মোঃবুলবুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : নির্মাণের ৪ বছরে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চর গোড়ক মন্ডপ গুচ্ছগ্রাম। চারদিকে ধরলা নদী বেষ্টিত হওয়ায় যারা বসবাস করছে তারাও নাগরিক সুবিধা, রাস্তা ঘাট, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে রয়েছে দূর্ভোগে ও অনেকে ছেড়েছে ঘর। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার গাফিলতি আর অনিয়মে কোন কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প। এছাড়াও নির্মাণকৃত জমি অধিগ্রহণের টাকা জমির মালিকরা পায়নি বরং উল্টো হুমকির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা, দায়সারা জবাব পিআইওর। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে বাসযোগ্য করে লোকজন নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।
জানা গেছে, সীমান্ত ঘেঁষা ও চারদিকে ধরলা নদী বেষ্টিত তার মধ্যেই স্থাপিত চর গোড়ক মন্ডপ গুচ্ছগ্রাম। ২০১৮সালে ৫একর জমিতে ৩৫৩ মে:টন চালের বরাদ্দে নির্মিত হয় এটি। এখানে ৬০টি পরিবার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১৭টি। তার মধ্যে কুড়িগ্রামে বাসিন্দা একটি পরিবার। বাকিরা লালমনিরহাটের। বাসিন্দারা বলছেন নাগরিক সুবিধা কিছুই নেই গুচ্ছগ্রামে। নেই চলাচলের রাস্তা। বর্ষা এলে চারদিক ভরে যায় পানিতে। বালু দিয়ে ঘরের মেঝে করায় থাকা যায় না ঘরে। তাই আলাদা ঘর করে থাকতে হচ্ছে তাদের। গুচ্ছগ্রাম থেকে ধরলা নদী পাড় হয়ে চর গোড়ক মন্ডপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার যেতে পাড়ি দিতে হয় ৩কিলোমিটার ও সময় লাগে ২ঘন্টা। নাগরিক সুবিধা ও রাস্তাঘাট, বিশুদ্ধ পানি, বিদুৎ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানববেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
চর গোড়ক মন্ডপ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা গেন্দা মন্ডলের স্ত্রী সামিনা বেগম ও তার স্বামীর সাথে গুচ্ছগ্রামের ঘরে যাওয়ার পথে হয় দেখা। সামিনা বেগম জানায়, ধরলা নদীর ভাঙনে সর্বস্বত্ব হারিয়ে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্ত গুচ্ছগ্রামের ঘরের ভিতরে বালু, রাস্তাঘাট, বিদুৎ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। ছেলে-মেয়েরা অসুস্থ হলে যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারি না। পরে সামিনা বেগমের ঘরে গিয়ে দেখতে পাই তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে শুধু করলা ভাজি দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সামিনা বেগমের স্বামী গেন্দা মন্ডল জানায়, ধরলা নদী পার হয়ে বাজারে যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে। টাকা পয়সা নাই বাজার করতে পারি না। ঝড়-বৃষ্টির দিনে ভয় লাগে কখন যে ঘর বাতাসে উড়ে যায়।
আজাহার আলী জানায়, সংসারে স্ত্রী গোলাপী বেগম ও এক সন্তান। দিনমুজুরের কাজ করে অনেক কষ্টে সংসার চালাই। বালুর মধ্য ঘর টিন খুলে পড়ছে।
মৃত ছামছুল হকের স্ত্রী আনেচা বেওয়া জানায়, ১০বছর আগে স্বামী মারা যায়। ধরলা নদী ভাঙনে সবকিছুই হারিয়েছি। আমি দিনমজুরের কাজ করে তিন সন্তানকে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছি। এ রকম সবকটি পরিবারের একই অভিযোগ।
নাগরিক সুবিধা না থাকায় গুচ্ছগ্রাম ছেড়েছেন অধিকাংশ উপকারভোগী পরিবার। বর্তমানে ২০পরিবার বাস করলেও বিভিন্ন সমস্যায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
প্রকল্প সেক্রেটারী সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান (হাবিব) জানান, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দূরে রেখে নিজেই নামমাত্র কাজ করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এ কর্মকর্তা। ফলে বসবাসের উপযোগি হয়নি গুচ্ছগ্রামটি। কেউ আসতে চায় না সেখানে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের টাকা আমাকে কিংবা অন্যদের সঠিকভাবে দেয়া হয়নি। জমির টাকা চাইতে গেলে পিআইও সাহেব দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্তের দাবি, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করে সঠিক ডিজাইনে গুণগতমান বজায় রেখে কাজ করা হয়েছে। তবে বসবাস অনুপযোগি হওয়ার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস জানান, নির্মাণ তার সময়ে না হওয়ায় সে সময়ের অনিয়ম আছে কিনা তিনি জানেন না। ওই গ্রচ্ছগ্রামে লোকজনদের বাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।