

হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম: স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দুর্ভোগ কাটেনি বারোমাসিয়া নদী পাড়ের ৮ গ্রামের ১০ হাজার মানুষের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনো ভাঙ্গা বাঁশের সাঁকোয় কিংবা কখনো গলা পানিতে সাঁতরিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে তারা। অনেক আশ^াসের পরেও মেলেনি কাংখিত স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণের দাবিটি। ঘটনাটি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী গ্রামের নবিদুলের ঘাটের।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধরলা নদীর শাখা নদী বারোমাসিয়া নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন কিশামত শিমুলবাড়ি, চর গোড়ক মন্ডল, ঝাঁউকুটি, পশ্চিম ফুলমতি, হক বাজার, খারুয়া ও চর খারুয়া গ্রামে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার মানুষ একটি ব্রীজের অভাবে প্রতিবছর চরম দুর্ভোগের মধ্যে বারোমাসিয়া নদী পারাপার করে। তাদের এই দুর্ভোগে মেলেনি সরকারি কোন সহযোগিতা।
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন থেকে অনেক আশ্বাস দেয়া হলেও কাংখিত স্থায়ী ব্রীজ নির্মান এখনো অধরাই রয়ে গেছে। ফলে প্রতিবছর স্থানীয়রা চাঁদা তুলে ১২০ ফিট দৈর্ঘ্যরে নদীর উপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার করে। এতে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। প্রতিবছর বাড়ছে এই ব্যয় কিন্তু কোন বাজেট না থাকার অজুহাতে প্রশাসন থেকে দেয়া হয় না কোন আর্থিক সহযোগিতা।
ঝাউকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল হক জানান, নদীর অপর পাড়ে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাই স্কুল এবং ৩টি বাজার রয়েছে। প্রতিদিন এই নদীর উপর দিয়ে শত শত মানুষ পারাপার করে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থী ও হাট-বাজার করতে আসা ব্যবসায়ীরা ভীষণ ভোগান্তির মধ্যে পরে যান।
কাঁধে সাইকেল নিয়ে পারাপার করতে আসা ঝাউকুটি গ্রামের হবিবর রহমান জানান, সাঁকোটি মেরামত না করায় ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছি। কারণ নদীতে একগলা পানি। যাচ্ছি শশুরবাড়ীতে দাওয়াত খেতে। কাপড় ভিজে গেলে কেমন হবে তাই রিক্স নিয়ে পার হচ্ছি।
সন্তানকে কোলে নিয়ে সাঁকো পাড় হতে আসা চর গোড়ক মন্ডলের কদভানু জানান, খুব ভয় ভয় করি পাড় হবার নাগছি। ছওয়াটাও খুব ভয় পাইছে! চেয়ারম্যান মেম্বাররা তো পালাইছে। ব্রীজ ভাল করবে কাঁই!
সাঁকো মেরামত দেকভাল করতে আসা স্থানীয় অধিবাসী জমসেদ আলী জানান, এই সাঁকো পাড় হতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী সাইকেলসহ নদীতে পরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরেন গর্ভবতী ও অসুস্থ্য রোগীরা। সাঁকো নষ্ট হওয়ায় এবং নদীতে পানি থাকায় তাদেরকে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দুরত্ব পথ ঘুরে ফুলবাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। যা সময় সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
এলাকার ওবায়দুল ও মাঈদুল জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বরাদ্দ না থাকায় নদীর দু’পাড়ের মানুষের কাছে বাঁশ সংগ্রহ করে পূণ: মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রায় ৬ শতাধিক বাঁশ সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু বিনাশ্রমে মানুষ কতদিন কাজ করবে। একারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন আবারো চাঁদা তুলে শ্রমিকদেরকে দিয়ে সাঁকো নির্মানের কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য দরকার প্রায় লক্ষাধিক টাকা।
এ ব্যপারে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, ইউনিয়ন পরিষদে কোন বরাদ্দ নেই। এখন স্থানীয়দের মাধ্যমে কাজটি শেষ করতে হবে। আর স্থায়ী ব্রীজ নির্মানের জন্য উপজেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেও কোন সাঁড়া পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাঁশের সাঁকো পূণ:নির্মানের জন্য বর্তমানে কোন বরাদ্দ নেই।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনুমা তারান্নুম জানান, বিষয়টি আপনার কাছে জানলাম। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।