• আজ ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধামরাইয়ে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ৫ লাখ টাকায় মীমাংসা, মাতব্বরদের ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

| নিউজ রুম এডিটর ৪:১৫ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ২১, ২০২৫ সারাদেশ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার ধামরাইয়ে একজন স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশকে না জানিয়ে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ৫(পাঁচ) লাখ টাকা জরিমানা করে দুই লাখ টাকা ভুক্তভোগীর পরিবারকে দিয়ে বাকি ৩(তিন) লাখ টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সোমভাগ ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ধামরাই উপজেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য এইচ এম রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে।

তবে রুস্তম আলী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি সালিশ করেননি। সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে এই গ্রাম্য সালিশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে রুস্তম আলীর নিজ বাড়িতে বসে রুস্তম আলীসহ মনির হোসেন ও অন্যান্যদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর পরিবারকে জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন উপজেলার চর ডাউটিয়া গ্রামের অধিবাসী বিএনপি নেতা রুস্তম আলী।

জানা যায়, মঙ্গলবার (১৪অক্টোবর) সন্ধ্যায় চরডাউটিয়া গ্রামের প্রবাসী আমির আলীর বাড়ীতে সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সালিশি বৈঠকে সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে ৭সদস্যের একটি জুড়ি বোর্ডের মাধ্যমে ধর্ষণের চেষ্টাকারী সাবেক ইউপি মেম্বার মোহাম্মদ আতর আলী উরফে আতা মিয়াকে নগদ ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর এ সালিশি বৈঠকের নেতৃত্ব দেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ রুস্তম আলী, মাতাব্বর মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ও নেদু মিয়া।

৭ম শ্রেণী স্কুল ছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য হিসেবে অভিযুক্ত আতর আলীর কাছ থেকে আদায়কৃত জরিমানার পাঁচ লাখ টাকার দুই লাখ টাকা মেয়ের পরিবারকে দেওয়া হয়। বাকী টাকা রুস্তম আলীর কাছে রয়েছে বলে জানান এলাকার লোকজন। ওই সালিশি বৈঠকে জুড়ি বোর্ডের সদস্যরা হলেন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হালিম মাতাব্বর, মোহাম্মদ নেদু মিয়া, মোঃ আলমগীর হোসেন, মোঃ মানিক আলী, কালাচান মিয়া ও সিদ্দিক আলী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৯ অক্টোবর উক্ত গ্রামের প্রতিবন্ধী পিতার ৭ম শ্রেনীতে পড়ুয়া কন্যাকে ফুসলিয়ে একই গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে সাবেক ইউপি মেম্বার আতর আলী ওরফে আতা মিয়া তার ফাকা বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর একটি ঘরের ভেতর নিয়ে দরজা-জানালা আটকিয়ে ওই স্কুল ছাত্রীকে জবরদস্তি ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে আশ-পাশের লোকজন এসে ঘড়ের দরজা খুলে ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টাকারি সাবেক ওই ইউপি মেম্বার আতা মিয়াকে উত্তম-মধ্যম দেয়। এরপর ওই স্কুল ছাত্রীর মা ময়না বেগম বাদী হয়ে গত ১৩ই অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের চেষ্টাকারী আতা মিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে।

কিন্তু থানা পুলিশ তদন্তে যাওয়ার পরো পুলিশকে অবহিত না করেই রুস্তম আলী শালিশী বৈঠকের মাধ্যমে ঘটনাটি মীমাংসা করে ফেলেন।

সোমবার সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে শালিসী বৈঠকের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মালেক সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে মীমাংসা ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের কথা স্বীকার করেন।

বিএনপি নেতা রোস্তম আলী বলেন, মেয়েটির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মামলা না করে গ্রাম্য শালীসি বৈঠকে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়। শালীসের দুই দিন পরে সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মালেকের বড় ছেলে মো.মনির হোসেনের উপস্থিতিতে বাদী ময়না বেগমের কাছে জরিমানার ৫ লাখ টাকা তুলে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বাদি তথা ভুক্তভোগী পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা।

গতকাল মঙ্গলবার ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এস এম নায়েবুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তেও গিয়েছিলাম। মীমাংসার ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এমন ঘটনা গ্রাম্য শালীসি বৈঠকে মীমাংসা যোগ্য নয়।