• আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমেক হাসপাতাল পরিচালকের অসহাত্ব আমি জিম্মি, আমাকে বদলি করা হউক

| নিউজ রুম এডিটর ১:২৩ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ১২, ২০২৪ রংপুর, শিক্ষাঙ্গন

 

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আবাসিক ভবনগুলো যুবলীগ নেতা একাধিক হত্যা মামলার আসামি নয়ন সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। ওই চক্র প্রতি মাসে আবাসিক ভবনের ১৫০টি কোয়াটারের মধ্যে ৮৮টি থেকে ভাড়া বাবদ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা তুলছে। এই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদসহ সিন্ডিকেটের নেতারা। এ অবস্থায় হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. জাফরুল হোসেন নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বদলি হওয়ার আকুতি জানিয়েছেন।

আবাসিক ভবনগুলোতে ১০ বছর ধরে অবৈধভাবে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা বসবাস করলেও নয়ন সিন্ডিকেটের চাপে প্রায় ৬ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়েছে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে। এসব ভবনে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে অবৈধভাবে কর্মচারীদের সঙ্গে বহিরাগতরা থাকছেন।

এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক। তাই গত মাসে বৈধভাবে ৩০টি কোয়াটার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। শুধু তাই নয় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির ১০২টি কোয়াটারের মধ্যে মাত্র ১৪ জন নিয়মিত বাসা ভাড়া দিলেও ৮৮ জন বাসা ভাড়া পরিশোধ করেন না। তৃতীয় শ্রেণির ৪৮টি কোয়াটারের মধ্যে কেউ বাসা ভাড়া এ পর্যন্ত দেয়নি। এভাবে বিশেষ সুবিধা দিয়ে এদের কাছে প্রতি মাসে নয়ন সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ফলে সরকারকে প্রতি মাসে শুধু বাসা ভাড়া বাবদ প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে।

করলে বাসা ভাড়ার বৈধতা দেখাতে ‘ব্যাকডেটে’ আবাসিক ভবনের ৩০টি কোয়াটার বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাসা ভাড়ার একটি নিয়মিত কমিটি থাকলেও হাসপাতালের উপ-পরিচালক একাই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নয়নের সিন্ডিকেটের পছন্দমতো কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের তিনি পরিষ্কার কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি।

নতুন করে বাসা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সরেজমিন পরিদর্শনে কোনো বাসায় আলাদা বিদ্যুতের মিটার পাওয়া যায়নি। অথচ এই ভবনগুলোর বাসাগুলোতে এসি, হিটার, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আয়েশি জীনযাপন করছে নয়ন সিন্ডিকেটের হাসপাতাল কর্মচারী ও বহিরাগতরা।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক বলেন, বিদ্যুৎ বিল কিভাবে দেওয়া হয় তা তিনি জানেন না। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের মেইন মিটার থেকে ওই সব আবাসিক ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর বিল পরিশোধ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দশ বছরে হাসপাতালের আর্থিক বরাদ্দ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় হাসপাতাল ক্যাম্পাসে নতুন করে ক্যান্সার, কার্ডিয়াক ও নেফ্রোলজি ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় দেড় বছর ধরে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করে আসছে। এই নির্মাণ কাজের জন্য সরাসরি হাসপাতালের বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিয়ে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আশিকুর রহমান নয়ন ও তার সিন্ডিকেটের ৭ সদস্য। অথচ এই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ১৮ মাসে ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।

এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মিলন হত্যা মামলা আসামি হয়ে নয়ন পলাতক রয়েছেন। এরপরও তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়াও, হাসপাতালের সাবেক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান হত্যা মামলার তিনি আসামি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. জাফরুল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় একমাস আগে এখানে এসে যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই সিন্ডিকেট। আমি এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। আমার পক্ষে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। আমি চাই আমাকে এই অসনীয় অবস্থা থেকে বদলি করা হোক। আপনার পত্রিকার মাধ্যমে আমাকে বদলির জন্য সুপারিশ করুন। আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।’

তথ্যসুত্র: যুগান্তর