

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, মোঃ মাইন উদ্দিন : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র বিরুদ্ধে ফের মোঃ ছায়েদুর রহমান ওরুফে সবুজ (৪৪) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধোর করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ছায়েদুর রহমান সবুজ। মোঃ সবুজ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের আলালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মুতালিব খানের পুত্র।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত স্থানীয় সরকার (ইউপি) নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুদুর রহমান মুছার নির্বাচন করেন আওয়ামী লীগ নেতা ছায়েদুর রহমান সবুজ। নির্বাচনে এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয় হওয়ার পর ওই আওয়ামী লীগ নেতা ছায়েদুর রহমান সবুজ সহ মাসুদুর রহমান মুছার কর্মী সমর্থকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরই জের হিসেবে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ উল্ল্যাহ সহ তার অনুসারীরা।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার (১০ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে কর্মস্থল ভৈরবে যাওয়ার পথে আলালপুর গ্রামের মেরাজ মিয়ার বাড়ির সামনে আসা মাত্র পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা চেয়ারম্যানের লোকজন আওয়ামী লীগ নেতা সবুজ এর পথরোধ করে তাকে মারধোর করে। পরে তাকে টেনে হেচরে ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে একটি লাঠি দিয়ে নির্মম ভাবে আঘাত করে তার নিকট থাকা আড়াই লাখ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে স্বামীকে উদ্ধার করতে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা মোছাঃ কামরুন্নাহার (৩৬) ওই ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেও রেহায় পায়নি। চেয়ারম্যান তার চুলের মুটি ও শরীরের কাপড় চোপড়ে ধরে টানা হেচরা করে উলঙ্গ করে শ্লীলতাহানি করে তার নিকট থাকা একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা আহত ছায়েদুর রহমান সবুজকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে চিকিৎসা করান।
এ ঘটনায় ওই দিন আহত আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ছায়েদুর রহমান সবুজ বাদী হয়ে চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ (৫০) সহ কাজল (৪৫), লিটন (৩০), ইদ্রিস মিয়া (৪৬), ছাদেক মিয়া (৪৫) ও শফিক মিয়া (৩৫) এর নামে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযুক্তের মাঝে চেয়ারম্যান ব্যতিত সবাই ফরিদপুর ইউনিয়নের দায়িত্ব থাকা গ্রাম পুলিশ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার ১১ ডিসেম্বর বিকাল ৩ ঘটিকার সময় স্থানীয় আনন্দ বাজার সংলগ্ন মাঠে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনের আয়োজন করেছে আহত আওয়ামী লীগ নেতা ছায়েদুর রহমান সবুজ ও এলাকারবাসী।
ঘটনা বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র মুঠোফোনে কল করা হল তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের সত্যতা জানতে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইউপি এস.এম আজজ উল্ল্যাহ এর আগে অবৈধ পন্তায় তৈয়ারীকৃত জন্ম নিবন্ধনে স্বাক্ষর না দেওয়ায় গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে ওই ইউপিতে নব-যোগদানকৃত ইউপি সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান (৫৫) কে মারধোর সহ অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করার অভিযোগ উঠেছেছিল। এঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল হওয়ার পর জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ ভার্সন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়ার পর এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা গত ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে তার কার্যালয়ে হেয়ারিং এর আয়োজন করে হিয়ারিং-এ উপস্থিত থাকার জন্য অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও অভিযোগকারী ইউপি সচিবকে নোটিশ প্রদান করেন। নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব ইউনিয়নের সদস্যদের সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে হিয়ারিং-এ উপস্থিত হয়ে ইউপি সচিবের নিকট ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান ওই চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ। পরে বিষয়টি শেষ হয়।
জানা যায় ওই চেয়ারম্যান কর্তৃক মারধোর ও চৌকিদার দিয়ে বাড়ি থেকে ধরিয়ে এনে হাত-পা ভেঙে দেয়ার হুমকির শিকার হয়েছে অনেকে। তারা হলেন, নলবাইদ চারপাড়া গ্রামের মোঃ হাবিস মিয়ার পুত্র মোঃ ইদ্রিছ মিয়া, ফরিদপুর গ্রামের মৃত তাড়ু মিয়ার পুত্র আসাব উদ্দিন, নাপিতেরচর গ্রামের মোঃ রহম আলীর পুত্র টিভি মেকার মোঃ শফিক, ফরিদপুর গ্রামের মোঃ আঙুর ব্যাপারীর পুত্র মোঃ আহসান উল্লাহ ও ফরিদপুর খাঁন বাড়ির মোঃ বেদেন খানের পুত্র মোঃ সুরুজ মিয়া।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান এস.এস আজিজ উল্ল্যাহ’র এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে দেখা গেছে।