

কবি মোঃ মোবারক হোসাইন, জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: আকাশে তখন ঘোর রক্তবর্ণ সূর্য, মাটিতে চলছে মহামারির মত ধ্বংসযজ্ঞ। একদিকে ফিলিস্তিনের গাঢ় মাটিতে নিরপরাধ শিশু, নারী, বৃদ্ধের রক্তের হোলি—অপরদিকে সোনাইমুড়ীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দানা বাঁধছে এক প্রতিবাদী অগ্নিশিখা। সোনাইমুড়ী তা’মিরুল উম্মাহ মাদরাসা আজ এক অবিস্মরণীয় দিনের সাক্ষী হয়ে উঠল। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কণ্ঠে ফিলিস্তিনের জন্য এক প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে বের হয়ে আসে, আল আকসা মসজিদের সম্মান রক্ষায় এবং ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে জেগে ওঠে সোনাইমুড়ী।
সোমবার (৭ এপ্রিল), সকাল ১১টায় সোনাইমুড়ী তা’মিরুল উম্মাহ মাদরাসার বালিকা শাখা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল সোনাইমুড়ী শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে পুরো বাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি এক সময় সোনাইমুড়ী সরকারি কলেজ গেটের কাছে এসে জড়ো হয়। এরপর সোনাইমুড়ী হামিদিয়া কামিল মাদরাসার প্রাঙ্গণ হয়ে পুরো শহরের প্রতিবাদী সমাবেশে রূপ নেয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের হাতের স্লোগানে দমে না গিয়ে ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষদের জন্য সঠিক বিচার এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টার কোনও কমতি রাখেনি। “ফ্রি প্যালেস্টাইন”, “গণহত্যা বন্ধ করো!”, “আল আকসা আমাদের গর্ব”, “ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করো!”—এই স্লোগানগুলোর আওয়াজে পুরো শহর কেঁপে ওঠে।
প্রধান অতিথি, সোনাইমুড়ী তা’মিরুল উম্মাহ মাদরাসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাওলানা ইব্রাহিম খলিল, বলেন—”আল আকসা আমাদের ঈমানের প্রথম কিবলা, আমাদের সম্মানের স্থান। যেখানে আজ চলছে বর্বর হামলা, সেখানেই শান্তি ও মানবতার জয়গান হোক—আমরা তার জন্য একত্রিত হয়েছি।”
বালক ক্যাম্পাসের সুপার মাওলানা মহি উদ্দিন রাশেদ বলেন—”ফিলিস্তিনের শান্তি ও নিরাপত্তা আমাদের হৃদয়ের দান। তাদের রক্ত কখনোই বৃথা যাবে না, যদি আমরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করি।” বালিকা ক্যাম্পাসের সুপার মাওলানা আলা উদ্দিন, বলেন— “এ গণহত্যা এবং ফিলিস্তিনের উপর এই আক্রমণ আমাদের নিজেদের অনুভব করতে হবে। আল আকসা এবং ফিলিস্তিনের জন্য আমাদের দরজা, হাত সবই খুলে দিতে হবে।”
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন মাদরাসার অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। তারা বলেন, “এখনকার সময় নিরব থাকার নয়। নিরীহ শিশুদের মাটিতে রক্তের দাগ ছড়িয়ে যাচ্ছে, আমরা যদি এখন কিছু না করি, তবে আমাদের বিবেক বাঁচবে না।” মিছিল শেষে এক শান্তিপূর্ণ প্রার্থনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থনায় অংশগ্রহণকারীরা দোয়া করেন, “ফিলিস্তিনে শান্তি ফিরে আসুক, আল আকসা মুক্ত হোক, এবং শহীদদের আত্মা শান্তিতে থাকুক।”
বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন সোনাইমুড়ী এলাকার বহু সাধারণ মানুষ, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ, এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা একযোগে “ফ্রি প্যালেস্টাইন” এবং “আল আকসা মুক্তি পাক” স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছিলেন।
এই প্রতিবাদী মিছিল এবং সমাবেশ ছিল কেবল একটি প্রতিবাদ নয়—এটি ছিল মুসলিম বিশ্বের এক চেতনার জাগরণ। এটি ছিল ফিলিস্তিনের রক্তাক্ত মাটিতে নিরপরাধ মানুষের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা ও একাত্মতার নিদর্শন।
একবারেই মনে হতে পারে, এ ধরনের প্রতিবাদ হয়তো সরাসরি যুদ্ধ থামাতে সক্ষম নয়, কিন্তু আমরা জানি—একটি জাগ্রত সমাজ সবকিছু বদলে দিতে পারে। ফিলিস্তিনের গণহত্যা থামানোর জন্য আমাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।