অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর গোতাবায়া পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। শ্রীলঙ্কার স্পিকার ইয়াপা আবেবর্ধনেও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণ-আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার রাতে একটি সামরিক বিমানে দেশ ছাড়েন গোতাবায়া। প্রথমে মালদ্বীপে পালিয়ে যান তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছান গোতাবায়া। সেখান থেকেই ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।
কোন দেশ আশ্রয় দেবে গোতাবায়াকে?
অনেকেরই এখন প্রশ্ন যে গোতাবায়া রাজাপাকসে এরপর কোন দেশে পালানোর পরিকল্পনা করছেন? কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন কোন দেশ তাকে আশ্রয় দেবে?
কলম্বো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা টেসা ওয়ং বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যাবার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি ট্রানজিট হিসেবে সিঙ্গাপুরে গেছেন কি না, কিংবা তিনি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ারই কোনও দ্বীপরাষ্ট্রে থাকতে চাইছেন কি না বা চাইলেও কতদিন বাইরে থাকার পরিকল্পনা করছেন কিছুই এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে ওয়ং বলেন, সিঙ্গাপুর সরকার বেশি দিন তাকে সেদেশে থাকতে দেবে বলে সন্দেহ রয়েছে।
তারা অতীতে রবার্ট মুগাবে, কিম জং উন ও থিয়েন সিয়েনের মত বিতর্কিত ব্যক্তিদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু রাজাপাকসে যার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে এবং দেশের চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেহেতু এখন তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত, ফলে তাকে আশ্রয় দিয়ে সিঙ্গাপুর সমালোচনার মুখে পড়তে চাইবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সিঙ্গাপুর সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হবে যেটা কর্তৃপক্ষকে সামাল দিতে হবে বলে বলছেন বিশ্লেষকরা। সিঙ্গাপুরের জনগণ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আগের তুলনায় অনেক বেশি সরব হয়ে উঠেছেন এবং খোলাখুলি মত প্রকাশ করছেন বলে দেখা গেছে।
এছাড়াও সিঙ্গাপুরে প্রচুর তামিল রয়েছে যাদের অনেকেই শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভুত।
রাজাপাকসে যখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন তখন দেশটির গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার তামিলকে হত্যার নির্দেশ দেবার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কাজেই সিঙ্গাপুর তাকে দীর্ঘমেয়াদে আশ্রয় দিয়ে নতুন সমস্যা ডেকে আনতে চাইবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
শ্রীলঙ্কায় সর্বশেষ পরিস্থিতি
চলমান বিক্ষোভ দমন করতে শ্রীলঙ্কার অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মত দেশটিতে কারফিউ জারি করেছেন।
কারফিউ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত।
তবে গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন কলম্বোর বিক্ষোভকারীরা। তাদের রাস্তায় নৃত্য করতে দেখা গেছে।
খবরে জানা গেছে- সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা দখল করে রাখা সরকারি ভবনগুলো ছেড়ে চলে গেছেন।
কলম্বো থেকে বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানান, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ছেড়ে চলে গেছে এবং সেখানে এখন নিরাপত্তা বাহিনী ঢুকেছে।
তবে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, দেশের গভীর অর্থ সঙ্কটের মুখে তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে।
রনিল বিক্রমাসিংহেকেও অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট পদে প্রত্যাখ্যান করছেন দেশটির বিক্ষোভকারীরা এবং তার পদত্যাগের দাবিতে বুধবার কলম্বো ও তার আশপাশে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভে একজন নিহত এবং ৮৪ জন আহত হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা