প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকেরা উন্নয়ন না করলেও ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। অপরদিকে স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটার প্রচার পায়নি। তিনি বলেন, ‘এখনও আমি এত উন্নয়ন করার পরেও কিছু লোকের মুখে সমালোচনা শুনি।’
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বারবার ক্ষমতা বদল, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে একের পর এক ১৯টি ক্যু হয়েছে এই দেশে। ক্ষমতা সেনানিবাসে সামরিক শাসকদের হাতে, ডাইরেক্টলি বা ইনডাইরেক্টলি। অভার্টলি অর কভার্টলি। তাদের হাতেই ক্ষমতা। ক্ষমতাকে তারা ভোগের বস্তু বানিয়েছে। কিছু চাটুকারের দল, তোষামোদি-খোশামোদি সৃষ্টি করে তাদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। দেশের মানুষের কল্যাণে বা উন্নয়নে তাদের কোনও অবদান ছিল না। কিন্তু প্রচার পেয়েছে ব্যাপক।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এত উন্নয়নের কাজ করে গেছেন, সেখানে ঠিক উল্টো প্রচার করা হতো। যেটা এখনও আমি এত উন্নয়ন করার পরেও কিছু কিছু লোকের মুখে, কিছু কথা যখন শুনি। সেই সব সুরের প্রতিধ্বনিটাই যেন আমি শুনতে পাই। সেই সব শ্রেণির লোকেরাই কিন্তু সমালোচনা, কিংবা বলেই যায়। যদিও আমি এসব পরোয়া করি না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। কারণ, যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছেন সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। তো, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। যত বাধাবিঘ্ন আসুক, সেটা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’
সরকারে দীর্ঘমেয়াদি ও শত বছরের ডেল্টা প্ল্যানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রজন্মের পর প্রজন্ম, যারা আসবে তারাই উন্নয়নের গতিটা এগিয়ে নিয়ে যাবে, সেটাই আমরা চাই। এমন কেউ যেন না আসে, যে বাংলাদেশকে আবার সেই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। এই দেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলবে।’
দেশকে এগিয়ে নিতে করোনা মহামারির মধ্যেও যারা কাজ করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই অর্থনীতির গতিটা ধরে রাখতে পেরেছি। হয়তো যেভাবে যেটা হবার কথা ছিল, সেটা পারিনি। বিশ্বব্যাপী এই অতিমারি দেখা দিয়েছে, অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে। তার প্রভাব তো আমাদের দেশে পড়বেই। তারপরও আমাদের উন্নয়নের গতিটা ধীর হলেও অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
পদ্মা সেতুর সাফল্যের বিষয়টি সামনে এনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশকে কারও কাছে হাত পেতে চলতে হয় না। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, নিজের অর্থে আমরা কাজ করতে পারি কি না, পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমরা সেটা করে দেখিয়ে দিয়েছি।’
দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টিকা থেকে বাদ যাবে না কেউ।’
তিনি বলেন, ‘সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন, আমরা টিকা দিচ্ছি, টিকা ব্যাপক হারে দেয়া হবে। টিকা থেকে কেউ বাদ যাবে না, আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। যত টাকাই লাগুক, স্বাস্থ্যসেবা আমরা দিচ্ছি, টিকার ব্যবস্থা করেছি।’
করোনা প্রতিরোধী টিকা গ্রহণের পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা নেয়ার পরও কিন্তু করোনা দেখা দেয়, উপসর্গ বোঝা যায় না। আপনি হয়তো নিজে বুঝতে পারছেন না, অন্য কাউকে সংক্রমিত করে দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। সব সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন। অন্তত মাস্কটা পরে থাকবেন। যখনই আপনি বেশি লোকের সঙ্গে মেশেন, তখনই সতর্ক থাকবেন। হাত পরিষ্কার রাখা, স্যানিটাইজ করা, এদিকে সবাই দৃষ্টি দেবেন।’
পিএন/জেটএস