

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ জায়গা দেখানোর কথা বলে ফোন করে ডেকে নেয়। ঠিকানা মত যাওয়ার পর জোর করে রুমে ঢুকিয়ে নারীর সাথে আপত্তিকর ভিডিও ধারণের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ফোন করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করা হয়। এক পর্যায়ে দাবী করা চাঁদার টাকা না পেয়ে ধারণকৃত আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হয়। ভিডিও ধারণকালে সাথে থাকা দামী মোবাইল ও নগদ টাকা রেখে দেওয়া হয়। ৪০ উর্ধো বয়সী আমিন শেখের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার পর পরই মূহুর্তেই তা ভাইরাল হয়। একদিকে দলের বদনাম ঘোচাতে দায়ীত্বে থাকা পদ থেকে বহিস্কারের জন্য করা হয় সুপারিশ । অপর দিকে বিবাহিত মেয়ের সংসার যেন ভাঙার উপক্রম। একটা ফোন কলই যেন আমিন শেখের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। আত্নসম্মান হারিয়ে কোথাও যেন মুখ দেখানোর শক্তি নেই। নিরবে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চাওয়া আর মেয়ের সংসার না ভাঙার আকুতি। শুধু আমিন শেখই নয়। এমন একাধিক ব্যক্তিকে ব্ল্যাক মেইল করে অর্থ হাতানোর অভিযোগ উঠেছে একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। যাদের কাজই ছিলো, নারীদের দিয়ে ফোন করিয়ে নানা বাহানায় ডেকে নিয়ে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে চাঁদা দাবী করা। স্থানীয় আল আমিন নামে এক যুবকের নেতৃত্বে আরো বেশ কয়েক জন মিনি পতিতালয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছিলো এমন ঘৃন্যতম কর্মকান্ড। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত উপজেলা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শিকদার পেট্রোল পাম্পের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত সিন্ডিকেটটির মিনি পতিতালয়ের পতিতাসহ পরিবার ও সিন্ডিকেটের সদস্যদের থানা পুলিশের সহায়তায় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে উচ্ছেদ করেছে বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে যুবদল নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হলেপর দলীয় সৃঙ্খলা ভংগের অভিযোগ এনে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইয়াসিন সুমন, সদস্য সচিব মো. শাহাদাত শিকদার ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক আবেদনের মাধ্যমে যুবদল নেতা আমিন শেখের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা যুবদল বরাবর সুপারিশ করা হয়।
বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, উপজেলা মোড়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে ডেকে নিয়ে মেয়েদের দিয়ে ভিডিও বানিয়ে চাঁদা বাদী করতো তারা। আমরা বিষয়টি জানার পর পুলিশকে জানাই। পরে পুলিশসহ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সে বাড়ীতে গিয়ে তাদের এখান থেকে উৎখাত করি। যাতে আমিন শেখের মত আর কোন মানুষকে তাদের বলির পাঠা হতে না হয়। তারা যদি সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের কিছু বলে আপনারা শুধু আমাদের জানাবেন। আমরাই তাদের ব্যবস্থা নিবো!
স্থানীয়দের অনেকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে মেয়ে এনে দেহ ব্যবসা করাতো একটি সিন্ডিকেট। যারা একাজ করাতো তারা মূলত স্থানীয় বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীর ছত্রছায়ায় এগুলো করতো। তাই বিষয়টি সবাই জানলেও নেতাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারতো না। তাদের উচ্ছেদ করায় এলাকাটা পবিত্র হয়ে গেছে। এতোদিন অপবিত্র ছিলো।
ভুক্তভোগী সিরাজদিখান উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক আমিন শেখ কান্না জড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন, আমাকে ওই মেয়ে ফোন করে তাদের জায়গা সম্পত্তির ঝামেলা সমাধানের কথা বলে ডেকে নেয়। যেতেই তারা আমাকে রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলে। আমার সাথে ওই মেয়েকে দিয়ে ভিডিও করে। পরে আমার কাছ থেকে নগদ টাকা ও একটি মোবাইল রেখে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরে তারা আমার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবী করে বলে, তুই ৫ লাখ টাকা দিবি, তা না হলে তোর ভিডিও ছাইরা দিমু। আমি টাকা দিতে না পারায় তারা ভিডিও ছেড়ে দেয়। ভিডিওর কারণে আমার মেয়ের সংসারটা ভেঙে যাচ্ছে। আমি যদি বলি মানুষ বিশ্বাস করবে? যে আমি কোন অপকর্ম করি নাই। কেউ বিশ্বাস করবে না। শুধু আমি না, আমি ছাড়া ওরা বহু মানুষকে মেয়ে দিয়ে ডেকে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা পয়সা আদায় করেছে। আমি এর বিচার কার কাছে চাইবো আপনিই বলেন!
সিরাজদিখান উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ইয়াসিন সুমনকে বিষয়টি অবগত করতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। পরবর্তীতে তিনি ফোন ব্যাক না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ওসি শাহেদ আল মামুন বলেন, এমন একটি ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। যারা এ ধরনের কাজ করতো তাদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। কারো পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় নি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।