• আজ ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে ব্যস্ত কামাররা ক্ষতিকর যন্ত্রপাতি তৈরী করেন না

| নিউজ রুম এডিটর ১২:৪৬ অপরাহ্ণ | জুন ১৩, ২০২৪ কুড়িগ্রাম, রংপুর, সারাদেশ

হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে ঈদকে ঘিরে বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা। ক্রেতারা খুঁজছেন শান দেয়া ঝকঝকে দা ও ছুঁরি। কেউ কেউ পরখ করে নিচ্ছেন ঠিকমতো হার কাটবে কিনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কামারপাড়ায় ঝনঝন শব্দ জানান দিচ্ছে তাদের কাজের ব্যস্ততা।

 

তবে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্মকাররা ক্ষতিকর যন্ত্রপাতির অপব্যবহার করতে দেননা বলে জানিয়েছেন।
একসময় কৃষিকাজ, বাড়িঘর মেরামত ও গৃহস্থালী কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল কামারদের। ব্যবসাটা তখন ছিল জমজমাট। হাল আমলে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সেই পেশা এখন কোনঠাসা হয়ে পরেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও গ্রামে গ্রামে ছিল কামারদের অবস্থান।

 

এখন কাচামালের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের কারণে শতশত মানুষ পেশা পরিবর্তন করেছে। তবে কামারদের দক্ষ হাতের কাজের এখনো জনপ্রিয়তা রয়েছে। যতটা না রেডিমেড দা-ছুঁরির ব্যাপারে। ফলে কোরবাণী এলেই আবার লোকজন ছুটে আসেন কামারদের কাছেই। এই ছুঁরি বা দা দিয়ে কোরবাণী দেয়া গরুর যে কোন হাড় বা শক্ত মাংস সহজে কাটাকাটি করা যায়। ভোগান্তিতে পরতে হয় না তাদেরকে। গুণগতমানের কারণে এখনো মানুষ তাদের কাছে আছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজারের সবচেয়ে পুরাতন কর্মকার মোজাম্মেল হক জানান, প্রায় ৩৬বছর ধরে এই পেশায় আছি। পেশাটার প্রতি মায়া পরে গেছে। ছাড়তে পারি না। এখন ১২/১৩ টাকার কয়লা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। ৩০টাকা কেজির লোহা কিনতে হচ্ছে একশ টাকার উপরে। সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের তৈরী জিনিষপত্রের দাম তেমনটা বাড়েনি। ফলে অল্প লাভেই সন্তষ্ট থাকতে হচ্ছে।

পাশর্^বর্তী ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা ভবেন ও খগেন দুই ভাই প্রায় ৩৪বছর ধরে কাজ করছেন। পাশেই কাজ করছেন তাদের গ্রামের কৃষ্ণমোহন। তারা জানান, একসময় ছিনাইতে ২৫ঘর লোক কামারের পেশায় নিয়োজিত ছিল। এখন ৮ থেকে ১০জন এই পেশায় আছে। বাকীরা অন্য পেশায় চলে গেছে।

এসব যন্ত্রপাতি তৈরী করতে প্রশাসনের কোন অনুমতি নেয়া লাগে কিনা, এধরণের প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, এসব যন্ত্রাদি তৈরী করতে তাদেরকে কারো কাছ থেকে কোন অনুমতি নিতে হয় না। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার হয় এমন যন্ত্রপাতিও তারা কখনো তৈরী করেন না।

শুধুমাত্র সাংসারিক ও মাঠের কাজে ব্যবহার করা যায় এমন জিনিষই তৈরী করে আসছেন তারা যুগের পর যুগ ধরে।

বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, অর্থনৈতিক সংকট, র-মেটেরিয়ালস’র উচ্চমূল্য এবং সামাজিকভাবে মর্যাদা না পাওয়ায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করছেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ এই পেশার সাথে যারা জড়িত তাদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি আরো জানান, কুড়িগ্রাম সদরে প্রায় ৮০জন কামার রয়েছে। পুরো জেলা জুড়ে কামার রয়েছে প্রায় ৪শতাধিক।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকুল আলম হালিম জানান, যেহেতু ইক্যুইমেন্টগুলো ধারালো, সেগুলো যেন খারাপ মানুষের হাতে না পরে। এজন্য মোটিভিশনাল কথাবার্তার পাশাপাশি আমাদের নজরদারীও থাকে কামারদের কার্যক্রমের প্রতি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন খারা রিপোর্ট আসেনি।

 

তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকি যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারকৃত জিনিষগুলো যেন খারাপ কাজে ব্যবহার করা না হয়।