খায়রুল খন্দকার টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সরকার নির্ধারিত ও প্রস্তাবিত ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ জেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা মধুপুরে স্থানান্তরের প্রতিবাদে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জনগণ মানববন্ধন কর্মসূচী করেন।।
রোববার (২২ মে) সকাল ১১টায় উপজেলার পৌরসভার কলেজ মোড়ের বিজয় একাত্তুর চত্বরে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হামিদপুর থেকে পাকুটিয়া পর্যন্ত ১৫ কি.মি. সড়কে জুড়ে সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে উপজেলার শাহপুর মোড়, পাকুটিয়া, পোড়াবাড়ি, ব্রাহ্মণশাশন, কদমতলি, হামিদপুর এলাকাতে একযোগে এলাকার নারী-পুরষ ছাড়াও স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা, সাধারণ শ্রমিকরা, বিভিন্ন ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান গণ এ প্রতিবাদে একাত্মতা ঘোষণা করে মানববন্ধনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয়। একপর্যায়ে এটি সার্বজনীন রুপ ধারণ করে বিশাল জনস্রোতে রুপান্তরিত হয়। সার্বজনীনভাবে সকল শ্রেণীপেশার মানুষজন তাদের প্রাণের দাবীতে এসময় শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে পুরো এলাকা।
এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি পরিস্থিতি ও যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখে।
এর আগে গত বুধবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ‘শেখ কামাল আইটি পার্ক রক্ষা কমিটি’। সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের হস্তক্ষেপে আইটি পার্কটি মধুপুরে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ জুন ঘাটাইল উপজেলার গৌরিশ্বর এলাকায় ১২.৭৭ একর জমিতে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের জন্য ভূমি মন্ত্রনালয় জমির লিজ হিসেবে এক লাখ এক হাজার টাকা প্রতীকী মূল্য নির্ধারণ করে। পরে ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর জমির নির্ধারিত প্রতীকী মূল্য পরিশোধ করা হয়।এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক ওই জমিটি হস্তান্তর করেন। লিজ দলিল হস্তান্তর সম্পাদন প্রক্রিয়ায় গ্রহীতা হিসাবে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে দলিলে স্বাক্ষর করেন।
ঘাটাইলের জনগন মনে করেন এই উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানটি মুজিব বর্ষে তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি উপহার।
পুর্বে জেলা প্রশাসন সম্ভাবতা যাচাই-বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের জন্য ঘাটাইলের ওই স্থানটি নির্ধারণ করে সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করে। কিন্তু এর কিছু দিন পরে সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে- ঐ সময় ঘাটাইল থেকে মধুপুরে স্থানান্তরের বিষয়টি অবগত করেন।
এদিকে আইটি সেন্টারটি অন্য উপজেলায় নেওয়ার চেষ্টা করা হলে তখন এডভোকেট ড. শহিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ঘাটাইলবাসী এর প্রতিবাদে মিছিল, মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর করে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। পরবর্তিতে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে টাঙ্গাইলের একাধিক উপজেলার বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন। একই সাথে ঘাটাইল উপজেলার বর্তমান বরাদ্দকৃত জমিটি পরিদর্শন পরবর্তিতে যথোপোযুক্ত বলে নির্ধারণ করেন। যার ধারাবাহিকতায় জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
সম্প্রতি একনেক সভায় প্রস্তাবিত আইটি সেন্টারটি ঘাটাইল থেকে মধুপুরে স্থানান্তর করা হয় বলে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে ঘাটাইলবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং সাধারণ মানুষজন ফুঁসে উঠে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠে। ফেসবুকে অনেকেই স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান এবং সরব প্রতীবাদ জানানোর জন্য আহব্বান জানান। এরই প্রেক্ষিতে আজকের এই মানববন্ধন।
এদিকে জানা যায়, মধুপুরে ইতোমধ্যে ‘ইকো পার্ক’ নির্মাণ নিয়ে আদিবাসীদের সাথে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সেখানে আরও একটি আইটি সেন্টার স্থাপন করতে গেলে সেখানে আরও বড় জটিলতা এমনকি সহিংসতার ঘটনাও ঘটতে পারে বলে অনেকে ধারনা করছেন।
ঘাটাইলবাসীর পক্ষ থেকে ‘শেখ কামাল আইটি পার্ক রক্ষা কমিটি’র সদস্য সচিব জনাব আতিকুর রহমান বলেন, আমরা অতি দ্রুত পুনরায় ঘাটাইলেই আইটি পার্কটি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। মধুপুরে আলাদাভাবে আইটি সেন্টার স্থাপন করুন- এতে ঘাটাইলবাসীর কোন বাঁধা বা সমস্যা নেই। কিন্তু ঘাটাইলে নির্ধারিত আইটি সেন্টারটি ঘাটাইলেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি ঘাটাইলবাসীর প্রানের দাবী।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ঘাটাইল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল আলম মনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিয়ুর রহমান খান, সাবেক অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান মিয়া, প্রভাষক বজলুল কাদির রতন, ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকার, প্রেস ক্লাব সভাপতি খান ফজলুর রহমান, সাবেক ভিপি আবু সাইদ রুবেল প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচির শেষাংশে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ কামাল আইটি পার্ক রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক জুলফিকার হায়দার পরবর্তিতে আরও কঠিন কর্মসুচির কথা জানিয়ে আজকের মানববন্ধন কর্মসুচির সমাপ্ত ঘোষনা করেন। এ সময় তিনি মানব বন্ধনে সকলকে অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানান।