• আজ ২৫শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অসহায় সাংবাদিকতা!তথ্যবন্ধু তুহিন আপনার কল্যানে কি না করেছে! প্রতিদান কি খুন?

| নিউজ রুম এডিটর ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | আগস্ট ৯, ২০২৫ জাতীয়

 

মোঃ রোকনুজ্জামান শরীফ : হতবাক সাংবাদিকতা!নির্বাক সাংবাদিক সমাজ! সংবাদপত্রকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।আবার সাধারণত,”চতুর্থ এস্টেট”শব্দটি প্রেস এবং মিডিয়াকে বোঝায়।যা সরকার ও সমাজের অন্যান্য শাখাগুলির উপর নজরদারি এবং প্রভাব বিস্তারের ভূমিকার উপর জোর দেয়।

একজন সাংবাদিক সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।তারা সমাজের চোখ-কান হিসেবে কাজ করে,তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।সাংবাদিকরা সমাজের বিভিন্ন দিক যেমন- রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিকসহ বহুমূখী বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন।এছাড়াও সমাজের অন্যায়,উন্নয়ন,দুর্নীতি, সম্ভাবনা,সমস্যা তুলে ধরে এবং সে গুলোর সমাধানে ভূমিকা রাখে।আপনি হয়ত জানেন না,নয়তোবা মানেনও না।সেটি আপনার নিজস্ব বিষয়।আপনি এ সমাজেরই মানুষ।সমাজের নৈতিক অবক্ষয় যা কিছু হচ্ছে আমাদের কারনেই।নৈতিকতার অবক্ষয় খুঁজতে গিয়ে কারো পক্ষে যখন কোন রিপোর্ট হয় তখন সাংবাদিক ধন্যবাদও পায় না,যখন বিপক্ষে রিপোর্ট হয় তখন হলুদ সাংবাদিক বলে আওয়াজ করেন,কিন্তু কেন?যুগে যুগে সত্য কথা লিখতে গিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, হামলা,গুম,পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়েছে সাংবাদিকদের।জীবন দিতে হয়েছে সন্ত্রাসীদের হাতে।পুরোনো ধারাবাহিকতা চর্চায় সারাদেশে গনমাধ্যম কর্মীরা অনিরাপদ।

 

রাজনৈতিক ছায়াতলে অশুভ শক্তির উল্থান বৃদ্ধি পেয়ে অশান্ত করছে দেশকে।সেই অশুভ শক্তির হাতে অকালে প্রান হারাচ্ছে সাংবাদিকসহ হাজার হাজার মানুষ।সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার আজও নিরবে কাঁদছে।আর কত জনা পঙ্গুত্ব নিয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন তারই বা খবর কেউ রেখেছেন, রাষ্ট্র বা অন্য কেউ।বৃহষ্পতিবার ৭ আগস্ট-‘২৫ ঢাকার গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির লাইভ প্রচার শেষে অত্যন্ত লোমহর্ষক ও নির্মম ভাবে ৩৮ বছরের যুবক সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করা হয়।মৃত্যু নিশ্চিত করতে জবাই করে ফেলে রাখা হয়।এতিম হয়ে যায় তুহিনের দু’টি মাছুম বাচ্চা।বিধবা হন তার স্ত্রী।সন্তান হারা হন তুহিনের বৃদ্ধ পিতামাতা। নির্মমতার ধাপ কত নিচে গেলে দেশে সাংবাদিক সুরক্ষা পাবে,জানতে ইচ্ছে করে।

একজন সাংবাদিক দেশের প্রচলিত আইনের উর্দ্ধে নয়।যদি কোন সাংবাদিক,মিথ্যা,ভূয়া কিংবা মনগড়া তথ্য দিয়ে রিপোর্ট তৈরী করেন তার বিরুদ্ধে দেশের আদালতে মামলা করা যায়।অপরদিকে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা থাকলেও,কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করা যায়।যদি কোনো সাংবাদিক তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন,মিথ্যা বা মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করেন,অথবা প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট এবং এথিক্সের অন্যান্য নিয়মাবলী ভঙ্গ করেন,তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।তাহলে কেন এত নির্মমতা,কেন অসহায় সাংবাদিকতা?নিশ্চয়ই রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা এ জন্য দায়ী।এড়িয়ে যেতে পারে না রাষ্ট্রযন্ত্র।

গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা গণমাধ্যমকে জানান দিতে চাইছে ওদের হাত অনেক লম্বা।কিন্তু তার সহযোদ্ধা হাজারো তুহিন রয়ে গেছে।

একজন সাংবাদিকের তথ্য সরবরাহের কারনেই আপনি কোন না কোন কিছুর সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন,যেটা কোন দিন পেতেন না অথবা পেলেও দেরীতে পেতেন।তথ্যবন্ধু সমাজের জন্য যে কাজটি করেছেন তা তো আর ঢাকডোল পিটিয়ে জানান দেয়া হয় না।
একজন সাংবাদিক সমাজের জন্য যা করে—–
সাংবাদিকরা ঘটনার পেছনের ঘটনা তুলে ধরে,যা মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে অবগত থাকতে সাহায্য করে।
বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন-পরিবেশ দূষণ,দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি নানা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে।

ক্ষমতাবানদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।তারা সরকারের ভুল কাজের সমালোচনা করে এবং জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য সোচ্চার থাকে।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কাজ করে।তারা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রচার করে এবং সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়তা করে।

বিভিন্ন বিষয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।তাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মতামত তৈরি করতে পারে।

ভিন্নমত প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করে,যা একটি সুস্থ সমাজের জন্য অপরিহার্য।

সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ,যারা তথ্য সরবরাহ, সচেতনতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে,সমাজের উন্নতিতে অবদান রাখে ও জনমত গঠনে সাহায্য করে।এখন দেশের স্বার্থে কলমযোদ্ধা সমাজের সুরক্ষার আওয়াজ তোলা খুবই জরুরী।

লেখক
শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক
মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাব
মঠবাড়িয়া,পিরোজপুর
sharifsstyle@gmail.com