসয় সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক ভাঙন কবলিতদের উদ্ধার কাজে সহায়তাকালিন সময়ে জানান, ভাঙন কবলিত বাড়িঘর, গবাদিপশু ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সড়িয়ে নেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও কবলিত পরিবারগুলোকে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ফেলানো হলেও বর্তমানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল হাসান জানান, ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালাবে।