ঘোড়ার আগে গাড়ি চালিয়েছেন বিচারক। অর্থপাচার মামলায় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জামিন দিলেও বিচারক সবশেষ মেডিকেল রিপোর্ট দেখার প্রয়োজনই মনে করেননি।
হাইকোর্টে জামিন বাতিলের শুনানিতে উঠে আসে এমন বিষয়। বিচারককে সতর্ক করে সম্রাটের জামিন বাতিল করে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (১৮ মে) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিকে, মেডিকেল রিপোর্ট না দেখেই গত ১১মে সম্রাটকে জামিন দেন ঢাকার বিশেষ জজ ৬। ওইদিন বিকেলেই হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান সম্রাট। জামিন আটকাতে মরিয়া হয়ে দুদক যায় হাইকোর্টে।
আজ বুধবার শুনানিতে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আইন মেনে জামিন দেননি বিচারিক আদালত। সবশেষ মেডিকেল রিপোর্ট না দেখেই দেওয়া হয়েছে জামিন। এক্ষেত্রে বিচারিক মানসিকতার প্রয়োগ হয়নি।
হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে আরও জানান, ২০২০/২১ সালের মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে জামিন দেওয়া উচিত হয়নি নিম্ন আদালতের। ৯ জুনের মেডিকেল রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল বিচারকের। ফলে উভয়পক্ষের যুক্তি পাল্টা যুক্তির পর সম্রাটের জামিন বাতিল করা হয়। তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ১১ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা দুদকের মামলায় সম্রাটকে জামিন দেন।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার (১৭ মে) সম্রাটের জামিন স্থগিত ও বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদনের ওপর শুনানি হয়। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ শুনানি শেষে আজ আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করা হয়।
এর আগে গত সোমবার (১৬ মে) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান হাইকোর্টের এ বেঞ্চে জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করেন।
গত ১১ মে পাসপোর্ট জমা রাখা, অসুস্থতা বিবেচনা, আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশে না যাওয়ার শর্ত এবং প্রতিটি ধার্য তারিখে হাজিরার তিন শর্তে দুর্নীতির মামলায় জামিন পান ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ৩২ মাস কারাগারে থাকার পর ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় কারামুক্ত হন তিনি।
গ্রেফতারের পর কিছুদিন জেলে থাকলেও অসুস্থতার কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সম্রাট। জামিনে মুক্তির আদেশও আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে।
তার মুক্তির খবরে হাসপাতালে ভিড় করেন তার সমর্থকরা। সম্রাটের সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, মুক্তি পেলেও আরও ৫ থেকে ৭ দিন হাসপাতালেই থাকবেন সম্রাট।
শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় এর আগেই অস্ত্র, মাদক এবং অর্থপাচার মামলায় জামিন পান সম্রাট। মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুদকের এক মামলা। ওই মামলাতেও একবার জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। আবারও করা হয় জামিন আবেদন।
ক্যাসিনোবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হন সম্রাট। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচারসহ ৪টি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এর মধ্যে দুদকের মামলায় ২১৯ কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে সম্রাটের বিরুদ্ধে।