ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার সময় পার হয়েছে এক সপ্তাহ। সাত দিনে ইউক্রেনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া। রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন লাখ লাখ মানুষ। রাশিয়ার ওপর বাড়ছে বহির্বিশ্বের চাপ, যেন বন্ধ হয় সামরিক অভিযান। তবে পুতিন অনড়, এ যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাতছানি।
আশঙ্কা ছিল, সত্যি হলো। ন্যাটোতে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার মধ্যে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন তিনি। এই সংকটের জন্য ন্যাটোকে দায়ী করেন পুতিন। জল, স্থল ও বায়ু, তিন দিক থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের সূচনা করে রাশিয়া। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামরিক আইন জারি করেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয় রাশিয়া একের পর এক বিমান হামলা চালায় ও গোলাবর্ষণ করে। ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগ বলছে, হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। যদিও হতাহতের সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় বলেছে, হামলায় ১৩ শিশুসহ ১৩৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো ঐতিহাসিক পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি গ্রহণ করেছে। ফলাফল, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পারমাণবিক হামলা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনকে একাই লড়তে হবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিকল্প হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এমন যখন পরিস্থিতি, তখন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে যাচ্ছে। এই যুদ্ধে তৃতীয় কোনো দেশ অংশ নিলে বেধে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যা হবে অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক এবং ভয়াবহ। কারণ, সেটি হবে পারমাণবিক যুদ্ধ। এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে। এমনটাই মনে করেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গণমাধ্যম বলছে, প্রথমবারের মতো যুদ্ধরত কোনো দেশে অস্ত্র ক্রয় ও সরবরাহের জন্য অর্থায়ন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপের বাজার থেকে রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলো। এমনকি রাশিয়ার রিজার্ভের ৬৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যবহারের ক্ষমতাও সীমিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার বৃহৎ ব্যাংকগুলো বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থায় গভীরভাবে জড়িত। ফলে রাশিয়ার ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে ব্যাহত করতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সুইজারল্যান্ড নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা রাশিয়ার সব ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এমনকি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর হিসাব ব্লক করা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ নয়, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠন ফিফা এবং উয়েফা রাশিয়ার দলগুলোকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে স্থগিত করেছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়া ও বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে। যদিও রাশিয়া এসব নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা করছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবি আদায় করে তবেই থামবেন পুতিন।
আগে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ইউক্রেন ‘খবর’ হতো কালেভদ্রে। এখন প্রচারমাধ্যম রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ-উন্মাদনায় ভাসছে। তবে ইউক্রেন নিয়ে পুতিন বলেন, ইউক্রেন কোনো দিনই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না। এটি ‘প্রাচীন রুশ ভূখণ্ড’। বর্তমানে যা নব্য নাৎসি ইহুদিবাদীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন- উভয়েরই প্রধান ধর্ম অর্থোডক্স খ্রিস্টান। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং খাদ্য- এগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। রুশ এবং ইউক্রেনীয়- উভয় জনগোষ্ঠীই দাবি করে থাকে কিয়েভই হচ্ছে তাদের আধুনিক সংস্কৃতি, ধর্ম ও ভাষার মূল কেন্দ্র। তবে এখন যা ইউক্রেন- তার ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে এই যে গত এক হাজার বছরে তাদের সীমান্ত, ধর্ম ও জনগোষ্ঠীর প্রকৃতি বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে আছে কৃষিজমি, বনভূমি আর কৃষ্ণসাগর হয়ে নৌচলাচলের পথ। তাই বিভিন্ন সময় বহু যোদ্ধা জনগোষ্ঠীর দখলে ছিল এই এলাকাটি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে অনেক রুশই দেখে থাকেন তাদের জাতির ‘ছোট ভাই’ হিসেবে। কারণ- সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল