• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিশন শেষে ওপারে চলে গেছে খুনিরা

| নিউজ রুম এডিটর ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ | নভেম্বর ২৪, ২০২১ সারাদেশ

কুমিল্লায় কাউন্সিলর সৈয়দ মোঃ সোহেল হত্যার মিশন সম্পন্ন করেই ওপারে চলে গেছে খুনিরা। কারণ সীমান্তের ওপারে রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, ঘটনার সময় ঘাতকদের প্রত্যেকের হাতে ছিল পিস্তল। শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। এরপর তিনজন কাউন্সিলরকে লক্ষ্য করে ৯ রাউন্ড গুলি করে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।

পরে খুনিরা মোটরসাইকেলে সোজা ভারত সীমান্তের দিকে চলে যায়। এদিকে হত্যা মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর সংরাইশ বড়পুকুর পাড় থেকে দুটি এলজি, একটি পাইপগান, ১২টি গুলি, বোমাভর্তি ব্যাগ, কালো মুখোশ এবং কালো কাপড় উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে উভয়ের পরিবার।

ঘটনার পর থেকে নগরীর ১৭নং ওয়ার্ড এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার কাউন্সিলরের সমর্থকরা। মঙ্গলবার তারা হত্যায় জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহে প্রায় ৩০-৪০টি বাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেন। নগরীর সুজানগর এলাকায় ভাঙচুরের সময় ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান শাহীনুর ইসলাম নামে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক কর্মচারী।

জানা যায়, নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের পাথুরীয়াপাড়া এবং ১৬নং ওয়ার্ডের সুজানগর ও নবগ্রামের অবস্থান পাশাপাশি। আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুটি এলাকার প্রভাবশালীদের মাঝে বিরোধ চলে আসছিল। এর জেরে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। স্থানীয়রা জানান, সৈয়দ মো. সোহেল ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর গত সাড়ে ৯ বছর ধরে এলাকায় মাদক ও চোরাকারবারিসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ কারণেই তিনি সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হন।

কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাউন্সিলর সোহেলের ব্যক্তিগত সহকারী মাজেদুল হক বাদল বলেন, মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলম কাউন্সিলর সোহেলের মাথা ও বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শাহ আলমের সহযোগী ছাব্বির এলাকায় ডাকাতি করতে গেলে জনতা বাধা দেয়।

এ সময় শাহ আলম গুলি চালিয়ে ছাব্বিরকে ছাড়িয়ে নেয়। এ ঘটনা পুলিশকে অবহিত করেছিলেন কাউন্সিলর সোহেল। এ নিয়ে শাহ আলম গ্রুপ কাউন্সিলরের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে নগরীর পাথুরীয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজ নামের যে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহাকে গুলি করা হয় ওই অফিসের সামনে রয়েছে ৩টি সিসি ক্যামেরা। পুলিশ এসব সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ফুটেজ থেকে ঘাতকদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শাহ আলমকে গ্রেফতার করতে পারলে ঘটনার পুরো রহস্য বের হবে। তাই তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

জানা যায়, কাউন্সিলর সোহেল খুন হওয়ার পর এলাকায় অন্তত ৩০-৪০টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় ভয়ে শাহিনুর ইসলাম (৫৭) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মচারী। তার (শাহিনুর) ছেলে সানজিদ বলেন, ‘হামলাকারীরা সোমবার রাত ৯টা থেকে কয়েক দফায় আমাদের বাসায় হামলা চালায়। এতে ভয়ে আমার বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন। ময়নামতি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর বাবার মৃত্যু হয়।’

মঙ্গলবার বাদ জোহর পাথুরীয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠে কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, যুগ্ম সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাই বাবলু, মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম জুয়েল, মহানগর কৃষক লীগের আহ্বায়ক খোরশেদ আলমসহ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। এদিন স্থানীয় শ্মশানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সদস্য হরিপদ সাহার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনোয়ারুল আজিম বলেন, এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সাঁজোয়া যানসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অপরাধী শনাক্ত করতে আমরা আশপাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। শিগগিরই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম-পরিচয় আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ ছাড়া সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারে নানামুখী তৎপরতা চলছে।