• আজ ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামবাসীর জন্য নির্মাণ করলেন ভাসমান সেতু

| নিউজ রুম এডিটর ৩:২৬ অপরাহ্ণ | জুন ১, ২০২২ লালমনিরহাট, সারাদেশ

আজিজুল ইসলাম বারী,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ সতী নদীর উপর ভাসমান ৫০ ফিট ড্রাম ব্রীজে দুঃখ ঘুচলো শিক্ষার্থীসহ ১৫ হাজার মানুষের। গত এক বছর ধরে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর অতি কষ্টে পানিতে ভিজে চলাচল করত। ভাসমান ব্রীজে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর আনন্দ প্রকাশ।

ড্রাম ও বাঁশের মাছা দিয়ে ৫০ ফিট দূরত্বে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য সাঁকো তৈরী করে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপণ করলেন ইব্রাহীম আলী নামে এক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সতী নদীর উপর ড্রাম ব্রীজ উদ্বোধনের পর থেকে ওই এলাকার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াত শুরু হয়। এতে খুশি পুরো গ্রামবাসী।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী (৪৫) তার স্কুল যাওয়া আসার পড়ও ওই এলাকার সতী নদীটি। এরপর তিনি ড্রাম ব্রীজ করার উদ্যোগ নেন। এর পর তিনি নিজস্ব ও দুই চারজন এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ২০টি ড্রাম ও শতাধিক বাঁশের সমন্বয়ে একটি ভাসমান বাঁশের ব্রীজটি নির্মান করলেন তিনি। ব্রীজটি নির্মান হওয়ায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি। তার এমন মহতী উদ্যোগ এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এ বিষয়ে শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী (৪৫) বলেন, ড্রাম ও বাঁশের মাছা দিয়ে ৫০ ফিট দূরত্বে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জন্য একটি সাঁকো তৈরী করি। কারণ বেশ কিছুদিন থেকে সতী নদীর উপর নির্মিত এটি সেতু ভেঙ্গে পড়ে যায়। কিন্তু নদীর দুই পাশে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের পাশা পাশি স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার কয়েক শত শিক্ষার্থী কোমর পরিমান পানিতে নেমে আলাদা পোষাক ব্যবহার করে স্কুল, কলেজে যাতায়াত করে।

আমার স্কুলের অনেক ছাত্র ছাত্রী ভয় ভয় করে যাতায়াত করে। এ জন্য আমি নিজ উদ্যোগে ও দুই চারজন বন্ধুসহ কয়েক জন মিলে ২০টি ড্রাম দিয়ে প্রায় ১ একশো বাঁশ দিয়ে পানির উপরে ৫০ ফিট বাঁশের তৈরী করি সাঁকো নির্মান করি ওই এলাকায় যাতায়াতের জন্য।

তিনি আরও বলেন, ব্রিজের অভাবে ভোগান্তিতে পড়া মানুষ গুলোর দিকে কেউ এগিয়ে না এলে আমি বাধ্য হয়ে নিজেই দুই চারজন এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ২০টি ড্রাম ও শতাধিক বাঁশের সমন্বয়ে একটি ভাসমান বাঁশের ব্রীজটি নির্মান করি। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়।

নওদাবাস দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ রুহুল আমিন বলেন, শালমারা ঘাটে একটি ব্রীজ ছিল সেটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙ্গার পর হতে মানুষের খুবই অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এখানে নদীর একবুক পানি পার হয়ে ছাত্রছাত্রীসহ সাধারন মানুষ যাতায়াত করে। পরে কয়েকজন এলকাবাসী ও শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী ভাই একটি পরিকল্পনা করে যে ড্রামের উপর বাঁশের মাছা তৈরী করে যাতায়াত করা যাবে। পরে তার উদ্যোগেই এ ভাসমান বাঁসের সাঁকোটি তৈরী করা হল।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এক বুক পানি পেরিয়ে বাড়ি ফিরি অনেক কষ্ট আর দুর্ভোগ। এখন ড্রাম ব্রীজ হওয়ায় আমরা খুব খুশি। এখন শিক্ষার্থীরা খুব দ্রুত সহজেই স্কুলে যেতে পারবে।

আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আব্দুল আলীম বলেন, মৃত প্রায় সতি নদী বর্ষকাল আসলে প্লাবিত হয়ে যায় আবার খড়ার সময় পানি থাকে। এখানে একটি ব্রীজ ছিল যে উপজেলা বাস্তবায়ন অফিস করেছিল কিন্তু সেটি ভেঙ্গে যায়।

এই নদীর উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে পানি পার হয়ে। তবে এই এলাকার শালমাড়া ঘোনাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম সুন্দর একটি চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছে।

কলেজ শিক্ষার্থী সজল বলেন, এই যে আমি সাইকেল ঘাড়ে করে এক বুক পানি পাড় হয়ে আসলাম। ব্রীজটি ভাঙ্গার পর দুর্দশায় ভুগছি। এখানে দেখার কেউ নেই। চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ দখেও না। আমরা খুব কষ্ট করে নদী পাড় হয়ে যাতায়াত করছি স্কুল কলেজে।

চন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুমতাহা বলেন, আমাদের ব্রীজটার জন্য খুব অসুবিধা হচ্ছে। আমরা স্কুল যেতে পারি না। এখানে যদি ব্রীজটা করে দিত তাহলে ভাল হত। এখানে একটি বাঁশের ব্রীজ করে দিচ্ছে স্যার। এটি যদিও এখন যাতায়াত করতে পারতেছি কিন্তু স্থায়ী ভাবে একটি ব্রীজ করে দেয়া হোক।

চাপারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফুয়াদ হোসেন বলেন, এখানে সতি নদীর উপর ব্রীজটি ভেঙ্গে গেছে। আমরা এই নদীটির পানি পাড় হয়ে স্কুলে যাই। এখানে একটি বড় ব্রীজ হওয়া জরুরী।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ফেরদৌস আহমেদ বলেন, সতি নদীর উপর আগে একটি ব্রীজ ছিল সেটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে এলাকার মানুষ কষ্টে পারাপার করছেন। ওই সেতুর টেন্ডার হয়েছে কাজও চলছে।

তিনি আরও বলেন, ওই এলাকার মানুষের সুবিধার্থে ব্রীজের ঠিকাদার ড্রাম এবং বাঁশ দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করেন বলে তিনি দাবী করেন।