

রাজধানীতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম নির্দেশদাতা ছাত্রদল নেতা আমির হোসেন রকি ও তাঁর সহযোগী মো. সাকিব ওরফে আরোহানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার (০৫ নভেম্বর) কেরানীগঞ্জে অভিযান চালায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই বোতল পেট্রোল ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি (২৫) তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহান (২১)।
সিটিটিসি বলছে, বিএনপি নেতাদের নির্দেশে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি সমন্বয় করে আসছিলেন রকি। একটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য কর্মীরা পান তিন হাজার টাকা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ হিসেবে গত ১ নভেম্বর সকালে মুগদা বিশ্বরোডের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় মিডলাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর পালানোর সময় জনগণের সহযোগিতায় পুলিশ আল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় বাসের মালিক মুহাম্মদ দুলাল হোসেন বাদী হয়ে মুগদা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। ঘটনার পরপরই সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স টিম ঘটনায় জড়িত ও আর্থিক সহায়তাকারীদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে।’
জানা যায়, আল আমিন স্থানীয় বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় তাদের দলীয় নেতা মিজানসহ অন্যদের নিয়ে যাত্রীবেশে টিটিপাড়া থেকে বাসে ওঠেন এবং ঘটনাস্থলে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেন। তার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সিটিটিসি ও মুগদা থানার একটি যৌথ দল গতকাল ভোরে গাজীপুরের বাসন থেকে অগ্নিসংযোগকারী গ্রুপের মূল সমন্বয়কারী মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী মিজানুর রহমান জানান, অবরোধের প্রথমদিন সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি তাকে ফোনে বাসে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দেন। রকি তাকে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ও তাদের নির্দেশেই কাজ হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, যদি মিজান আগুন দিতে পারেন, তবে বিএনপি আর কয়েকদিন পর ক্ষমতায় এসে তাকে এমন টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করবে যে, কোনো অভাব থাকবে না। গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল নিয়ে ওই নেতা গুলিস্তান এলাকায় এসে তাকে পাশে ডেকে নিয়ে পরদিন কমলাপুর থেকে মুগদা পর্যন্ত বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে এক হাজার টাকা ও এক বোতল পেট্রল দেন। এরপর মিজান তার সহযোগী আল আমিনসহ আরও দুইজনকে নিয়ে ১ নভেম্বর সকালে মুগদায় বাসে আগুন দেন।
সিটিটিসি প্রধান জানান, তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসির একটি টিম কাজ শুরু করে। গোপন সূত্রে জানা যায়, রকি গতকাল সকালের দিকে দয়াগঞ্জ এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এজন্য তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুষ্কৃতিকারীদের ধরার জন্য পুলিশ কাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে সিটিটিসির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আগুন দেওয়ার আগেই যাত্রাবাড়ী থানা তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশি তৎপরতায় ওই এলাকায় কিছু করতে না পারায় রকি তার এক নেতার সঙ্গে আগুন দেওয়া সংক্রান্ত পরামর্শ করেন এবং তার অপর সহযোগী সাকিবকে নিয়ে আরামবাগ পাম্প থেকে পেট্রোল নিয়ে কেরানীগঞ্জ এলাকায় তার সঙ্গে দেখা করতে রওয়ানা হন। সিটিটিসির ইন্টেলিজেন্স টিম তাকে অনুসরণ করে বাবুবাজার ব্রিজের ওপর থেকে রকি ও তার সহযোগী সাকিবকে দুই বোতল পেট্রল ও তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমির হোসেন রকি জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র শীর্ষ এক নেতার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও আর্থিক সহযোগিতায় তিনি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। নেতারা তাকে বিএনপি দলীয় ক্যাডারদের সমন্বয় করে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি বিএনপি কর্মী মিজানকে টাকা ও পেট্রোল সরবরাহ করেন। যার ভিত্তিতে মিজান, আল আমিন ও তাদের অপর দুই সহযোগী মুগদা থানা এলাকায় বাসে আগুন দেয়। আগুন দেওয়ার পরপরই মিজান তাকে ফোন দিয়ে আগুন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে তিনি মিজানের বিকাশ নম্বরে তিন হাজার টাকা পাঠান।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে৷ কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। আপনারা জানেন আরও একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে, প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিতো, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দিয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পুরস্কার পাঠানো হতো৷ আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশ দাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।
পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা সবার তথ্য পেয়েছি৷ কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।