আব্দুল্লাহ আল হাসিব, বরিশাল:ডিজেল চালিত গাড়ির ভাড়া বেড়ে যাওয়ার সুযোগে বরিশাল নগরীতে তিন চাকার যাত্রীবাহী যানেও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন সিএনজি, গ্যাসচালিত অটো এবং সাধারণ রিকশা চালকরা। আর এর ফলে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। যদিও জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। তবে সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে তিন চাকাবিশিষ্ট প্রায় সব ধরনের যানবাহন থেকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন রুটে তিন চাকার যানের ভাড়া বেড়েছে ৫০ শতাংশ হারে। সিএনজি গ্যাসচালিত অটোরিকশায় ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। পাশাপাশি পায়ে চালিত রিকশার ভাড়া বেড়েছে আরও বেশি। ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে।
যাত্রীরা জানান, নগরীর ব্যস্ততম এলাকা রুপাতলী এবং নথুল্লাবাদ পর্যন্ত নিএনজি ও গ্যাসচালিত অটোরিকশার পূর্বের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। বর্তমানে সেখানে ২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। হাতেম আলি কলেজ চৌমাথা থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত পূর্বের ভাড়া ১০ টাকার স্থলে ১৫ টাকা, লঞ্চঘাট থেকে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৫ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে ২০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে হাতেম আলি কলেজ চৌমাথা পর্যন্ত আগের ভাড়া ছিল ১০ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা, আর রুপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত ১০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছেন চালকরা। এভাবে প্রায় প্রতিটি সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে চালকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে। এছাড়া এসব রুটের যাত্রীরা যেখানেই নামুক না কেন তাদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০ টাকা করে আদায় করছেন চালকরা।
যাত্রীরা অভিযোগ করে আরও বলেন, আমাদের তো বেতন বা আয় বাড়েনি। আমরা সাধারণ মানুষই এ যাত্রাতে বলি হলাম। কারণ আমাদেরই গন্তব্যে যেতে হবে এবং বাড়তি ভাড়াও দিতে হবে, নয়তো যেটুকু উপার্জন করছি সেটুকু হারাতে হবে।
এদিকে পায়ে এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার ভাড়া বেড়েছে সীমাহীন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে এসব রিকশা চালকরা আদায় করছেন ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া। আর এ ক্ষেত্রে নিরুপায় যাত্রীদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে।
তবে অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রা চালকদের কাছে ভাড়া বেশি আদায়ের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে নানা কারন দেখাচ্ছেন তারা।
সিএনজি এবং গ্যাসচালিত অটোরিকশার চালকরা জানান, নগরী এলাকার একজন চালককে প্রতিদিন মালিককে ৯০০ এবং ৫০০ টাকা করে দিতে হয়। আর দৈনিক গ্যাস প্রয়োজন হয় ৩০০ টাকার এবং ২০০ টাকার। কিন্তু গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। তাই বাড়তি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
ব্যাটারি এবং পায়েচালিত রিকশা চালকরা জানান, বাজারে সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া মালিকরাও তাদের দৈনিক আদায়কৃত অর্থ বাড়ানোর বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। তাই যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
এদিকে ভাড়ার এমন অসাঞ্জস্যতা নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে যাত্রী-চালকদের মাঝে। দাবিকৃত অর্থ না দিলে শিকার হতে হচ্ছে নাজেহালের। সম্প্রতি অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার প্রতিবাদ কারায় নগরীর শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের সামনে সৈয়দ আক্তার হোসেন বাদল নামে এক যাত্রীর মুখমণ্ডল ফাটিয়ে দেয় অটো চালক। আহত যাত্রীকে পরে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নগরীর গনপরিনহনের এমন অব্যবস্থাপনা রোধে সংশ্লিষ্টদের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন বরিশালবাসী।