• আজ ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২৪ অক্টোবর বিশ্ব উন্নয়ন তথ্য দিবস

| নিউজ রুম এডিটর ৬:৩৭ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ২৪, ২০২২ লিড নিউজ

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : আজ সোমবার ২৪ অক্টোবর, বিশ্ব উন্নয়ন তথ্য দিবস ২০২২।জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছরের ২৪ অক্টোবর এ দিনটি বৈশ্বিকভাবে পালিত হয়ে আসছে।উন্নয়নের পথে অন্তরায় সমস্যাগুলোর সমাধানে বিশ্বজনতার মতামত বিবেচনা করা বিশ্ব উন্নয়ন তথ্য দিবসের লক্ষ্য। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মজবুত করাও দিবসটির উদ্দেশ্য।তবে এই দিবস ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নে সমস্যাবলী ও এর সমাধানের নিমিত্তে আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার প্রতি জনমতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ।অন্যদিকে জাতিসংঘ নীতিগতভাবে জাতিসংঘ দিবসকেই উন্নয়ন তথ্য দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে, কারণ ১৯৭০ সালের ২০ অক্টোবরই জাতিসংঘ ২য় উন্নয়ন দশকের জন্য আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন কৌশল গৃহীত হয়।

সাধারণ অধিবেশনের উপলদ্ধি এই যে, সর্বত্র বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তথ্য প্রচার, জনমত সৃষ্টি, উন্নয়ন সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং উন্নয়ন সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী অস্ত্র সংঘাতের ভয়াবহতা ও বেদনাময় স্মৃতির প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংকল্পের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে জাতিসংঘের বেশির ভাগ কার্যক্রম বিস্তৃত। অনেকের-ই ভুল ধারণা আছে যে, জাতিসংঘ শুধু শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত। অথচ আজকের দিনে জাতিসংঘের অধিকাংশ তৎপরতা উন্নয়ন ও মানবিক সহযোগিতার কাজেও নিবেদিত। পৃথিবীর প্রায় ১৩৫টি দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রতি বছর আড়াই হাজার কোটি ডলারেরও বেশি তহবিল জুগিয়ে থাকে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ উন্নয়নশীল দেশের অধিবাসী। আর তাই জাতিসংঘের বেশির ভাগ কাজ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। কেননা, এসব দেশের মানুষ অভাব-অনটন, ক্ষুধা, অশিক্ষা, রোগ-শোক ইত্যাদি ঝামেলার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করে। জন্মলগ্ন থেকেই জাতিসংঘ তার সনদের ৫৫ ধারার অর্থাৎ উচ্চমানের জীবনযাপন নিশ্চিত করা, বেকার সমস্যা দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। জাতিসংঘ সহায়তা করে এসেছে গরিব দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য। ১৯৬০ সাল থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশসমূহের সাহায্যে নেওয়া বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি ও কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য সাধারণ পরিষদ পর পর চারটি জাতিসংঘ উন্নয়ন দশকের কথা ঘোষণা করেছে। ষাটের দশকের শুরু থেকে ভারসাম্যপূর্ণ ও সুষম উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ উন্নয়ন প্রসারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে। এই উন্নয়ন প্রয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিফলিত হয় ১৯৬৯ সালে, সমাজ প্রগতি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে দেওয়া সাধারণ পরিষদের ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এই ঘোষণায় বলা হয়, সবার জন্য কাজ করার অধিকার নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং সম্মিলিতভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, উৎপাদনশীল কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা, বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও চাকরির মানোন্নয়ন, সবার জন্য কাজের সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করা, স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করা ও নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা কোনো ধরনের ভেদাভেদ ছাড়া শ্রমের ন্যায়সংগত পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা প্রভৃতি। জাতিসংঘের ঘোষিত প্রথম উন্নয়ন দশক ছিল ১৯৬১-১৯৭০। দ্বিতীয় দশক ঘোষণা করা হয় ১৯৭০-১৯৮০। দ্বিতীয় দশকের উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল ন্যায়পরায়ণতা ও সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিমূল সমতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, অভিন্ন স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা নির্বিশেষে রাষ্ট্রে সহযোগিতা যা নির্মূল করবে অসমতা অন্যায়, দূর করবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ব্যবধান।আমরা জানি যে তথ্যের আবদ্ধতায় জনসাধারণ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। ফলে স্থবির হয়ে পড়ে একটি দেশের উন্নয়ন। নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য তথ্য একটি দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করে।এটি দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া সব দেশেই কার্যকর তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োজন রয়েছে। এ অধিকার ছাড়া আইনি বাধা পেরিয়ে সব তথ্য জনসাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। অবাধ তথ্যপ্রবাহের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধাও বিস্তৃত হওয়া জরুরি।তাই তথ্য প্রাপ্তি, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও বিতরণে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।জাতিসংঘ সর্ম্পকিত যাবতীয় তথ্যাদি সাধারণ মানুষের কাছে পৌচ্ছে দেওয়াই এই দিবসটি পালনের মূল কারণ।পৃথিবীতে পদার্পণের পর থেকেই মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে ও জীবনমান উন্নয়নের জন্যে সচেষ্ট হয়েছে ৷ এ পৃথিবীকে বশীভূত করার ও প্রকৃতিকে জয় করে একে মানুষের কল্যাণে আরো ভালোভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যেই কৃষি ও শিল্প-বিপ্লবগুলো সংঘটিত হয়েছিল ৷ বর্তমানে উন্নয়নে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এমন সব দেশ বা স্বল্পন্নোত দেশগুলোতে উন্নয়ন নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে ৷ আজকাল উন্নয়ন বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নীতিমালার মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে ৷ কিন্তু উন্নয়ন বলতে কি বোঝায় এবং কোন কোন মানদন্ড বা দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তা খুব দ্রুত অর্জন করা সম্ভব? উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, অগ্রগতি- এ শব্দগুলো প্রায়ই বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংক্রান্ত লেখালেখি বা আলোচনায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ অধিকাংশ অর্থনৈতিক গবেষণায় এ শব্দগুলো অনেকটা সমার্থক শব্দ হিসেবে পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়৷ প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন এ দুই শব্দের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন৷ প্রবৃদ্ধি বলতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক ও পরিমাণগত কিছু চালিকাশক্তি বা মানদন্ডকে বোঝানো হয় ৷ যেমন, মাথাপিছু আয়, গড় জাতীয় আয় বা উৎপাদন ইত্যাদি৷ অন্যদিকে উন্নয়ন বলতে এইসব অর্থনৈতিক সূচকের অবস্থা বিবেচনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত পরিবর্তনকেও বিবেচনা করা হয়৷ অন্য কথায় উন্নয়নের পরিধি আরো ব্যাপক এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ার রয়েছে বহুমাত্রিক দিক বা বিভাগ৷ একদল অর্থনীতিবিদ মনে করেন, সম্পদের সুষম ও ন্যায্য বন্টন, দারিদ্র বিমোচন, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, কাঙিখত শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং জনকল্যাণ-এসবই হলো উন্নয়নের প্রধান কিছু সূচক৷ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মাইকেল টডারো বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো সমাজের সকল স্তরের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন৷ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবাদে এই উন্নতি ঘটে থাকে।আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যান সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন…
আমরা জানি যে তথ্যের আবদ্ধতায় জনসাধারণ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। ফলে স্থবির হয়ে পড়ে একটি দেশের উন্নয়ন। নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য তথ্য একটি দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করে।

এটি দুর্নীতি রোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা ছাড়া সব দেশেই কার্যকর তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োজন রয়েছে। এ অধিকার ছাড়া আইনি বাধা পেরিয়ে সব তথ্য জনসাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। অবাধ তথ্যপ্রবাহের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধাও বিস্তৃত হওয়া জরুরি।তাই তথ্য প্রাপ্তি, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও বিতরণে আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।জাতিসংঘ সর্ম্পকিত যাবতীয় তথ্যাদি সাধারণ মানুষের কাছে পৌচ্ছে দেওয়াই এই দিবসটি পালনের মূল কারণ।
আর ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ সার্বিকভাবে দেশ গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেশ ভালোভাবে এগিয়ে চলছিল। কিন্তু পাকিস্তানপন্থি ঘাতকের দল বঙ্গবন্ধুকে তার সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার মাধ্যমে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সামরিক সরকার বন্দুকের নলের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। কেউ কেউ আবার নিজেকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে দাবি করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পরে গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের জনগণ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর-অন্তর এক ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা প্রত্যক্ষ করতে শুরু করে।

১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও খুব অল্পসময়ের মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় এক ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব পালন করে। সেই সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করেন। সে সময় অনেকেই বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল দ্বিতীয়বারের মতো। সেই অবস্থা থেকে শেখ হাসিনা নিজের পরিকল্পনায় আস্তে আস্তে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিণত করতে শুরু করেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন সরকার গঠন করেছিলেন তখন বাংলাদেশের বাজেটের আকার ছিল ৮৭ হাজার কৌটি টাকা, সেই জায়গায় থেকে গত সাড়ে ১৩ বছরে বাংলাদেশের বাজেটের আকার হয়েছে ছয় লক্ষ কোটি টাকা। এক সময় অনেকেই শেখ হাসিনা সরকারের বাজেটকে স্বপ্নবিলাসী বাজেট বলে আখ্যা দিতেন। তাদের মতে এই বিশাল অংকের বাজেট বাস্তবায়নের সামর্থ্য সরকারের ছিল না। অনেকের সমালোচনা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার প্রমাণ করেছে যে ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কোনো উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ একটি শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়েছে।

যে কোন রাষ্ট্রকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে যেতে হলে সরকার প্রধানের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেতার কাজ হচ্ছে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া। নেতার যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকে তাহলে দেশ সঠিকভাবে কখনোই এগিয়ে যেতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু যেমন তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের মাধ্যমে আস্তে আস্তে বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন, ঠিক তেমনি ভাবে শেখ হাসিনা তার বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে তার নেতৃত্বের গুণাবলী কারণে। অনেক ক্ষেত্রেই নিন্দুকেরা শেখ হাসিনার বিভিন্ন নীতি ও কার্যক্রমের সমালোচনা করেছে। কিন্তু দিন শেষে তারা নিজেরাই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যখন বিশ্বব্যাংক অর্থ পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, অর্থনীতিবিদ এবং বিরোধী নেতারা বারবার বলেছিলেন যে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু কখনই নির্মিত হবে না। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন ঘটা করে বলেছেন যে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু কখনই নির্মিত হবে না এবং হলেও তা ভেঙ্গে পরবে। সেই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে নিজস্ব অর্থায়নে তিনি বাংলাদেশে পদ্মা সেতু তৈরি করবেন।

তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছেন। পদ্মা সেতু এখন কোন স্বপ্নের বিষয় নয়। এটি একটি বাস্তবতা যা জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। একই রকম ভাবে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল প্রকল্পের মতো বিভিন্ন প্রকল্প যখন হাতে নেয়া হয়েছিল তখন অনেকেই এগুলোর সমালোচনা করেছিলেন। কারণ এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করার আর্থিক সামর্থ্য সরকারের ছিল না। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে নেতৃত্বে দূরদর্শিতা এবং যোগ্যতা থাকলে যে কোন কঠিন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরেকটি দিক হচ্ছে সততা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি ও তাদের তাদের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক শ্রেণির নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে যারা নিজেদেরকে দুর্নীতির মধ্যে নিমজ্জিত করেছে এবং তাদের আশেপাশের মানুষদের দুর্নীতি করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেছে। এ কথাও ঠিক যে দুর্নীতি বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সরকার প্রধান এবং তার পরিবারের সদস্যরা যদি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তখন দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক আকার ধারণ করে। সেই দিক থেকে বিচার করলে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পরে শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন। তার সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা শুরু হয়েছিল। কিন্তু কেন জানি না কোন এক অজ্ঞাত কারণে কখনও কখনও সরকারের এই মহৎ উদ্দেশ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি নজরে রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

গত সাড়ে ১৩ বছরে যারা শেখ হাসিনাকে প্রত্যক্ষ করেছেন তারা এ কথা অস্বীকার করতে পারবেন না যে নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন। তার নেতৃত্বের গুণাবলী শুধু দেশের জনগণের মধ্যে প্রশংসিত হয় নি, বরং তার নেতৃত্ব প্রশংসিত হয়েছেন বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশের নেতা থেকে তিনি বিশ্ব নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের ভেতরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জলবায়ু পরিবর্তন ও নারীর ক্ষমতায়নসহ অনান্য বিষয়ে তিনি সব সময় সরব থেকেছেন বিধায় আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বড় বড় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা তার কাজের প্রশংসা করেছেন। এমনকি তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নেতারা প্রশংসা করেছেন। কোভিড-১৯ মোকাবেলাই সরকারের সফলতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন গত সাড়ে ১৩ বছর।

এখন অনেকেই যে প্রশ্নটি করেন তা হল শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব বাংলাদেশে কি তৈরি হয়েছে? এ কথা স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, হ। বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের মধ্যেও শেখ হাসিনার মতো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কোন নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলে যারা রয়েছেন তাদের কথা বাদই দিলাম। কারণ তারা অনেকেই নিজেদেরকে দুর্নীতির মধ্যে নিমজ্জিত করার মাধ্যমে রাজনীতি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের আজকের যে অবস্থান সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের কারনে। তবে তার এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেছে সরকারের ধারাবাহিকতা কারণ বাংলাদেশের মতো দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণ তার ওপরে আস্থা রেখে তাকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবার সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আগামী ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ একই রকমভাবে তার উপরে বিশ্বাস রাখবে কারণ এই মুহূর্তে আমাদের সকলের মাথায় যে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন। ফলে, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি এবং উন্নয়ন ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছেন। সাফল্য এসেছে নানা দিক থেকে। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামীর প্রযুক্তি বিপ্লবে নেতৃত্বের আসনেই থাকবে বাংলাদেশ।তাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা মারাত্মক অন্যায়। মিথ্যা কথা বলে তথ্য প্রকাশ করা ইসলাম নিষেধ করছে। একটি তথ্য উপস্থাপন করতে হলে অবশ্যই সুন্দর, সাবলীল, যুগোপযোগী মিষ্টি ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে।

লেখক,
প্রতিষ্ঠাতা,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।