

হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম: প্রেমসহ ব্যক্তিগত বিষয় পরিবারের অভিভাবকদের কাছে জানিয়ে দেওয়ায় ইয়াবা দিয়ে বন্ধুকে ফাঁসাতে গিয়ে উল্টো দুই বন্ধু ফেঁসে গেল পুলিশের বিছানো জালে।
এ ঘটনায় দুবন্ধুকে গ্রেফতারের পর এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ঠাটারিটারি গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেনের ছেলে মিলন মিয়ার সাথে একই ইউনিয়নের দক্ষিণ অনন্তপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে জুয়েল হকের গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। কিন্তু বন্ধু মিলন মিয়া জুয়েলের ব্যক্তিগত প্রেম ও কিছু নেগেটিভ কর্মকান্ড তার পরিবারের কাছে ফাঁস করে দেয়। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় জুয়েল। সে বন্ধুকে সায়েস্তা করার জন্য ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে বন্ধু মিলনের মটর সাইকেলের সিটের নিচে রেখে দেয়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার এগারো মাথা সাতকুড়ারপাড় এলাকার আছকের আলীর ছেলে মনির হোসেন।
নাগেশ্বরী থানার এসআই অপূর্ব কুমার জানান, শনিবার রাতে মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি থানায় মুঠোফোনে জানান, নেওয়াশী ইউনিয়নের এগারো মাথা বাজারে এক ব্যক্তির মোটর সাইকেলের সিটের নিচে ইয়াবা রয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে বাজার থেকে মোটর সাইকেলটি আটক করে সিট ও যন্ত্রাংশ খুলে ৬৭টি ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মোটর সাইকেলের মালিক মিলন মিয়াকে জিজ্ঞসাবাদ করা হলে পুলিশের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গাড়ীর মালিক মিলন মিয়া ইয়াবার বিষয়ে কিছুই জানেনা বলেও জানান। ধারণা করা হয়, ওই ব্যক্তিকে ফাঁসাতে সিটের নিচে ইয়াবা রাখা হতে পারে। পরে বাজার থেকে সোর্সের মাধ্যমে ইনফরমার মনির হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, জুয়েলের কথায় সে এ কাজ করেছে। পরে রবিবার ভোরে বাড়ী থেকে জুয়েলকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে ফাঁসানোর পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে জুয়েল।
জুয়েলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রেমসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয় জুয়েলের পরিবারে জানায় তার বন্ধু মিলন। এ নিয়ে চার মাস ধরে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। প্রতিশোধ নিতে অপর বন্ধু মনির হোসেনসহ মিলনকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে জুয়েল। মাদক দিয়ে ফাঁসাতে ১০ হাজার টাকায় ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয় করে। ঘটনার দু’দিন আগে মিলনের মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়িতে যায় জুয়েল। বাড়িতে সিটের নিচে ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে গাড়ী ফেরত দেয়। পরে পুলিশকে সোর্স হিসেবে জানায় মনির।
এ ঘটনায় থানার নাগেশ্বরী থানার এসআই অলকান্ত রায় বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রভাত চন্দ্র রায় বলেন, আসামীদের রবিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে মোটর সাইকেলসহ ইয়াবা উদ্ধারের পর ঘটনাটি নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়। কৌশলে সোর্সদের জিজ্ঞাবাদ করে দেখা যায় ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে পরিকল্পনা করে মোটর সাইকেলে ইয়াবা রাখা হয়েছে। পরে পরিকল্পনাকারী ও সোর্সকে আটক করলে তারা বিষয়টি স্বীকার করে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।