ইউক্রেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইউক্রেনীয়দের জাতীয়তাবাদ এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ের রাজনীতি অতীতে রাশিয়াকে নানা সমস্যায় ফেলেছে। যেমনটা ফেলছে এখনো। ইউক্রেনে রুশপন্থি সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি একজন শিল্পী। তবে তিনি একজন কট্টর ইহুদি। জেলেনস্কি ইউক্রেনের সমস্যা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, আরব বিশ্বে ইসরায়েল যেমন মজলুম, রাশিয়ার পাশে ইউক্রেন তেমনি। তাই ভ্লাদিমির পুতিন জেলেনস্কিকে ইহুদি ও নাৎসিবাদী বলে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়ায় এসব পপুলিস্ট ও ইউফোরিক নেতা দেশের মানুষকে সীমাহীন কষ্ট দেয়।
অপ্রত্যাশিত, রুশ বাহিনী ভাবতেই পারেনি ইউক্রেনীয়রা রুশ অভিযানের আগে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। শহরের উপকণ্ঠে ব্যাপক হামলার ঘটনা, তবুও হামলা প্রতিহত করতে কিয়েভে ইউক্রেনের সেনাদের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।
দেশের প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে সাধারণ লোকজন। কেউ কেউ আবার দিনরাত তৈরি করছেন ককটেল ও পেট্রোলবোমা। দেশটির অনেক মদের দোকানেও তৈরি হচ্ছে ককটেল। গণমাধ্যম সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজ দেশের নাগরিকদের হাতে তুলে দিয়েছে ১৮ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র। এমনকি, রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে ইউক্রেনের ৮০ হাজার নাগরিক দেশে ফিরেছেন।
রাশিয়ার বাহিনীকে থামাতে ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জাম কিয়েভে প্রবেশ করছে। দেশটির সাধারণ বাসিন্দারা যখন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন অস্ত্র হাতে দেখা গেছে ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেনকোকেও। সম্প্রতি এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনের ৭০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, তারা রুশ বাহিনীকে রুখে দিতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে দেখা যায়, শত্রু সেনাদের গতিবিধি সরকারকে জানাতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানায় ইউক্রেন প্রশাসন। ইউক্রেনের বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই যুদ্ধে তারাই জিতবে।
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বারবারই বলে আসছিল যে কোনো সময় যুদ্ধ-সংঘাতে জড়াবে রাশিয়া। তাই হলো। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রথম সপ্তাহ শেষে দেখা যাচ্ছে, ভ্লাদিমির পুতিন যেমনটা ভেবেছিলেন বা তার জেনারেলরা যেরকম ধারণা করেছিল, তার চেয়েও অনেক শক্তভাবে পাল্টা লড়াই ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেন। তবে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খেরসন শহরের পর, রুশ বাহিনীর হাতে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেরও পতন হয়েছে। এবার বাকি কেবল রাজধানী কিয়েভ।
যেখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস। রাশিয়ার হামলার মূল লক্ষ্যবস্তু রাজধানী কিয়েভ। এবার সেই রাজধানীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ৪০ মাইল দীর্ঘ একটি রুশ সামরিক বহর। যদিও ইউক্রেন সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষ গড়ে তুলেছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবুও আমেরিকা ও ইউরোপের শঙ্কা, খুব বেশিদিন টিকবে না কিয়েভের এই প্রতিরোধ। কেননা, রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে দফায় দফায় হামলা করা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রবল হামলা চালাবে রুশ সামরিক বহর।
আশঙ্কা যাই থাকুক, রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের হিরো- ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া বিশ্বের মানচিত্র থেকে ইউক্রেনকে মুছে ফেলতে চাইছে। মুছে ফেলতে চাইছে ইউক্রেনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি। রুশ সামরিক বহরকে হুঁশিয়ারি করে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, বোমা ও রকেট ছুড়ে ইউক্রেনকে মুছে ফেলা যাবে না। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় বলেছে, রাশিয়ার হামলায় ১৩ শিশুসহ ১৩৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কিয়েভের বাসিন্দাদের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ভাসিলকিভের দিকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেবে রুশ সেনারা। পশ্চিমারা এই সতর্কতায় ধরে নিয়েছেন, রুশ সামরিক বহর দ্রুত কিয়েভের অভ্যন্তরে হামলা চালাবে। সময় এখন বলে দেবে, কিয়েভ টিকে থাকবে? নাকি ইউক্রেনের পতন হবে।
কেন এই যুদ্ধ? রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে, দখল নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিবেশী দেশ দখলের এত বড় সিদ্ধান্ত শুধুই নিরাপত্তা ইস্যু জড়িত? নাকি নেপথ্যে আরও কারণ থাকতে পারে!
