আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় গ্রামপুলিশ আর ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যাক্তি মালিকানাধিন শতাধিক গাছ জোর পুর্বক কেটে নেয়া অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের সেনপাড়া হলমোড় থেকে দক্ষিণে শ্মাশান ঘাট যাওয়ার একটি কাচা রাস্তা রয়েছে। সেই রাস্তার দুই পাশের জমির মালিকরা স্বপ্রনোদিত হয়ে দীর্ঘ দিন আগে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ লাগান। সাম্প্রতি সময় রাস্তাটি সংস্কার করতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ৪০ দিনের কর্মসুচির একটি প্রকল্প দেয়া হয়। প্রকল্পটির সভাপতি ওই ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের এক নং ওয়ার্ড সদস্য লালন মিয়া।
গত বুধবার(২৫ মে) সকালে ইউপি সদস্য লালন মিয়া হঠাৎ গ্রামপুলিশ নিয়ে এসে ওই রাস্তার দুই পাশের শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে যান। রাস্তার পাশে এসব গাছ সরকারী দাবি করে তারা কেটে নেন এবং বিষয়টি নিয়ে কাউকে জানালে ঘর বাড়ি ছাড়া করার হুমকী দেন বলেও ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ।
ক্ষতিগ্রস্থ মোহন চন্দ্র বলেন, আমাদের গাছ আমরা কেটে নিয়ে রাস্তা ছেড়ে দিতে চাইলে নিষেধ করেন ইউপি সদস্য লালন মিয়া। প্রথম দিকে লালন মেম্বর বলেছিল গাছগুলো যেহেতু রাস্তায় পড়েছে। তাই মালিক তো সরকার। এজন্য অর্ধেক জমির মালিকদের দেয়া হবে আর বাকী অর্ধেক ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হবে। গ্রামপুলিশ নিয়ে এসে গাছ কেটে নিয়ে যান মেম্বর লালন। পরে অর্ধেকের ভাগ তো দুরের কথা গাছের ডাল পাতাও নাড়তে দেয়নি। উল্টো কোথাও বিচার দিলে ভিটেমাটি ছাড়া করারও হুমকী দেন।
আরতি বালা(৬৫) বলেন, নিজের সন্তানের মত ৩০টি গাছ বড় করেছি। সরকারের দাবি করে মেম্বর লালন গ্রামপুলিশ নিয়ে এসে কেটে নিয়ে গেছে। পায়ে ধরেও একটি ডাল আটকাতে পারি নি। উল্টো সরকারী গাছ আটকালে মামলা আর পুলিশের ভয় দেখায়। আমরা গরিব মানুষ। কে আমাদের কথা শুনবে। তাই ভগবানকে বিচার দিয়েছি।
ময়না রানী বলেন, আমার ১৩টি মোটা মোটা গাছ কেটে নিয়েছে। অনেক অনুরোধ করেও বাঁচাতে পারিনি। গাছগুলোর বাজারে ৬৫/৭০ হাজার টাকা হবে। সবগুলো গাছ আদিতমারী রেলগেটের স’মিলে রেখেছে মেম্বর আর গ্রামপুলিশ।
ওই গ্রামের চিনি বালা বলেন, এ গ্রামের সবাই গরিব কৃষক। আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে ভোট নিয়ে মেম্বর হয়েছে লালন। এখন ভয় দেখিয়ে আমাদের গাছগুলো কেটে নিয়েছে। সবগুলো গাছ আম, কাঠালে ভরা ছিল। এ পাড়ার ১২/১৪ জনের প্রায় শতাধিক মোটা মোটা মেহগনি, কড়াই, আম, কাঠাল, জাম্বুরা, ইউক্যালিপ্টাসসহ বিভিন্ন গাছে কেটে নিয়েছে। এসব গাছের মুল্য ৪/৫ লাখ টাকা হবে।
অভিযুক্ত ভাদাই ইউপি সদস্য লালন মিয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে তিনি ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখেন।
ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত বিদুকে একাধিকবার ফোন করেও ফোন ধরেননি তিনি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সারোয়ার বলেন, রাস্তা সংস্কার করতে গাছ কাটতে হবে এমন কোন নির্দেশনা বা খবর আমার জানা নেই। ব্যাক্তি মালিকানার গাছ কেটে নেয়া অপরাধ। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থদের কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।