

হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রেমের অপরাধে সজীব (১৭) নামে এক কিশোরকে ঘরে আটকে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার মুখে গামছা গুজে দিয়ে তার দু’হাতে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে চেতনানাশক ইন্জেকশন দেয়া হয়। এরপর তাকে সাইকেলের চেন এবং লাঠিসোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেধড়কভাবে পেঠানো হয়েছে। এতেই থেমে থাকেনি দুর্বৃত্তরা, কিশোর সজীবকে নারকীয়ভাবে কষ্ট দিতে গিয়ে তার হাত ও পায়ের আঙ্গুল, পায়ের পাতার নীচে এবং পুরুষ লিঙ্গে বারংবার সুঁচ ফুটিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ১৫জুন কিশোরের পরিবারের পক্ষ থেকে চিলমারী থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৫/৬ জনসহ লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও মামলা নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।
কিশোরের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়, চিলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর শাকাহাতি ঢুষমারা এলাকার আলমগীর হোসেনের (৪৬) ছেলে আশরাফুল ইসলাম সজীবের সাথে পার্শবর্তী বোলমন্দিয়ার খাতা চরের সাইফুল ইসলামের কিশোরী কন্যার (১৪) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা মেনে নিতে না পেরে কিশোরীর পিতা সাইফুল ইসলাম যোগসাজস করে গত ৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেয়ের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেমিক সজীবকে বাড়ীর কাছে আসতে বলে। কিশোর সজীব মেয়েটির সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে নিয়ে বেরুবার সময় সাইফুল ইসলামসহ তার ১২/১৩জন সঙ্গীয় লোক তাকে আটক করে। এরপর তার হাত ও চোখ বেঁধে পার্শবর্তী চর গয়নার পটল এলাকায় একটি নির্জন ঘরে আটকে রেখে মুখে গামছা গুজে দিয়ে খুন-জখমের উদ্যোশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানবিকভাবে নির্যাতন করে। ৯জুন থেকে ১০জুন পর্যন্ত তার উপর নির্যাতন করে মৃত ভেবে ফেলে যায়। পরে লোক মারফৎ খবর পেয়ে মুমুর্ষু অবস্থায় সজীবকে তার পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় কিশোর সজীবের বাবা আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে গত ১৫ জুন চিলমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। পুলিশ থেকে প্রথমে বিভিন্ন নির্যাতনের ডকুমেন্ট চাওয়া হলে সেগুলোও নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু বর্বরোচিত এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা রেকর্ড না করে উল্টো কোর্টে মামলা করার জন্য পরামর্শ প্রদান করে।
অভিযুক্তদের মধ্যে ৬নং অভিযুক্তকারী রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছেলে-মেয়েকে আটক করে সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে মাতব্বররা তাদেরকে শাসন করেন। মারপীটের বিষয়ে মেয়ের পরিবারের লোকজন জড়িত বলে তিনি স্বীকার করেন।
মামলার বিষয়ে চিলমারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম জানান, মামলা নথিভুক্ত করতে হলে এসপি মহোদ্বয়ের অনুমোদন লাগে। এসপি মহোদ্বয় এই মামলার বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি এজন্য মামলাটা নেয়া হয়নি।