আলিফ হোসেন,তানোরঃ রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকুপ অপারেটরের দৌরাত্ম্যে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কৃষক ও কৃষির কথা বিবেচনা করে গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে।কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রে স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামত উপেক্ষা করে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের হোমরাচোমরাদে অপারেটর নিয়োগ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় জমি কৃষকের হলেও রাজত্ব অপারেটরদের, তারা নিজ নিজ এলাকায় ওয়াটার লর্ড।
অধিকাংশ অপারেটর প্রতি মৌসুমে কৃষকের জমি ফড়িয়া আলু চাষিদের কাছে ইজারা দিয়ে চার ভাগের একভাগ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। গভীর নলকুপের স্কীমে আলুর প্রজেক্ট হয়। যিনি এসব প্রজেক্ট করেন তাকে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
অপারেটরা স্কীমের জমি প্রতি বিঘা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় ইজারা দেন।কিন্তু জমির মালিকে (কৃষক) ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা দেয়া হয়।
জানা গেছে, উপজেলায় বিএমডিএ’র ৫৩৬টি ও ব্যক্তিমালিকানা ১৬টি মোট ৫৫২টি গভীর নলকুপ রয়েছে।
এছাড়াও অগভীর নলকুপ বিদ্যুৎ চালিত ৪১১টি ও ডিজেল চালিত ৫০টি, এলএলপি বিদ্যুৎ চালিত ৩টি, ডিজেল চালিত ৩৫০টি, মোট এক হাজার ৩৬৬টি সেচ পাম্প রয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংহভাগক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের অযোগ্য হোমরাচোমরাদের অপারেটর নিয়োগ করা হচ্ছে। একটি অপারেটরকে নিয়োগ নিতে দু”লাখ থেকে তিন লাখ টাকা গুনতে হয়। ফলে নিয়োগের টাকা সুদাসলে উঠাতে এসব অপারেটরগণ কৃষকদের জিম্মি করে সেচ চার্জ আদায়ের নামে ঘোষণা দিয়ে করে চাঁদাবাজি।
সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) দেবীপুর মৌজায় অবস্থিত গভীর নলকুপে এমন অরাজকতা চলছে। তানোর পৌর এলাকার সিন্দুকাইগাইনপাড়া মহল্লার মৃত ময়েজ উদ্দিনের পুত্র আতাউর রহমান ওই গভীর নলকুপের অপারেটর।কৃষকেরা জানান, স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামত উপেক্ষা করে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে আতাউর রহমানকে অপারেটর নিয়োগ করা হয়েছে। এদিকে বিনিয়োগ করা টাকা উঠাতে তিনি কৃষকদের রীতিমতো শোষণ করছেন। কৃষক অধির কুমার দাস (৪৫), ওমর আলী (৩৫) ও রহমান জানান, আলুচাষে বিঘা প্রতি দেড় হাজার ও ধানচাষে বিঘা প্রতি সেচ চার্জ দুই হাজার টাকা নিচ্ছেন। এছাড়াও ট্রান্সফরমার বিকল, লাইনম্যান, পাহারাদার ইত্যাদি নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগ ও সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকুপ পরিচালনার দাবি দীর্ঘদিনের। এবিষয়ে বিএমডিএ’র চেয়ারম্যান ও নির্বাহী প্রকৌশলীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্কীমভুক্ত কৃষকগণ। এবিষয়ে জানতে চাইলে অপারেটর আতাউর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সবাই যেভাবে ডিপ চালায় তিনিও সেভাবেই চালান। এবিষয়ে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, গভীর নলকূপে প্রকার ভেদে ঘন্টাপ্রতি ১২৫ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো অপারেটর বাড়তি সেচ চার্জ নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এজন্য কৃষকদের সচেতন হতে হবে। কারন সরকার সেচে ভূর্তুকি দিচ্ছে। আর কেউ বেশি নিবে তা বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, এবার ওই গভীর নলকুপে স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগ ও সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকুপ পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে।#