বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যকার ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলেছে। আবার শেখ হাসিনার আমলে জাতীয় পার্টি ছিলো রাজনীতির উঠানে তুরুপের তাস। এখন নামগন্ধও পাওয়া যাচ্ছে না একসময় সরকারের সঙ্গে থাকা এই দলটির।
এই নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায়, কেউ কার মিত্র আর কে শত্রু, তা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই টানাপোড়েন ও নতুন মেরুকরণ দেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করছে।
দেশের রাজনীতিতে এখন নতুন করে তুরুপের তাস হয়ে উঠতে যাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে মাঠে নেমেছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছড়াও আরেকটি যে দল এখন মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে, তারা হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অনেক লম্বা সময় ধরে একজোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতির মাঠ গরম রেখেছিল বিএনপি ও জামায়াত। কিন্তু রাজনীতির নানা সমীকরণে সেই জোটে ফাটল ধরায় বিএনপির পর দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হতে যাচ্ছে জামায়াত। এখন ইসলামী আন্দোলন যদি জামায়াতের সঙ্গে যোগ দেয়, তবে জামায়াতের হাত অনেকটাই শক্তিশালী হবে। আবার যদি চরমোনাই পীরের দল বর্তমানে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে যোগ দেয়, তাহলে লাভবান হবে দুদলই।
এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে, কোন পথে হাটবেন চরমোনাই পীরের দল? বিগত দিনগুলোতে বহুবার জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এমনকি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরেও তারা প্রকাশ্যে জামায়াতের সমালোচনা করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের বক্তব্যে জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে দ্বিধা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, জামায়াতের বিরুদ্ধে যে নানা অভিযোগ রয়েছে—বিশেষ করে অতীতের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে—তা জামায়াতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি ‘নিরঙ্কুশ রাজনীতি’ করার পরামর্শ দিয়েছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে, ইসলামী আন্দোলন নিজের আলাদা রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে আগ্রহী।
ফয়জুল করিম আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং যেসব দলগুলোর সামনে বড় বা কঠিন কোনো বাধা নেই তাদের জন্য ক্ষমতায় যাওয়াটা সহজ। তবে যে সমস্ত দলের সামনে পাহাড় সমান বাধা, তারা যত বড় দলই হোক না কেনো তাদের জন্য পথ অতিক্রম করা মোটেও সহজ হবে না।
চরমোনাই পীরের দল এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের সামনের পথ নির্ধারণ করে দিতে পারে পুরো রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। একদিকে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, অন্যদিকে স্বতন্ত্র দল হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা কিংবা বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনায় যুক্ত হওয়া—এই সম্ভাব্য তিনটি পথই খোলা আছে তাদের সামনে।
তবে দলটির নেতারা আপাতত তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তকে সময়ের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে, চরমোনাই পীরের দল যে পথে হাঁটবে, তা আগামী নির্বাচনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মেরুকরণে নতুন ধারা যুক্ত করবে এবং সম্ভাব্য জোট বা জাতীয় সরকারের রূপরেখাকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।