• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলছে বইমেলা”বই যে আমার প্রিয় বন্ধু

| নিউজ রুম এডিটর ৭:৪৯ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২ কলাম, পাঠকের কলাম

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে বইমেলা শুরু হওয়ার রীতি থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার কাঙ্ক্ষিত অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়েছে মাসের মাঝামাঝিতে।১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার। করোনা মহামারির কারণে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মেলা আরম্ভ হয়নি। তাই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল তিনটায় মেলা ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ প্রদান করেন। ১৫ জনকে বিশিষ্ট লেখক-কবি-সহিত্যিক এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।এবারের অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর মূল প্রতিপাদ্য- ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত মেলা হবে।সময় বৃদ্ধি হওয়ার ও সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে মেলার মেয়াদ বাড়তে পারে। এখন দুই সপ্তাহের জন্য মেলা হচ্ছে। প্রকাশকদের কাছ থেকেও স্টল বরাদ্দের ভাড়া অর্ধেক নেওয়া হয়েছে।প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা চলবে, তবে প্রবেশ করা যাবে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। ছুটির দিনে মেলার দরজা খুলবে বেলা ১১টায়।

* মেলায় এবার স্টল থাকছে৭৭৬

এবার মেলায় মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য রয়েছে ১৪২টি স্টল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ৬৩৪টি স্টল। প্যাভিলিয়ন রয়েছে ৩৫টি। উদ্যান অংশে পুরো মেলায় প্যাভিলিয়নগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্যাভিলিয়ন শুধু স্বাধীনতাস্তম্ভের সামনে রাখায় সমালোচনা হয়েছিল।

এ ছাড়া এবার উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের পূর্ব পাশে মেলার মূল প্রাঙ্গণে লিটল ম্যাগাজিনের জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাদের ১২৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতবার লিটল ম্যাগাজিনের স্টলের স্থান নিয়েও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল।

শিশু চত্বর থাকছে মেলার উদ্যান অংশে, তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে আলাদা করে এবার ‘শিশু প্রহর’ থাকবে না। প্রতিদিন বিকেল চারটায় মূল মঞ্চে থাকছে। বিষয়ভিত্তিক সেমিনার। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মেলায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির পাশাপাশি পুরো মেলা চত্বর এবং সংলগ্ন পথগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।

*বই যে আমার প্রিয় বন্ধুঃ-

এই মানব জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো বই।বই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। ‘বন্ধু’ শব্দটি কতই মধুর! বন্ধুত্ব নৈকট্যের পরিচয়বাহী, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও হৃদ্যতা এবং পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও মানসিক বন্ধনের প্রতীক। বন্ধুত্বের ফাটল বেদনাদায়ক হলেও অস্বাভাবিক নয়; যখন তখন লক্ষণীয়। অনেকে আজ বন্ধু কাল শত্রু। বন্ধু হয়ে বেঈমানি আর বিশ্বাসঘাতকতা কারো কাম্য নয়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত হলেও অহরহ ঘটছে। শুধু বন্ধু কেন পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বে বাবা-মা, ভাইবোন, নিকট আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে দূরত্ব। ছড়িয়ে পড়ছে হিংসা হানাহানি। পিপীলিকা যেমন বিপদে পানিতে পতিত গাছের পাতাকে বাঁচার অবলম্বন করে নেয়, তেমনি মানুষও বিপদ হতে বাঁচতে চায়, একটু আশ্রয় খোঁজে। প্রয়োজন হয় ভালো বন্ধুর। রক্ত মাংসে গড়া মানুষকে যেখানে বন্ধু হিসেবে ভেবেও সন্দেহ হয়, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল কাজ করে, সেখানে মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে বই।আর পড়তে শেখার পর থেকেই বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে শুরু করি। খুবই ভালো লাগতো গল্পের বই পড়তে। কখনও বা অভিনয় করে পড়তাম।
ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়তে ভালোবাসি। যে বইটা পড়তে শুরু করি সেটা শেষ না করলে ভালোই লাগেনা। আর সেই ছোট কাল থেকেই বইয়ের প্রতি আমার আকর্ষণ রয়েছে। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বই পড়ি।কেউ যদি আমাকে বই উপহার দেয় তাহলে আমি খুব খুশি হই। বই উপহার পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে তা অন্য কিছুতে নেই।
আর এসএসসি পরীক্ষার পর অবসরে প্রচুর বই পড়েছি আমি। আমি জানি এগুলো আমাকে কীভাবে সমৃদ্ধ করেছে।আর বই পড়ে মানুষ অজানাকে জানতে পারে অচেনাকে চিনতে পারে।

তাই বই বিশ্বাসের অঙ্গ জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার। বই আমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে এনে আলোর দিকে নিয়ে আসে।
বই অন্ধকার দূর করে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটায়। তাই বই যেমন সভ্যতার রক্ষাকবচ তেমন সভ্যতার চাবিকাঠি। সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে বই অতীত ও বর্তমানের বহুমুখী জ্ঞান সম্পদকে বহন করে চলেছে।

* পাঠাগার ভান্ডারঃ-

বই পড়া সকল দেশের মানুষের কাছে একটি শখের বিষয়। বিভিন্ন রুচির মানুষ তাদের রুচি মাফিক বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শখ চরিতার্থ করে।
মানুষের পুরো মনটার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় সাহিত্যে। তাই আমাদের বই পড়তেই হবে। কারণ বই পড়া ছাড়া সাহিত্য পাঠ নেই। এই চর্চার জন্য একক গ্রন্থ সম্ভব নয় চাই লাইব্রেরী।

ধর্ম-দর্শন নীতি,বিজ্ঞানের চর্চা যথাক্রমে মন্দির, গুহা, ঘর এবং গবেষণাগারে করা গেলেও বিদ্যা সংগ্রহ ও চর্চার জন্য পাঠাগারই একমাত্র স্থান।

* বই আমাদের আনন্দ এবং মানসিক সুস্থতাঃ-দেহের খাদ্য ভাত, রুটি মনের খাদ্যের যোগান দেয় বই।মনের সুস্থতার ওপর অনেকাংশে দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। মনকে সুস্থ রাখতে হলে ভালো বই পড়া দরকার। ভালো বই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে চেতনা জাগে।
তাছাড়া আমরা দেখি যে মানুষেরা বইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদের অনেক শত্রু কম। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের মন ভালো থাকে আমাদের মন প্রসন্নতায় ভরে যায়। তাই বই জ্ঞানের প্রতীক বই আনন্দের প্রতীক।

* বই সংস্কার থেকে মুক্তিঃ-মানুষ জীবনে তিনটি জিনিস কামনা করে পুরুষ, স্ত্রী এবং বই।
অবশ্য এই সহচর নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। বইয়ের ক্ষেত্রে যার বই পড়তে ভালো লাগে তাকে সেই বই পড়তে দেওয়া উচিত। তাহলে তার কাছ থেকে নতুন চিন্তার ফসল পাওয়া সম্ভব হবে।

জীবনকে বুঝতে হলে অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে বইয়ের সঙ্গ আমাদের অবশ্য প্রয়োজন।

পরিশেষে, আমাদের সবার নিয়মিত বই পড়া উচিত। প্রতিটি পরিবারে একটি করে লাইব্রেরি থাকা উচিত। সেখানে থাকতে হবে বিভিন্ন ধরনের বই। এর ফলে পরিবারের সদস্যরা সহজেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। সবার হৃদয়ে জ্ঞানের আলো প্রবাহিত হবে। বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সব বিষয়ে কম-বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারে।