• আজ ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাজলী যেন আরেক ‘আসমানী’

| নিউজ রুম এডিটর ৮:১১ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ৭, ২০২১ লালমনিরহাট, সারাদেশ

আজিজুল ইসলাম বারী,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও’। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ওই আসমানীকে দেখতে হলে যেতে হবে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুরের লতাবর গ্রামে।

লাজনী খাতুনের ঘর বলতে ক্ষেতের মাঝখানে উপরে কয়েকটি টিন আর চারপাশে বাঁশের ছ্যাচা দিয়ে কোনরকম ঘেরা ভাংগা একটি ঝুঁপড়ি। আসবাবপত্র বলতে বাঁশের চকি রান্নার দু’একটা বাসন। নেই শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় লেপ বা কাঁথা। এই ঘরেই দিনযাপন করছে লাজলী।

লাজলী খাতুন (২৮) ওই গ্রামের মৃত আব্দুস সালাম (সালু)র তৃতীয় সন্তান। পরিবারের কারোর সাথেই তাঁর যোগাযোগ নেই। খোঁজও নেয়না কেউ। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন দিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে মেয়েটি।

এলাকাবাসী জানায়, প্রায় ৮ বছর আগে লাজলীর বাবা আব্দুস সালাম (সালু) মারা গেলে পরিবারে দুর্দিন নেমে আসে। ৪ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে লাজলী তৃতীয়। তিন বোনের বিয়ে হলে তাঁরা স্বামীর সংসারে চলে যায়। বিদেশ যাওয়া কথা বলে বড়ভাই গ্রামের ঘরবাড়ি জায়গা জমি সব বিক্রি করে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে পারি জমান ঢাকায়। লাজলী এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। এক সময় গ্রামে একটি ছেলেকে ভালবেসে না পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত। একপর্যায়ে লালমনিরহাট শহরে পুলিশ তাকে সন্দেহবসত আটক করে জেলহাজতে পাঠান। এক বছর হাজতে থাকার পর পরিবারের লোকজন খোঁজ পেয়ে তাঁকে বাড়িতে এনে চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ্য করে তুলেন।

লাজলীর মা আয়শা বেগমও একসময় কাজের সন্ধানে ছোট ছেলে ও লাজলীকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে গিয়ে আয়শা বিভিন্ন বাসায় ঝিয়ের কাজ করেন আর লাজলী নেয় গার্মেন্টসের চাকুরি। পরে লাজলী ঢাকা থেকে গ্রামে চলে এসে চাচার বাড়িতে কিছু দিন থাকার পর মায়ের অংশের সামান্য জমির উপর একটি টিনের ঝুঁপড়ি তৈরি করে সববাস শুরু করেন। প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে তাঁর দিন চলে। সে কাহারও কাছে যায়ও না খায়ও না। সব সময় একা একা থাকে। মন চাইলে এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। তাঁর মা, ভাই, বোনরা তাঁর খোঁজও নেয় না। এভাবেই কষ্টে আছে সে।

লাজলী খাতুন জানান, চাচার বাড়িতে ছিলাম। সেখানে আর কত থাকি। এখানে অনেক কষ্টে পড়ে আছি। আমার মা ঢাকা থেকে এসে বাড়ি করবে। তাই ঘরটি করে এখানে আছি।

নাজলীর চাচা নুরুজ্জামান বলেন, লাজলী খাতুনের বাবার মৃত্যু পর তার ভাই বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সব জমি বিক্রি করে ঢাকায় চলে যায়। এর পর তাঁর মাও তাঁকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। লাজলীর মাথার সমস্যার কারনে হাজতে ছিল একবছর। ঢাকা থেকে আসার পর আমার কাছে কিছু দিন ছিল। এরপর তাঁর মায়ের জমিতে নিজেই টিনের চালা তৈরি করে বসবাস শুরু করছে।

চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অসহায় অবস্থা এবং মানসীক সমস্যার কারনে লাজলী খাতুনকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেয়া হয়েছে। সে এলাকায় একটি টিনের চালায় বসবাস করছে বিষয়টি জেনেছি। ভবিষ্যতে তাঁকে আরও সহায়তা করা হবে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি মেয়ে টির বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমারা তাঁকে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করব।