
পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যার মূল শিক্ষা হলো তাকওয়া, ত্যাগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ। এই দিনে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করে থাকেন। তবে এ ইবাদতের রয়েছে কিছু নির্ধারিত নিয়মকানুন, যেগুলো জানা এবং যথাযথভাবে পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব।
নিম্নে কোরবানির দিনে কী কী করণীয় এবং কোন বিষয়গুলো বর্জনীয়, তা তুলে ধরা হলো বিশুদ্ধ কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে।
করণীয় বিষয়সমূহ:
নিয়ত শুদ্ধ রাখা:
কোরবানি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে তা কবুল হয় না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহর কাছে পৌঁছে না তোমাদের কোরবানির মাংস বা রক্ত, বরং পৌঁছে যায় তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা আল-হাজ্জ: ৩৭)
ঈদের নামাজ আদায় করা:
কোরবানির পূর্বে ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। এরপর ইমামের খুতবা শ্রবণ করাও সুন্নত হিসেবে বিবেচিত।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোরবানি সম্পন্ন করা:
কোরবানি করার সময় শুরু হয় ঈদের নামাজের পর থেকে এবং তা চলে ১২ জিলহজ পর্যন্ত। এর বাইরে কোরবানি করা জায়েজ নয়। (সহিহ মুসলিম)
পশুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা:
জবাইয়ের সময় পশুকে কষ্ট না দিয়ে দয়ালু ও সদয় আচরণ করতে হবে। ধারালো ছুরি ব্যবহার এবং এক পশুর সামনে অন্য পশু জবাই না করাও হাদিস অনুযায়ী সুস্পষ্ট নির্দেশনা। (সহিহ মুসলিম: ১৯৫৫)
মাংস বণ্টনে ভারসাম্য রাখা:
মাংস তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের এবং এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা উত্তম। এটি ফিকহে হানাফি মতে সুন্নত প্রথা।
বর্জনীয় বিষয়সমূহ:
লোক দেখানোর মানসিকতা:
কোরবানির পশুর দাম বা আকার নিয়ে অহংকার, বড়াই বা অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কোরবানি করা সম্পূর্ণরূপে শরিয়তবিরোধী।
পশুকে কষ্ট দেওয়া বা নির্যাতন করা:
পশুকে মারধর করা, দীর্ঘ সময় না খাইয়ে রাখা বা তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা গুনাহের কাজ। ইসলামে পশুর প্রতি দয়া প্রদর্শনের ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে।
কোরবানির অযোগ্য পশু জবাই করা:
যে-সব পশু পঙ্গু, অন্ধ, অপূর্ণাঙ্গ বা মারাত্মক অসুস্থ—এমন পশুকে কোরবানি করা জায়েজ নয়। (আবু দাউদ: ২৮০৯)
মাংস অপচয় বা অতিরিক্ত সংরক্ষণ:
মাংস একত্রে রেখে দিয়ে বিলম্বে বিতরণ করা, অথবা অপচয় করা শরিয়তের দৃষ্টিতে অনুচিত। গরীব ও অসহায়দের মাঝে দ্রুত বণ্টন করা উত্তম।
পশুর চামড়ার টাকা নিজস্ব প্রয়োজনে ব্যবহার:
পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ নিজের জন্য ব্যবহার করা বৈধ নয়। বরং সেই অর্থ সদকা করে দেয়া উত্তম। (সহিহ হাদিস অনুযায়ী)