উত্তর পাওয়া গেল- ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে। জানা গেছে, গম উৎপাদনে শুধু শ্রেষ্ঠত্বই নয়, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে ভরপুর ইউক্রেন। ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাসের মজুদও আছে দেশটিতে। গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা গেছে, ১.০৯ ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাসের মজুদ রয়েছে ইউক্রেনে। গণমাধ্যম সূত্র বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে মিলে ইউরোপের ৫০ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা মেটায় ইউক্রেন। পাশাপাশি কয়লার মজুদে বিশ্বে সপ্তম ও ইউরোপে দ্বিতীয় ইউক্রেন। যার পরিমাণ প্রায় ১১৫ বিলিয়ন টন। এই কয়লার ৯২ শতাংশ দোনবাসে, যার দুটি অংশ লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক। ইউক্রেনে হামলার আগে অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। আকরিক লোহার রপ্তানিকারকদের তালিকায় বিশ্বে পঞ্চম ইউক্রেন। গুরুত্বপূর্ণ খনিজের আরেকটি লিথিয়াম। ইউক্রেনের কিরোভোরাদ, দোবরা ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে রয়েছে লিথিয়ামের খনি। এ ছাড়াও বিশ্বের ২০ শতাংশ টাইটানিয়ামের মজুদ রয়েছে দেশটিতে। আছে ম্যাঙ্গানিজ, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম এবং বিটুমিন। তাই বোঝাই যাচ্ছে, যে কোনো শক্তিশালী দেশই প্রাকৃতিক সম্পদের এই প্রাচুর্য পেতে চাইবে।
বাতাসে বারুদের গন্ধ। বোমা হামলা ও রকেটের আঘাতে জর্জরিত ইউক্রেনের অনেক অঞ্চল ও শহর। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার সূচনা, এরপর থেকে দফায় দফায় হামলা ও সাঁড়াশি অভিযান।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কেউ পাড়ি দিচ্ছে সীমান্ত। কেউবা আবার বিমানে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে যে, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের আকাশসীমা। তবে বাকি রইল সীমান্ত পাড়ি দেওয়া। গণমাধ্যম সূত্র বলছে, ইউক্রেন থেকে অসংখ্য মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, বেলারুশ, রাশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে। রাশিয়ার অভিযানের শুরুর পর থেকে সীমান্তে নেমেছে মানুষের ঢল। প্রতিবেশী দেশগুলোও তাদের জন্য চালু করেছে ফ্রি ট্রানজিট ভিসা। তবে যারা সীমান্তে পৌঁছাতে পারেনি কিংবা বিমানে যাওয়ার পথ খুঁজছে, তারা দিনরাত পার করছে নানা শঙ্কা আর আতঙ্কে। ইউক্রেনিয়ান, আফ্রিকান, আরব, বাংলাদেশি অনেক নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোয়। যুদ্ধ পরিস্থিতি দানা বাঁধার সময়ই ইউক্রেনে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস সে দেশে থাকা নাগরিকদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিল। তাতে ইউক্রেন ছাড়তে বাধ্য হন ইউক্রেনিসহ ১০ লাখ মানুষ।
ইউক্রেন আক্রমণের অষ্টম দিন ৩ মার্চ। দেশটির রাজধানী কিয়েভসহ একাধিক শহরে চলছে লড়াই। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এত বড় শরণার্থী সংকট এর আগে দেখেনি ইউরোপ। মাত্র এক সপ্তাহে দশ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। বাড়িঘর, সম্পত্তি সব হারিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ইউক্রেনের সীমান্তে নেমেছে শরণার্থীদের ঢল। দেশ ছেড়ে পালানো শরণার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে। প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতেই ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া, বেলারুশসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এমনকি সামরিক অভিযান চালানো রাশিয়াও শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের সময় ১৩ লাখ মানুষ দেশান্তরী হয়েছিল। মাত্র এক সপ্তাহে প্রায় কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ শুধু ইউক্রেন থেকেই শরণার্থী হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার আশঙ্কা, এই সংঘাত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে আর তাদের ত্রাণের প্রয়োজন হবে। জাতিসংঘ বলছে, লড়াই আরও দীর্ঘায়িত হলে- ইউরোপের অন্যান্য দেশ নানামুখী ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এদিকে লড়াই বন্ধ হওয়ার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। উল্টো লড়াই আরও তীব্র হয়েছে।