• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মনে কি পড়ে টাইটানিকের শেষ দৃশ্যটার কথা?

| নিউজ রুম এডিটর ৭:৪৯ অপরাহ্ণ | জুন ১০, ২০২২ লাইফ স্টাইল

মোঃ মাইন উদ্দিন : টাইটানিক নামটা শুনলে হয়তো প্রথমেই অনেকের চোখে ভাসে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট অভিনীত টাইটানিক মুভিটি। জেমস ক্যামেরনের পরিচালনায় মুভিটি ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পেয়ে গেছে আরও আগেই। টাইটানিকের গল্প নতুন করে আমদর্শকের কাছে তুলে ধরার কৃতিত্বটা ক্যামেরনেরই।

টাইটানিক একটি জাহাজের নাম। ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল টাইটানিক জাহাজটি সাগরে ভেসেছিল। ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে রওনা দিয়েছিল নিউইয়র্ক সিটির উদ্দেশে। চার দিন চলার পর ১৪ এপ্রিল স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু পরে টাইটানিক ধাক্কা খায় একটি হিমশৈলতে। এরপর ধীরে ধীরে সলিলসমাধি ঘটে টাইটানিক ও এর অনেক যাত্রীর।
টাইটানিকে দুই যাত্রী ছিল নাম রোজ আর জ্যাক। আসুন রোজ আর জ্যাকের কথায়।

টাইটানিক ডুবে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। যাত্রীরা বুঝতে পারছে এবার আসছে হিমশীতল মৃত্যু। শুধু কিছু সংখ্যক যাত্রী বেঁচে যেতে পারে লাইফ বোটের মাধ্যমে। কিন্তু সেই লাইফ বোটের সংখ্যা খুব কম। টাইটানিকের যাত্রী জ্যাক এবং রোজ তারা দুজন দুজনকে ভালোবসে। তাদের স্বপ্ন একসাথে ঘর বাঁধবে। কিন্তু তারাও জেনে গেছে দু’জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু নিশ্চত। কারণ তাদের মধ্যে শুধু একজন লাইফ বোটে যেতে পারবে। সেই হিসেবে বড়লোক ব্যবসায়ীর মেয়ে রোজ পেল লাইফ বোটের অনুমতি। গরিবের ছেলে জ্যাকের জন্যে লাইফ বোটের অনুমতি মিলল না। জ্যাক মনে মনে মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হল। এবার বিদায় নেওয়ার পালা। ছোট্ট বোটে উঠে বসল রোজ। আর জ্যাক? সে সেই ডুবন্ত জাহাজে থেকে প্রেমিকা রোজকে বিদায় জানাতে লাগল। দু’চোখ অশ্রু সজল, তবু কান্না গোপন করেছে জ্যাক। কারণ বিদায় ক্ষণে প্রেমিকা রোজকে সে দেখাতে চায় না তার কান্নায় ঝাপসা হয়ে যাওয়া মুখখানি। কিন্তু রোজের মন তা মানছে না, সে বোট থেকে নেমে চলে আসে জ্যাকের কাছে। বলে, “চলো জ্যাক আমরা দু’জন এক সাথে মরি। মৃত্যুর পর আবার যদি জীবন আসে সে জীবনে তুমি হবে আমার, আর আমি হবো তোমার। চলে আসো জ্যাক প্লিজ…

তারপর রোজের ছোট্ট বোটখানি ভাসতে লাগল বরফ ঠান্ডা পানিতে। রোজ বোর্ড থেকে নেমে পড়লো, ভাসছে হিম শীতল পানিতে। রোজ যে জ্যাকের এক আকাশ ভালবাসা। জ্যাক বরফ ঠান্ডা পানির মধ্যে ভেসে ভেসে গিয়ে রোজের হাত দু’খানি স্পর্শ করল। রোজও আঁকড়ে ধরলো জ্যাকের দু’খানি শীতল হাত। দু’জনই বরফ শীতল পানিতে ভাসছে। এরই মধ্যে একটি কাঠের টুকরো পেল। এতেও দু’জন বাঁচা যাবে না। জ্যাক কাঠের টুকরতে তুলে দেয় রোজকে। রোজও তখন হৃদয়ের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে বাঁচাতে চায় জ্যাককে। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের বরফ ঠান্ডা পানি আস্তে আস্তে বেবশ করতে লাগল জ্যাকের তারুণ্যে ভরা শরীর খানি। রোজ কাতর স্বরে, আর্ত চিৎকার করে বলল, “কেন এমন করছো জ্যাক? আমরা কি মরতে পারতাম না একসাথে? আমরা কি এমন জীবন চেয়েছিলাম, বল জ্যাক?” বল…

মৃদু হাসছে জ্যাক। অন্যদিকে তার শক্ত মুঠি ধীরে ধীরে আলগা হচ্ছে। সে বলল, রোজ “আমি বেঁচে থাকব তোমার ঐ দুটি কালো চোখের মধ্যে। যখন তুমি আমার কথা ভেবে কাঁদবে তখন তোমার দু’চোখে মুক্তোর মত যে অশ্রুবিন্দু আসবে, তুমি তখন বুঝে নিয়ও সেই অশ্রুবিন্দই তোমার জ্যাক। আমি তোমার মধ্যে, তোমার সমস্ত অনুভূতি জুড়ে বেঁচে থাকবো,” এ কথা বলেই জ্যাকের মৃত্যু হয়, বেঁচে যায় রোজ। রোজকে বাঁচতে হাসি মুখে জীবন দেয় জ্যাক।

আসলে জীবন ফুরিয়ে যায়, মৃত্যু এসে কেড়ে নেয় আমাদের পার্থিব শরীর। কিন্তু সত্যিকারের ভালবাসা, সে কি কখনও ফুরায়? ফুরায় না। মৃত্যুর পর জীবনময় হয়ে বেঁচে থাকে সেই প্রেম, ভালোবাসা। আর এরই দৃষ্টান্ত টাইটানিকের যাত্রী রোজ আর জ্যাকের শেষ দৃশ্য। জ্যাক মরে গেলেও রোজের মনে ছিল জ্যাকের ভালোবাসা। রোজ যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন ঘুমালেই জ্যাককে স্বপ্নে দেখতো দু’জনই বেঁচেছে, টাইটানিকের যাত্রীরা দু’জনকে স্বাগত জানাচ্ছেন।