ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : ২৮ মে আজ শনিবার বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস ২০২২। একজন নারীর জীবনে পূর্ণতা আনে মাতৃত্বের স্বাদ। আর সে মাতৃত্বকে নিরাপদ করতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ১৯৮৭ সালে কেনিয়ায় নাইরোবি কনফারেন্স এ নিরাপদ মাতৃত্বের ঘোষণা করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ২০০০ সাল নাগাদ ৫০ % মাতৃমৃত্যু কমানো।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতি বছরের মতো এবারও ২৮ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হবে যেতে’
একজন গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। শুধু মা – ই নন, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা। এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা । এককথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে পরিবার , সমাজ ও দেশকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেয়া। আর তাই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮৬-৯০ সালে প্রতি লাখে ৫৭৪ জন, ১৯৯১-৯৫ সালে ৪৮৫ জন, ১১৯৬ সালে ৪৪৮ জন, ১৯৯৮-২০০০ সালে ৩২২ জন, ২০০৭ সালে ২৯৮ জন, ২০১০ সালে ১৯৪ জন, ২০১৫ সালে ১৭৬ জন, ২০১৮ সালে ১৬৯ জন এবং ২০১৯ সালে ১৬৫ জন গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হয়।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক গবেষণার প্রেক্ষিতে জানা যায়, গত ১০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার কমেছে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে প্রায় ৯৪ জন। যদিও গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ৭০ জনের নিচে নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে গেছে। মায়েদের হোম ডেলিভারিতে নিরুৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন। বন্ধ করা হচ্ছে যত্রতত্র ও অস্বাস্থ্যকর ক্লিনিকে মায়েদের ডেলিভারি। নিপোর্টের গবেষণায় বলা হয়, দেশের মাতৃমৃত্যু হারের কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণে ৩১ শতাংশ, একলামশিয়া ২৪ শতাংশ, পরোক্ষ কারণে ২০ শতাংশ, অনির্ধারিত কারণে ৮ শতাংশ, গর্ভপাত জটিলতায় ৭ শতাংশ, অন্যান্য কারণে ৭ শতাংশ এবং অমানসিক শ্রমে ৩ শতাংশ মৃত্যু হয়। যে অবস্থা পরিবর্তনে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো।
পরিবর্তন এসেছে পরিবার পরিকল্পনার সূচকেও। ২০১৯ সালে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩২ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৫ সালে যা ছিল ১.৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া ঝরে পড়া ও অসম্পূর্ণ প্রয়োজনের (আনমেট নিড) হারও বেশ হ্রাস পেয়েছে। যা ছিল যথাক্রমে ৩৭ শতাংশ ও ১২ শতাংশ। প্রজনন সক্ষম (১৫-৪৯ বছর) নারীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির প্রতি সন্তুষ্টির হার ৭৭.৪ শতাংশ। যা আগে ছিল ৭২.৬ শতাংশ (এসভিআরএস-২০১৪)। শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, বাংলাদেশ গত পঞ্চাশ বছরে মানবসম্পদ সূচকেও গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি করেছে। জাতিসংঘের সূচকে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৭৩.২ শতাংশ। এই সূচকের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মূলতঃ শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৫৩ জন। যেটি ২০১৮ সালে এসে প্রতি হাজারে মাত্র ২২ জনে নেমে আসে। এছাড়া বিবিএস ১৯৮১ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দিয়েছে প্রতি হাজারে ২শ ১২ জন। যেটি ২০১৮ সালে হয়েছে প্রতি হাজারে ২৯। ১৯৯১ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ৪.৭৮ শতাংশ। সেটি এখন ১.৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
১৯৮৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে উন্নয়ন-সহযোগীদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বিষয়টি পর্যালোচনা করে এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো নিরাপদ মাতৃত্বকে নারীর অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।
আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন…গর্ভাবস্থা, যদিও একজন মহিলার জীবনের সবচেয়ে সুখী পর্যায়গুলির মধ্যে একটি, এটি এক গুচ্ছ মানসিক, শারীরবৃত্তিয় চাপ প্রয়োগ করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের তাই তাদের জীবনের এই পর্যায়ে নিজেদের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যত্ন, খাদ্য এবং পুষ্টি বিষয়ে, গর্ভাবস্থায় কোন খাবার খেতে হবে তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। গর্ভবতী মহিলাদের নিজেদের এবং তাদের শিশুদের উভয়ের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে উভয়ের জন্যই জন্য খেতে হবে।আর গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন তিনশো থেকে পাঁচশো অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রয়োজন। এই অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজনের সাথে এক হাজার দুইশো মিলিগ্রামের ক্যালসিয়াম, ছয়শো থেকে আটশো মাইক্রোগ্রাম ফোলেট এবং সাতাশ মিলিগ্রামের লোহা প্রয়োজন।
একটি খাদ্যের মাধ্যমে উপরের সব পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাগুলি মেটানো কঠিন মনে হতে পারে; ভালো খবর এটাই যে অতিরিক্ত পুষ্টি পাওয়া যতটা কঠিন মনে হয় ততটা কঠিন নয়। আমাদের পুষ্টি গ্রহণ মূলত আমরা যে খাবার বেছে নিই তার উপর নির্ভর করে।
> খাবারঃ-গর্ভবতী মায়ের জন্য দরকার সুষম খাদ্যতালিকা, এতে করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত ও খাদ্যঘাটতি দূর করা সম্ভব। এ সময় প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে মওসুমি ফল ও শাক-সবজি খেতে হবে। কেনা শাক-সবজি, ফলমূল বাজার থেকে আনার পর আধাঘণ্টা পর্যন্ত পানিতে ভিজিয়ে খেলে ফরমালিনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
> পরিমিত হালকা ধরনের কাজঃ-
নারীর গর্ভকালীন সময়ে প্রথম দু-তিন মাস ও শেষের তিন মাস অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা করা উচিত। ভারী জিনিস বহন করা বা তোলা যাবে না। পিচ্ছিল স্থানে হাঁটা যাবে না এবং সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
> ঘুমঃ-এ সময় দিনের বেলা কমপক্ষে দু-ঘণ্টা ঘুম বা বিশ্রাম এবং রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। ঘুমানো বা বিশ্রামের সময় বাঁ-কাত হয়ে শোয়া ভালো।
> পরিধেয়ঃ-
গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। সঠিক মাপের এবং নরম জুতো পরতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই হিল পরিহার করা উচিত।
> ভ্রমণ:-গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। উঁচু-নিচু পথ কিংবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে এমন যানবাহনে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সকালে ও বিকেলে কিছু সময়ের জন্য স্বাস্থ্যকর ও মনোরম পরিবেশে ভ্রমণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো, এতে শরীর সুস্থ ও মন প্রফুল্ল থাকে। তাই ফুলের বাগান, লেকের পাড়, পার্ক- এসব স্থানে ভ্রমণ করা উচিত।
> শরীরের বিশেষ যত্ন ও রোগ-প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণঃ-
এ সময় নিয়মিত প্রতিদিন সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করতে হবে এবং হাত-পায়ের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। গর্ভকালে মায়েদের দাঁতগুলো বেশ নরম হয়ে যায়, তাই দাঁত ও মাড়ির বিশেষ যত্ন নিতে হবে। চার থেকে আট মাসের মধ্যে অবশ্যই টিটেনাসের টিকা দিতে হবে। এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, চিকেন পক্স ও বর্তমানে নতুন ভাইরাস মাঙ্কিপক্স ইত্যাদি ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকতে হবে।
> বিশেষ সতর্কতাঃ-
অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগ-শোক ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তাই এসব এড়িয়ে ভালো চিন্তা করতে হবে। প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস স্বামীর সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না। পানিশূন্যতা রোধে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
