• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাছ কাটার ঘটনায় তদন্ত শুরু

| নিউজ রুম এডিটর ৬:৫৮ অপরাহ্ণ | জুন ৬, ২০২২ লালমনিরহাট, সারাদেশ

আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ পিপলস নিউজে সংবাদ প্রকাশের পর লালমনিরহাটের আদিতমারীতে গ্রাম পুলিশ ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যক্তি মালিকানাধীন শতাধিক গাছ জোরপূর্বক কেটে নেওয়ার অভিযোগের তদন্তে নেমেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সোমবার(৬ জুন) দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রওশন আলী মন্ডল।

এ সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে জবানবন্দি দিতে গিয়ে আবেগে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্থরা। সন্তানের মত বড় করা গাছগুলো চোখের সামনে কেটে নিয়েছে ইউপি সদস্য ও গ্রামপুলিশ। যা ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকারদের দস্যুবৃত্তিকেও হার মানিয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের সেনপাড়া হলমোড় থেকে দক্ষিণে শ্মশানে যাওয়ার একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে।

সেই রাস্তার দুই পাশের জমির মালিকেরা দীর্ঘ দিন আগে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ লাগান। সাম্প্রতিক সময়ে রাস্তাটি সংস্কার করতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ৪০ দিনের একটি কর্মসূচি প্রকল্প দেওয়া হয়।

প্রকল্পটির সভাপতি ওই ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের এক নং ওয়ার্ড সদস্য লালন মিয়া।

গত বুধবার(২৫ মে) সকালে ইউপি সদস্য লালন মিয়া হঠাৎ গ্রাম পুলিশ নিয়ে এসে ওই রাস্তার দুই পাশের শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে যান।

রাস্তার পাশে এসব গাছ সরকারি দাবি করে তারা কেটে নেন। বিষয়টি নিয়ে কাউকে জানালে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি ছাড়া করার হুমকি দেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্থরা।

ক্ষতিগ্রস্থদের এমন অভিযোগে ৩০ মে “ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে শতাধিক গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ” শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার প্রেক্ষিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফরের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জি আর সারোয়ার। ইউএনও’র নির্দেশে সোমবার(৬ জুন) ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থলে যান তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রওশন আলী মন্ডল।

তদন্ত কর্মকর্তার সামনে জবানবন্দি দিতে অনেকেই আবেগে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সন্তানের মত বড় করা ফলভর্তি এসব গাছ চোখের সামনে কেটে নিয়ে যান ইউপি সদস্য লালন মিয়া। প্রতিবাদ করায় তাদেরকে ভিটেমাটি ছাড়া করারও হুমকী দিয়েছেন। এ লুন্ঠনকে ৭১ সালের রাজাকারের লুন্ঠনকে হার মানিয়েছে বলেও ক্ষতিগ্রস্থরা দাবি করেন। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ন্যায় বিচার দাবি করেন তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত কলেজ শিক্ষক জগবন্ধু রায় বলেন, বহু বছর আগে লাগানো গাছগুলো হঠাৎ ইউপি সদস্য লালন মিয়া গ্রামপুলিশ নিয়ে এসে কেটে নিয়ে যায়। গাছগুলো রাস্তার জমিতে পড়েছে দাবি করে কেটে নেয় তারা। রাস্তার সীমানা নির্ধারনে জমি পরিমাপ করতে একটু সময় চেয়েছি। কিন্তু তারা মানে নি। চোখের সামনে ফলসহ সবগুলো গাছ কেটে নিয়ে গেছে। তাদের এ লুন্ঠন ৭১ সালের রাজাকারদের লুন্ঠনকেও হার মানিয়েছে। অভিযোগ দেয়ায় আমাদেরকে ভিটে মাটি ছাড়া করার হুমকী দিচ্ছেন মেম্বর ও তার লোকেরা।

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত ময়না রানী বলেন, আমার ১৩টি মোটা মোটা গাছ কেটে নিয়েছে। অনেক অনুরোধ করেও বাঁচাতে পারিনি। গাছগুলোর বাজারে ৬৫/৭০ হাজার টাকা হবে। সবগুলো গাছ আদিতমারী রেলগেটের করাত কলে রেখেছেন ইউপি সদস্য লালন মিয়া।

তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রওশন আলী মন্ডল বলেন, প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগটি তদন্ত করতে নির্দেশনা পেয়েছি। তাই সরেজমিনে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সারোয়ার বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঘটনাটি জেনে তদন্ত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পৌছলে বিধিমত ব্যবস্থা নেয়া হবে।