• আজ ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 গাজার চারপাশে এবার ‘কিল জোন’ বানাচ্ছে ইসরাইল! | ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ | সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি | দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে তিন বিভাগে | সত্য সংবাদ প্রকাশে বিদেশি গণমাধ্যমের মিথ্যার ওপর চুনকালি পড়বে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা | শরীয়তপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ | জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা | ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়: মোদি | বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন | শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোসহ মোদির সঙ্গে যেসব বিষয়ে কথা হলো ইউনূসের |

এমটিএফই প্রতারণা,দ্বিগুন মুনাফার ফাঁদে ফেলে এমপি পুত্রের কোটি টাকা লোপাট!

| নিউজ রুম এডিটর ৬:০৮ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ২৪, ২০২৪ অপরাধ-দুর্নীতি

 

মোহাম্মদ রোমান হাওলাদার: এমটিএফই অর্থাৎ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ ইনকরপোরেটেড প্রতারণার এঅনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় শেয়ার, ডলার, ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার কানাডা ও দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। মূলত ভার্চ্যুয়াল পঞ্জি স্কিম ও বহুস্তর বিপণন (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম) মডেলেও কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ‘এমটিএফই ট্রেড’ নামের এ অ্যাপে শুধুমাত্র মোবাইল নাম্বর দিয়েই হিসাব খোলা যায়।

বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা ও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও (এমটিএফই ট্রেড) অ্যাপে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিগুন মুনাফার লোভ ও ফাঁদে ফেলে কয়েক কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদের যৈষ্ঠ্য পুত্র আনিসুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধে।

এমনকি তার দলীয় প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ইচ্ছে না থাকা স্বত্ত্বেও মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) গ্রুপ ইনকরপোরেটেড প্রতারণার এ অ্যাপে অর্থ বিনিয়োগ করে কয়েক কোটি টাকা খুইয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গোপন অনুসন্ধানে এমটিএফই অ্যাপের মাধ্যমে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সির (ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা, যেমন বিটকয়েন) লেনদেনের সাথে সাবেক এমপি মহিউদ্দিন পুত্র ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান রিয়াদের সরাসরি জড়িত থাকার একাধিক তথ্য প্রমাণ মিলেছে।

গোপন একটি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ২ আগষ্ট সাবেক এমপি মহিউদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান রিয়াদ মালখানগর ইউনিয়নের কাজীরবাগ গ্রামে তার বিলাশবহুল বাড়ীতে একটি সভার আয়োজন করে এমটিএফই’র মুন্সিগঞ্জ জেলার সিইওর হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। তার মাধ্যমে এমটিএফই ট্রেড অ্যাপে বিনিয়োগ করলে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যাবে মর্মে সভায় উপস্থিত লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করেন। রিয়াদের আয়োজনে ওই সভায় মালখানগর ইউপির একাধিক ইউপি সদস্যসহ দলীয় ও নানা বয়সী স্থানীয় প্রায় একশো’রও বেশী মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এসময় আনিসুর রহমান রিয়াদ তার রেফারেন্সে সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে দ্বিগুন মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রত্যেকের মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস দিয়ে আইডি খুলে দেন।

অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী কারো রেফারেন্সে আইডি খোলা হলে রেফারেন্স কারীকে প্রতিটি আইডি বাবদ ১২০ ডলার করে বোনাস দেয়। আইডি প্রতি ১২০ ডলার করে পাওয়া বোনাস রিয়াদ তার পকেটে ঢুকিয়ে নিজের পকেট ভাড়ি করেছেন ঠিক তবে দ্বিগুন লাভের লোভে পরে খোলা আইডির মালিকের পকেট হয়েছে ফাঁকা।

রিয়াদের মাধ্যমে ছোট বড় বিভিন্ন অঙ্কের একশো’রও অধিক ব্যক্তি এমটিএফই ট্রেডিং অ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন। তবে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাননি এক পয়সাও উল্টো মুলধন হয়েছে গায়েব। এমনকি রিয়াদের পাতা এমটিএফইর ফাঁদে পা দিয়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকাও খুইয়েছেন কেউ কেউ! বাংলাদেশে এমটিএফইয়ের কোন বৈধতা নেই। এমনকি নেই বৈধ কোন অফিসও। লাভের আশায় লোভে পরে জমানো টাকা বিনিয়োগ করে মুনাফাহীন মুলধন খুইয়ে অনেকে নিঃস্ব হলেও এমটিএফই নিষিদ্ধ হওয়ায় আইনি জালে ফাঁসার ভয়ে কেউই আইনের দারস্থ হননি। এমনকি এ নিয়ে মুখ খুলতেও রাজি নন তারা।

গত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার আন্দলোনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ক্ষমতা হারায় এমপি মহিউদ্দিন ও তার পুত্র আনিসুর রহমান রিয়াদ। ক্ষমতাচ্যুত পিতা পুত্রের ভয়ে প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে অনিহা করেন। তবে সম্প্রতি ভুক্তভোগীদের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছেন।

 

তারা বলেন, এমপির ছেলে রিয়াদ এমটিএফইর জেলার সিইও পরিচয় দিয়ে তার বাড়ীতে সভা ডাকেন। সেখানে একশো জনের বেশী মানুষকে ডেকে তার নিজের রেফারেন্সে যার যার মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল এড্রেস দিয়ে নিজে হাতে তাদের আইডি খুলে দেন এবং তিনি সে সময় বিনিয়োগ করা ডলারে মুনাফা আসছে বলে সবাইকে লোভ দেখান। যারা রিয়াদের কথায় আইডি খুলেছে তারা সবাই বিভিন্ন অঙ্কে সেখানে বিনিয়োগ করেছিলো এবং রিয়াদ সেই টাকা ডলারে কনভার্ট করে এমটিএফইতে বিনিয়োগ করে। কিন্ত এর কিছু দিন পর এমটিএফই অ্যাপে আমাদের বিনিয়োগ করা ডলারের ব্যালেন্স মাইনাস (ঋণাত্মক) দেখায়। রিয়াদ অনেককে ক্ষমতার ভয় দেখিয়েও আইডি খুলতে বাধ্য করে। সে সময় কার্যক্রম পরিচালনা জন্য সে নিজে এডমিন হয়ে একটি গ্রুপও খোলে। ওই গ্রপে কয়েকজন মেম্বারসহ রাজনৈতিক বেশ কয়েকজন নেতা ও আমরা সবাই ছিলাম।

 

তবে সরকার পতনের পর রিয়াদও গায়েব সাথে আমাদের টাকাও গায়েব। লাভের আশায় বিনিয়োগ করে খোয়ানো টাকা ফেরত চাওয়ার ব্যপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, তারা বাপ পুতে উপর দিয়ে যতটা না ভদ্র তার চেয়ে হাজার গুন নিকৃষ্ট। যদি আমরা আমাদের টাকা ফেরত চাই তাহলে তারা আমাদের যে কোন ভাবেই ক্ষতি করতে পারে। তাই টাকা গেছে যাক,কিন্তু আমাদের কোন ক্ষতি যাতে না হয় সে জন্যই কারো কাছে কিছু বলিনা। উল্লেখ্য,ওই গ্রুপের সদস্যদের কথোপকথন ও বার্তা চালাচালির স্ক্রিনশট এবং রিয়াদের মাধ্যমে এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর এ-বিষয়ক কথোপকথনের স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

এ ব্যপারে অভিযুক্ত আনিসুর রহমান রিয়াদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি!.