• আজ ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার | কুড়িগ্রামে তিস্তায় নিখোঁজের একদিন পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার | বাংলাদেশের ওপর ভারতের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নির্ভরশীল: নাহিদ ইসলাম | ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু | চট্টগ্রামে প্রথম দুই ব্যক্তির শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত | তাজিয়া মিছিলে হাজারো মানুষ, সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী | আজ ১০ই মহররম, পবিত্র আশুরা | নতুন বাংলাদেশে মাফিয়াতন্ত্রের সরকার গড়তে দেওয়া হবে না: নাহিদ ইসলাম  | শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য জুলাই আন্দোলন হয়নি: নাহিদ ইসলাম | কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার নারীকে নিরাপত্তা ও চিকিৎসার নির্দেশ |

বরিশালে নৌকার দখলে ছিল ভোটের মাঠ

| নিউজ রুম এডিটর ৪:৫৯ অপরাহ্ণ | জুন ১৩, ২০২৩ 01

বরিশাল সিটিতে ভোটের মাঠ একচেটিয়া দখলে রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সকাল থেকেই মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় নৌকার কর্মীরা। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে শক্ত অবস্থানের জানান দেয় তারা। এমনকি বেশ কয়েকটি জায়গায় বিরোধী পক্ষের ওপর হামলা করা হয়। এতে শহরময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিনে নির্বাচনি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। বেলা বাড়লে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে-এমন ধারণা করা হলেও উলটো পরিস্থিতি দেখা যায়। দুপুরের পর বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।

বিভিন্ন কেন্দ্র গিয়ে দেখা যায়, নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলেও গড়তে পারেননি উল্লেখ করার মতো প্রতিরোধ। ফলে আগাগোড়া একচেটিয়াভাবে মাঠ আওয়ামী লীগেরই দখলে থাকে।

শহরের বগুড়া রোডের চৈতন্য স্কুল কেন্দ্রের সামনে নৌকার ব্যাচ ও সাদা গেঞ্জি পরিহিত বিপুলসংখ্যক কর্মীর দেখা মেলে। সেখানে তাদেরকে দলবেঁধে আড্ডা দিতে দেখা যায়। সেখানে বেলা ১১টায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বরিশালের স্থানীয় ভাষায় যুগান্তরকে বলেন, ‘এইহানে নৌকার এত লোকজন কা। হ্যারা য্যামনে আড্ডা দিতা আছে তা দেইখ্যা তো সবাই ভয়তে আছে। অ্যা করলে লোকজন আইব ক্যামনে।’

পূর্ব বগুড়া রোডের ভোটার আলাউদ্দিন সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘এইখানে তো সবই নৌকার লোক দেখি। আর কাউকে তো দেখা যায় না।’

শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্যতম বৃহত্তম কেন্দ্র সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ। কেন্দ্রের বাইরে নৌকার ব্যাচধারী বিপুলসংখ্যক কর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। অথচ ভেতরের বিশাল ক্যাম্পাস ছিল একেবারেই ফাঁকা। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনি কর্মকর্তাদের অনেকেই অলস সময় পার করছিলেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছিলেন অনেকটাই নিরুদ্বেগ। তাদের কেউ কেউ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলেন।

দুপুর ২টায় নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপ্টিস্ট মিশন মাধ্যমিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও নৌকার বিপুলসংখ্যক কর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। ভেতরে ভোটারদের লাইনে অপেক্ষমাণ কয়েকজন অভিযোগ করেন, ভোটার সংখ্যা কম থাকলেও ভোটগ্রহণ হচ্ছে অস্বাভাবিক ধীরে। এতে দীর্ঘ সময় তাদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, ব্যাপ্টিস্ট মিশন কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত সেখানে ৮শর মতো ভোট পড়ে।

এদিকে লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী ইকবাল হোসনে তাপস নির্বাচন নিয়ে তার অভিযোগের ডালা মেলে ধরেন সকালেই। গোরস্থান রোড ডিডিএফ মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে আসতে তার কর্মী-সমর্থকদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পলাশপুর ব্রিজে তার ওপর হামলা ও কর্মী-সমর্থকদের হয়রানির অভিযোগ করেন তিনি।

এছাড়া নির্বাচনে অন্যতম শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে পরিচিত হাতপাখার মেয়রপ্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। শহরের হাতেম আলী কলেজের কাছে হামলার শিকার হন তিনি। হামলায় মুফতি ফয়জুলের দাঁতের মাড়ি কেটে যায়। মুখমণ্ডলে রক্তের দাগ দেখা যায়। এ ঘটনায় তিনি সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও হাতপাখার কর্মীরা শক্ত অবস্থান জানান দিতে পারেননি। রহস্যজনক কারণে হামলার পরপরই অনেকটা নিভৃতে চলে যায় হাতপাখা।

নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ করেন হাতঘড়ির প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।

তবে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে ত্বরিত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। মুফতি ফয়জুলের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করার কথা বলা হলেও রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি।

অবশ্য বিএমপির পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। অপরাধীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। আবার কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে বিশৃঙ্খলা হয়। এমনকি গোপন কক্ষে ঢুকে নৌকার এজেন্টদের ভোট দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু এ নিয়ে অভিযোগ করা হলেও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নীরব থাকার কৌশল বেছে নেন।

তবে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন কারণ দেখাচ্ছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা। তারা বলছেন, বরিশাল সিটি বিএনপি অধ্যুষিত হিসাবে পরিচিত। কিন্তু ভোটে নেই ধানের শীষ। ফলে প্রার্থী না থাকায় বিএনপি সমর্থক ভোটারদের অনেকেই কেন্দ্রমুখী হননি। এছাড়া বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগে অন্তর্কোন্দল আছে। ফলে সাদিকপন্থিদেরও অনেকে ভোটদানে বিরত থেকেছেন।

নির্বাচনের আগে হাতপাখার কর্মীরা ব্যাপক শোডাউন করলেও মাঠপর্যায়ে তাদের প্রভাব তেমন পড়েনি। ভোটে ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগানোর যে চেষ্টা তারা চালিয়েছিলেন, তাও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার অন্যতম কারণ ইভিএমে ভোটগ্রহণ। এর আগে কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হলেও এবারই প্রথম সব সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হলো। এতে অনভ্যস্ত ভোটারদের অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়েছেন। আবার অনেক জায়গায় ইভিএম বিভ্রাটে ভোটগ্রহণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।