• আজ ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না | শাহবাগীদের সতর্ক করে হাসনাত আবদুল্লাহ’র পোস্ট | হাবিবুল্লাহ বাহারের  উপাধ্যক্ষকে কুপিয়ে হত্যা, ফরিদপুর থেকে দম্পতি গ্রেফতার  | গণজাগরণের লাকির গ্রেপ্তারের দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি | হত্যাকান্ড ধামাচাঁপা দিতে ওসির ‘জজ মিয়া’ নাটক | নারী নিপীড়ন ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি | শেখ হাসিনা-রেহানা পরিবারের জমি-ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ | মাগুরায় শিশু ধর্ষণ : গভীর রাতে শুনানি, ৪ আসামি রিমান্ডে | গাড়ি চাপায় পোশাক শ্রমিক নিহত বনানী – মহাখালী রাস্তা অবরোধ | আশুলিয়া ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি |

ফাঁসি বেদনাদায়ক, ১০ বার চিন্তা করি: প্রধান বিচারপতি

| নিউজ রুম এডিটর ১১:০৫ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ১০, ২০২১ আইন ও আদালত, বাংলাদেশ

ফাঁসি বেদনাদায়ক, ১০ বার চিন্তা করি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘ফাঁসি দেওয়াটা সাংঘাতিক পেইনফুল (বেদনাদায়ক) আমাদের জন্য। সুতরাং কাউকে ফাঁসি দেওয়ার (সিদ্ধান্ত) আগে আমরা ১০ বার চিন্তা করি।’

চুয়াডাঙ্গার একটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঝড়ু ও মকিম নামের দুই আসামির করা নিয়মিত আপিল নিষ্পত্তির আগে প্রধান বিচারপতি আজ বুধবার এসব কথা বলেন। পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ দুই আসামির করা নিয়মিত আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে খারিজ করে দিয়েছেন।

এই দুই আসামির নিয়মিত আপিল ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। নিয়মিত আপিল নিষ্পত্তির আগে তাঁদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বলে সেদিন দাবি করেন তাঁদের আইনজীবী। এ নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থেকে তাঁদের করা জেল আপিল ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুরের পর ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর ফাঁসি কার্যকর হয়। ঝড়ু ও মকিমের করা নিয়মিত আপিলের শুনানি শেষে আজ সিদ্ধান্ত দেন সর্বোচ্চ আদালত। তাঁদের আপিলটি আজ আদালতের কার্যতালিকায় ৩ নম্বর ক্রমিকে ছিল।

৩ নম্বরের সঙ্গে কার্যতালিকায় থাকা ৭ নম্বর ক্রমিকের মামলাটি একসঙ্গে শুনানি করতে চান জানিয়ে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ৭ নম্বর আইটেমে সুজন নামে একজনের নিয়মিত আপিল আছে। তাঁর একটি জেল পিটিশন ছিল (৮/২০১৩)। সেই পিটিশনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ তাঁকে ইতিমধ্যে খালাস দিয়েছেন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এই মামলায় (সুজনের) তিন আসামির মধ্যে দুজনের নিয়মিত আপিল ছিল। আর সুজনের জেল পিটিশন ছিল। নিয়মিত আপিল যাঁরা করেছেন, তাঁদের ফাঁসি হয়েছে। আর জেল পিটিশনের শুনানি নিয়ে আমরা ওকে (সুজন) খালাস দিয়েছি।

অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সেদিন দেখলাম, অনেকে বললেন ন্যায়বিচার হয়নি। আপিল নিষ্পত্তির আগে ফাঁসি হয়ে গেছে। তাহলে এখন ওই লোকটিকে (সুজন) যিনি, খালাস পেয়েছেন তাহলে কি তাঁকে ফেরত এনে আবার আপিল শুনানি করবেন?

ব্লেইম আসে, কোর্টের জন্য বিব্রতকর
শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এই কোর্টের ওপর এমন একটা ব্লেইম আসে, যা আমাদের জন্য বিরাট বিব্রতকর। আমরা ফাঁসি দেওয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেওয়াটা সাংঘাতিক পেইনফুল আমাদের জন্য। সুতরাং হ্যাংগিং দেওয়ার আগে আমরা ১০ বার চিন্তা করি।’

বিচারপ্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনো ডিজিটাল সিস্টেম হয় নাই। ডিজিটাল করতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ডিজিটাল হলে সাথে সাথে ডিটেক্ট (শনাক্ত) হয়ে যাবে। এটা বড় সমস্যা। ডিজিটাল না হলে ডিটেক্ট করা সম্ভব না। কারণ, এখন আর কেউ কনভার্সনের (জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল এক হওয়া) দরখাস্ত দেন না। দেখেন সুজনের নিয়মিত আপিল রয়ে গেছে। অথচ জেল আপিলে তাঁর খালাস হয়ে গেছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১০২টি ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০০৯ সালের যেসব ফাঁসির মামলা বিচারাধীন ছিল, সেগুলো আমার আমলে শেষ হয়েছে।…২০১৩ সালের আপিল কেন কোর্টে মেনশন হলো না? ২০১৩ সাল থেকে আপিল পড়ে থাকল, আবেদন দিয়ে বলেনি আপিল পড়ে আছে, তাড়াতাড়ি শুনানি করা দরকার। আমি এসে সেকশনে নির্দেশ দিয়ে বলেছি, সব ফাঁসির মামলা পৃথক করতে। বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে আমি এটা করেছি। যাতে এসব মানুষের কষ্ট কম হয়।’

শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, গরিব মানুষের মামলা এসে ধরাধরি না করলে আইনজীবী কোনো আবেদন দেন না। এমনকি মামলা পড়ে আছে, এটিও আদালতে নোটিশ করেন না।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোর্টের ওপর কোনো ব্লেইম দিইনি। হয়তো কোর্টে কিছু প্রভাব পড়ে গেছে। আমরা ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত কোর্টকে ব্লেইম করিনি। আমাদের আইনজীবীদেরও হয়তো ভুল হতে পারে, আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। সেকশনের আরও সমন্বয় করা উচিত। পাশাপাশি কারা কর্তৃপক্ষের জন্য একটা গাইড লাইন দিলে ভালো হয়।

সব আদালতে মামলা বাড়লেও আপিল বিভাগে কমেছে
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সেকশনে যায় না। আমি তো সেকশনে সেকশনে গিয়েছি। ভার্চ্যুয়াল কোর্ট হওয়াতে একটা সুবিধা হয়েছে। আপিল বিভাগে মামলা ছিল ২৩ হাজার। আর ভার্চ্যুয়াল আদালতে শুনানি হয়ে মামলা কমে এখন আছে সাড়ে ১৫ হাজার। এই অতিমারির সময়ে দেশের সব আদালতে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। আপিল বিভাগে মামলা কমেছে।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, যখন ফৌজদারি আপিল দায়ের করে, তখন বলে দেওয়া উচিত ছিল যে ইতিমধ্যে একটি জেল আপিল ফাইল করা হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, সেদিন পর্যন্ত জানতাম না আদৌ জেল আপিল (ঝড়ু ও মকিম) আছে। এমন ঘটনা হয়েছে যে ফাঁসি হয়ে গেছে, তা–ও আইনজীবীকে জানায়নি। আপিল অকার্যকর হয়ে গেছে। তবে জনগণের স্বার্থে একটি গাইড লাইন দেন।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আজকে সব কম্পিউটারাইজড হয়ে গেলে এই সমস্যা হতো না। এটা আপনারা আইনজীবীরা হতে দেবেন না। কারণ, আপনারা আপনাদের পছন্দমতো কোর্টে গিয়ে মামলা করতে চান।

ডিসেম্বর থেকে ফিজিক্যাল কোর্ট
ডিসেম্বর থেকে সশরীর কোর্ট খুলে দেওয়ার কথা জানিয়ে একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ভার্চ্যুয়াল কোর্টে দ্বিগুণ কাজ হয়। ধরেন, হঠাৎ অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রয়োজন হলো, তখন তিনি অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে, তাঁর আসতে আসতে ১৫ মিনিট সময় নষ্ট। ভার্চ্যুয়ালে হলে অ্যাটর্নি জেনারেল একই চেয়ারে বসে থাকেন, জাস্ট অন করে দেন। আপিল বিভাগের সব আইনজীবী বয়স্ক, প্রায় ৭০ বছরের ওপরে (যাঁরা খুব নামকরা)। তাঁরা বাসায় থেকে করছেন, কোনো সময় নেন না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলার যেই জ্যামজট, এটা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট। জজ সাহেবরা যদি বাসা থেকে কাজ করে, তাহলে দ্বিগুণ কাজ হবে।

কোর্ট হচ্ছে সেবা, ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকা উচিত
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘কোর্ট হচ্ছে সার্ভিস, মেডিকেল সেবার মতো সার্ভিস। সুতরাং আমার মনে হয় ২৪ ঘণ্টা কোর্ট খোলা থাকা উচিত। এটা তো সার্ভিস। অনেক দেশে আছে।’

শুনানি শেষে ঝড়ু ও মকিমের নিয়মিত আপিল অকার্যকর বলে খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে ৭ নম্বর ক্রমিকে থাকা সুজনের আপিলও অকার্যকর বলে খারিজ করা হয়।