• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিস্তা পাড়ে পানিবন্দী প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার

| নিউজ রুম এডিটর ৬:১০ অপরাহ্ণ | জুন ১৯, ২০২২ লালমনিরহাট, সারাদেশ

আজিজুল ইসলাম বারী,লালমনিরহাট প্রতিনিধি: কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে ফের বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

রোববার (১৯ জুন) সকাল ৯ টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে, দুপুর থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।

ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, গত দুই সপ্তাহ থেকে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে গত মাসের শুকনো মরুময় তিস্তার পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ফিরে পেয়েছে তিস্তা তার আপন রূপ। নৌকা আর মাঝি মাল্লাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। জেলেরাও প্রায় ফিরে পেয়েছে তিস্তার পানি আর মাছ।

পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অতিরিক্ত পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার ছোট ছোট নদী ও খাল ভরে গেছে পানিতে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।

নদীপাড়ের মানুষজন জানায়- পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার
কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।

পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। আদিতমারীর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ যাওয়ার সড়কটির অর্ধেকাংশ ধসে গেছে। বাকিটুকু ধসে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। সব মিলে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। তিস্তার বাম তীরের প্রায় ৭-৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে।

গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, প্রায় সোয়া একর জমির উঠতি বাদাম ক্ষেত ৫দিন ধরে বন্যার পানিতে ডুবে আছে। পানি নেমে গেলেও পলি আর বালু ভরাট হয়ে নষ্ট হবে ফসল। প্রতি বছর বাদাম আর পেঁয়াজ থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা আসত। এ বছর প্রথম বন্যায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এখন বাদামও নষ্ট হলো। একদিকে বন্যার পানিতে কৃষকের ঘরে খাবার সংকট। অন্যদিকে ফসল নষ্টের ক্ষতি। সব মিলে তিস্তাপাড়ে আমাদের সীমাহীন কষ্ট।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, গত দুই দিন ধরে বন্যার পানি বাড়া কমা করছে। গোবর্দ্ধন ওয়ার্ডে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যা কবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শনিবার তা বিতরণও শেষ হয়েছে। বন্যা কবলিত যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।