

মারুফ সরকার, স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আফতাব নগরের কুরবানির পশুর হাটের ইজারা নিয়ে চলছে নানান নাটকিয়তা। এছাড়াও রয়েছে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ। গত কয়েক বছর ধরেই সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ও প্রভাব খাটিয়ে হাট বাগিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া আফতাব নগরের গরুর হাটের টেন্ডার দেওয়ার কিছুদিন আগ থেকেই সম্পত্তি বিভাগের সামনে এবং আঞ্চলিক অফিসে প্রতিদিন ক্ষমতা দেখিয়ে ‘মহড়া’দেয় মেহেদীর ক্যাডারবাহিনী বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে যাদের ক্যাডারবাহিনী নেই সেসব ইজারা প্রার্থীর পক্ষে নির্বিঘ্নে দরপত্র জমা দেয়া সম্ভব হয় না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গরুর হাটগুলো ইজারার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের আয়ত্বে রাখতে সব সময়ই নেওয়া হয় নানা কৌশল। ঘুরে ফিরে একই সিন্ডিকেটের সদস্যরা পশুরহাটের ইজারা পাচ্ছেন। কারণ একই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নামে-বেনামে নামমাত্র মূল্য দিয়ে দরপত্র জমা দিয়ে থাকেন। যে কারণে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত দামে ইজারা পেতে সহজ হয়ে যায়। এতে প্রতি বছর সিটি কর্পোরেশন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারায়।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা-২০২৪ উপলক্ষে রাজধানীর আফতাবনগরে পশুর হাট বসাতে দেওয়া পৃথক ইজারা বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৮মে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ দেন।
গত ৪ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার সই করা এক ইজারা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই থেকে এইচ পর্যন্ত এবং সেকশন ১ ও ২–এর খালি জায়গাসহ ১১টি স্থানে অস্থায়ীভাবে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য ইজারা আহ্বান করা হয়। ঈদুল আজহার দিনসহ পাঁচ দিন হাট বসার কথা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, গত বছর সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীনদের সিন্ডিকেটের কারণে রাজধানী ঢাকার অস্থায়ী ২৬টি কুরবানি পশুর হাট থেকে শত কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে ডিএনসিসি-ডিএসসিসি। হাটগুলো থেকে কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকা হাসিল উত্তোলন করেছে ইজারাদাররা। অথচ হাটগুলোর ইজারা থেকে পেয়েছে মাত্র সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। এছাড়াও হাট নিয়ে রয়েছে দুই সিটির মধ্যে টানাপড়েন। আফতাব নগরে অস্থায়ী পশুর হাটও রয়েছে।
দুই সিটি কর্পোরেশনের দাবি- হাটের এলাকা তাদের সীমানায় পড়েছে। মূলত জায়গাটি দুই সিটি কর্পোরেশনের সীমান্ত এলাকায় পড়েছে। সামনের জায়গা ডিএনসিসির এবং পেছনের জায়গা ডিএসসিসির।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো.মাহে আলম বলেন, সীমানা নির্ধারণী গেজেট অনুযায়ী যেখানে আফতাব নগর হাট বসানো হয়, তার বেশির ভাগ অংশ ডিএসসিসির আওতাভুক্ত। এজন্য আমরা এবার ডিএনসিসিকে ওই স্থানে হাট ইজারা না দেয়ার অনুরোধ করেছি।ডিএনসিসি যদি আমাদের অনুরোধ না শোনে তাহলে ওই এলাকার দুটি হাট ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে।
ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহে আলম বলেন, আফতাব নগর হাট বহু বছর ধরে ডিএনসিসি ইজারা দিচ্ছে। গত বছর বিশেষ কারণে ডিএনসিসি বরাদ্দ দেয়নি, তবে এবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২টি হাটের জন্য প্রথম দফার ইজারা কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলেও দক্ষিণ সিটির ১৪টি হাটের ইজারা নিয়ে এখনো চলছে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। এ হাটগুলোর জন্য টেন্ডার আহ্বানের পর থেকেই আগ্রহী প্রার্থীরা চালান কাটা শুরু করলেও তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সিডিউল সংগ্রহ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ সিটির ১৪ হাটের জন্য ৩০ এপ্রিল টেন্ডার আহ্বান করেছে। অন্যদিকে উত্তর সিটির ১২টির অস্থায়ী হাটের টেন্ডার বাক্স খোলা হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গত তিন বছর ধরেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী হাট ইজারা নিয়ে চলছে অনিয়ম আর দুর্নীতি।
ইজারা মূল্যের চেয়ে সে বছর ওই পশুর হাট থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেশি হাসিল আদায় হয়। ডিএসসিসি গত বছর এ হাটের ইজারামূল্য নির্ধারণ করে মাত্র ১০ লাখ ৩ হাজার টাকা। এবারো হাট ইজারা একই প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। যাতে করে সরকার বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম এর কাছে জানতে তার ব্যক্তিগত নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।