

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের জন্য আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর এটিই হতে যাচ্ছে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প-মোদীর আসন্ন এ বৈঠক নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার মাঝে বাংলাদেশের দিক থেকে এ বৈঠক নিয়ে আছে বাড়তি কৌতূহল।
এরই মাঝে ট্রাম্প-মোদীর আসন্ন এ বৈঠকে বাংলাদেশ অন্যতম আলোচনার বিষয় হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর আওতায় ট্রাম্প-মোদীর বৈঠকে ঠিক কী কী নিয়ে কথাবার্তা হবে, তা চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে বৃহত্তর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুতে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি উঠে আসতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের সাথে গঠনমূলক সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিশীল। কোনো ধরনের উত্তেজনা না বাড়িয়ে সম্পর্ককে ইতিবাচক খাতে প্রবাহিত করা দুই দেশের জন্যই জরুরি।
সম্প্রতি ভারতের আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয়া নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মাঝে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে। দেখা দিয়েছে কূটনৈতিক টানাপোড়েন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উঠে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দিল্লি শুরু থেকেই বিরাগভাজন বলে অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সরকারি আশ্রয়ে থেকে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি নিয়েও আপত্তি তুলছেন ভারতীয় অনেক কর্মকর্তা। এতে করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য দেয়ার ব্যাপারে ভারতের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, ওই বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এর সাথে ভারত সরকারের নীতিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।
এদিকে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো না হলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের ওপর হুমকি আসতে পারে, এমন জল্পনা প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব বাংলাদেশের। বাংলাদেশ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন বলে মনে করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে আনুকূল্য পাইয়ে দেবার চেষ্টা করতে পারেন বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একাংশের ধারণা, বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানই অন্তর্বর্তী সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে, মোদীর আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ব্যাপক গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক ভূরাজনীতির প্রশ্নে ট্রাম্প-মোদীর বৈঠকে বাংলাদেশ ছাড়াও, পাকিস্তান, চীনসহ অন্যান্য দেশ গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সব মিলিয়ে এ বৈঠকের ফল হিসেবে আগামীতে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন নতুন সমীকরণ দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা।