• আজ ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলা শিখতে চান ইইউ দূত

| নিউজ রুম এডিটর ৯:২৮ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২ জাতীয়, লিড নিউজ

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে বাংলা ভাষা শিখে নিতে চান ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। ইইউভুক্ত দেশগুলো রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি সংস্কৃতি বিনিময়ে আগ্রহী বলেই ২৭ দেশের এই জোটে ২৪টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর প্রগতি সরণিতে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (সিইউবি) আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।

‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাসৈনিকদের জানাই সম্মান’- এভাবেই ভাঙা বাংলায় নিজের বক্তব্য শুরু করেন রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাবৈচিত্র্য জানা-বোঝার সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় আমি এখন যা পারি তার চেয়ে ভালো বাংলা বলতে চাই। আমি বাংলা শিখতে চাই।

অনেক ধন্যবাদ। ’
হোয়াইটলি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ২৭। এই জোটে ২৪টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩ হলেও অফিশিয়াল ভাষা মাত্র ৬টি।

প্রশ্ন উঠতে পারে, ইইউতে এত দাপ্তরিক ভাষা কেন? উত্তরে বলা যায়, বৈচিত্র্যের সংযোগ ঘটানো আমাদের উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও জাতীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময়ের সম্পর্ককে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর তার প্রধান অনুষঙ্গ ভাষা। ’
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মানুষে মানুষে সংযোগ, শিক্ষাবৃত্তি দেওয়াসহ বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করে বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে জাতি ও সীমানার বিভেদ ভুলে মাতৃভাষা রক্ষায় সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।

আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিশ্বায়ন আমাদের অনেককেই একাধিক ভাষায় কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। এটা খুবই সাধারণ। আমি বুঝি এমন ভাষায় যদি আপনি আমার সঙ্গে কথা বলেন, তখন তা আমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। কিন্তু আপনি যদি আমার সঙ্গে বাংলায় কথা বলেন, সেটি যায় আমার হৃদয়ে। এর নামই হলো মাতৃভাষা। তাই আমি বিশ্বাস করি, জাতি কিংবা সীমানা ভুলে মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের সবার ভূমিকা রাখা উচিত। ’

চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের মতে, জন্মের পর থেকে শুনতে থাকা মাতৃভাষা মানুষের অনুভূতি ও চিন্তাকে সুদৃঢ় করে। তিনি বলেন, ‘নিজের ভাষায় কথা বলা যাবে না, এমন একটি পৃথিবীর কথা আমি চিন্তাও করতে পারি না। ’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মাসুদ এ খান বলেন, ‘পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাকে, এমনকি সবচেয়ে ক্ষুদ্র যে ভাষাটি রয়েছে সেটিকেও সমান সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে- এটিই হলো একুশের চেতনা। ’

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিষয়টিও উঠে আসে তার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এমন একটি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে বাংলাদেশ একটি গর্বের নাম, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত গৌরবের নাম সারা বিশ্বে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা তাক লাগিয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। ১৬ কোটি মানুষের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসেছে এই অর্জন। ’

অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘শুধু বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বরং পৃথিবীর অন্য সব ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে শেখায় একুশে ফেব্রুয়ারি। আমরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। কিন্তু মতপ্রকাশে তো নিজের একটি ভাষা প্রয়োজন। আর সেই ভাষার জন্য লড়াই করেছে বাঙালি। প্রাণ দিয়েছে বাঙালি জাতি। ফলে আমরা পৃথিবীর সব ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান করি। সেই চেতনা নিয়ে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের।’

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পাল্টে যাওয়া অর্থনীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাকে সেই অনুভূতি দেয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমরা মূল্যবোধের শীর্ষে রাখতে পারি, কারণ সেটা সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য। এর পাশাপাশি আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার- এসব কিছুই ছিল আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে। ’

অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যবোধ উন্নয়নেও কাজ করার সময় এসেছে বলে মনে করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি বলেন, ‘পেটে ক্ষুধা নিয়ে চিন্তা করা যায় না, কিছু করাও যায় না। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ’

অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. এইচএম জহিরুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।