> হোমিও সমাধানঃ-হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গর্ভকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে কোন (ভিটামিন, আয়রণ, ক্যালশিয়াম জাতীয়) ঔষধ খাওয়ানোর পক্ষপাতী নন। বিশেষত যাদের হজমশক্তি ভালো আছে এবং মাছ-গোশত-শাক-সবজি-ফল-মূল ইত্যাদি কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ আছে, তাদের কোন (ভিটামিন জাতীয়) ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নাই। তবে যে-সব গর্ভবতী মায়েরা শরীরিক-মানসিক দুর্বলতা, রক্তশূণ্যতা ইত্যাদিতে ভোগছেন, অথবা যারা অভাব-অনটনের কারণে প্রয়োজনীয় পুষ্ঠিকর খাবার-দাবার কিনে খেতে পারেন না কিংবা যারা পুষ্ঠিকর খাবার কিনে খেতে পারলেও শারীরিক ত্রুটির কারণে সেগুলো যথাযথভাবে শরীরে শোষিত হয় না, তাদেরকে ক্যালকেরিয়া ফস ফেরাম ফস , ক্যালি ফস ইত্যাদি হোমিও ভিটামিন / টনিক জাতীয় ঔষধগুলো নিম্নশক্তিতে (6X) অল্প মাত্রায় খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঔষধগুলি মানব শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ক্যালশিয়াম, আয়রণ, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস সরবরাহ করে থাকে। পাশাপাশি এই ঔষধগুলো আমাদের শরীরকে এমনভাবে গড়ে তোলে যাতে আমাদের শরীর নিজেই তার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্ঠিকর উপাদানগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাবার খেতে শোষণ করার / গ্রহন করার যোগ্যতা লাভ করে।
গর্ভকালীন সময়ে খেলে এই ঔষধগুলো আপনার গভর্স্থ সন্তানের হাড়, দাঁত, নাক, চোখ, মস্তিষ্ক ইত্যাদির গঠন খুব ভালো এবং নিখুঁত করতে সাহায্য করবে এবং আপনার সন্তান ঠোক কাটা, তালু কাটা, হাড় বাঁকা, খোঁজা, বামন, পিঠ বাঁকা , বুদ্ধি প্রতিবন্ধি, হৃদরোগ, চর্মরোগ, কিডনীরোগ প্রভৃতি দোষ নিয়ে জন্মনোর হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই জন্য যাদের বংশে শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্দ্বি শিশু জন্মের ইতিহাস আছে, তাদের গর্ভকালীন সময় এই ঔষধগুলো অবশ্যই খাওয়া উচিত। ভিটামিন জাতীয় এই হোমিও ঔষধগুলো গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের এত চমৎকার যত্ন নেয় যে, এগুলো বেশ কয়েক মাস খেলে তাদের উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানী, ডায়াবেটিস, মাথাব্যথা, বমিবমিভাব, ছোটখাট জ্বর-কাশি, খিচুঁনি ইত্যাদি রোগ এমনিতেই সেরে যায়। অন্যদিকে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানী, ডায়াবেটিস, খিচুঁনি, ধনুষ্টংকার ইত্যাদি রোগ নাই, তারাও এই ঔষধ তিনটি খাওয়ার মাধ্যমে সে-সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।
ঔষধ তিনটি একসাথে খাওয়া উচিত নয় ; বরং একটি একটি করে খাওয়া উচিত। যেমন- ক্যালকেরিয়া ফস পনের দিন, তারপর ফেরাম ফস পনের দিন, তারপর ক্যালি ফস পনের দিন- এইভাবে চক্রাকারে একটির পর একটি করে খান। সাধারণত 1X, 3X, 6X, 12X ইত্যাদি নিম্নশক্তিতে খাওয়া উচিত ; যেটি মার্কেটে পাওয়া যায়। ১০ টি বড়ি করে সকাল-বিকাল রোজ দুইবার করে খান। প্রয়োজন মনে করলে পুরো গর্ভকালীন পুরো দশ মাসই খেতে পারেন এবং সন্তানকে স্তন্যদানকালীন দুই বছরও খেতে পারেন। তবে মাঝে মধ্যে সাতদিন বা পনের দিন মধ্যবর্তী বিরতি দিয়ে খাওয়াও একটি ভালো রীতি। এটি গর্ভ রক্ষার অর্থাৎ গর্ভস্থ শিশুকে রক্ষার একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। এটি গর্ভস্থ শিশুর চারদিকে পানির পরিমাণ বজায় রাখে এবং পানির পরিমাণ কমতে দেয় না, ফলে অধিকাংশ শিশু সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়াই স্বাভাবিক পথে জন্ম নিয়ে থাকে। কলোফাইলাম গর্ভপাতেরও একটি উত্তম ঔষধ, যাতে ভুয়া প্রসব ব্যথা দেখা দিলে এটি প্রয়োগ করতে হয়। যাদের প্রতিবারই (তৃতীয় মাস, পঞ্চম মাস ইত্যাদি) একটি নির্দিষ্ট সময়ে গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়, তারা সেই নির্দিষ্ট সময়ের একমাস পূর্ব থেকেই অগ্রিম এই ঔষধটি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া শুরু করতে পারেন ।তবে সাবধান চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করলে সমস্যা আরো জটিল আকারে পৌছতে পারে।
পরিশেষে, গর্ভাবস্থায় একটি বিশেষ অবস্থা। এই সময়ে প্রত্যেক মহিলার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। কারণ একজন মহিলা যতবারই গর্ভধারণ করেন ততবারই জটিলতা দেখা দিয়ে তার জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই গর্ভধারণ করলে মহিলার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের উচিত তার শরীরের প্রতি যত্ন নেয়া ও প্রসবের জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করা।