• আজ ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিয়েভে ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী, যে কোনো মুহূর্তে আক্রমণ

| নিউজ রুম এডিটর ৯:১১ অপরাহ্ণ | মার্চ ১, ২০২২ আন্তর্জাতিক, লিড নিউজ

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাজধানীর উপকণ্ঠে শত্রুরা অবস্থান করছে। কিয়েভকে রক্ষায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার (১ মার্চ) এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, স্থল প্রতিরক্ষা বাহিনী ঐতিহাসিকভাবেই আমাদের ভূখণ্ডের জন্য লড়াই করে আসছেন।

কিয়েভের মেয়র আরও বলেন, শহরের প্রবেশপথগুলোতে দুর্গ ও তল্লাশিচৌকি স্থাপন করা হয়েছে। সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রয়োজন না-হলে ঘরের বাইরে বের হবেন না। আশ্রয়কেন্দ্রেও চলে যেতে পারেন।

রুশ সাঁজোয়া যান, ট্যাংক ও কামানের চল্লিশ মাইল সামরিক বহর নিয়ে কিয়েভের উপকণ্ঠে অবস্থান করছে রুশ বাহিনী। এদিকে কিয়েভের বাসিন্দাদের হুঁশিয়ারি করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজধানীর লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মঙ্গলবার বিকালে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা সেবা ও ৭২তম প্রধান সাইঅপস কেন্দ্রের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।

এতে ইউক্রেনের নাগরিকদের এসব জায়গা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তথ্য-হামলা বন্ধেও অভিযান চলছে। যদিও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণাকে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই বলে আখ্যায়িত করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে যোগাযোগকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। এরপর ইউক্রেনের সামরিক রাজনৈতিক নেতাদের আত্মসমর্পণ নিয়ে তারা ব্যাপক ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেবে।

ইউক্রেনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি বলছেন, রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১ মার্চ) সুইডেনের স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যালোলিনা লিন্ডহোম বিলিং নামের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি, ইউক্রেনে অভ্যন্তরীণভাবে ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বর্তমানে তারা ট্রেন, বাস ও গাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

এছাড়া ছয় লাখ ৬০ হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন। তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এমন দাবি করেছে।

জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র শাবিয়া মান্তো বলেন, দেখা গেছে পোল্যান্ডে ঢুকতে ৬০ ঘণ্টা ধরেও মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এছাড়া রোমানিয়া সীমান্তে ২০ কিমি দীর্ঘ মানুষের লাইন দেখা গেছে।

স্বাভাবিক সময়ে পুরনো কিয়েভের ছাদগুলোতে অকৃত্রিম সাদা তুষারে ঢেকে যাওয়া দেখে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যেত। কিন্তু এখন সেই ইউক্রেনের রাজধানীতে মানুষের হতাশার তালিকা দীর্ঘ। রুশ আগ্রাসনে হাজার হাজার বাসিন্দা বাড়ির ভূগর্ভস্থ অংশ আশ্রয় নিয়েছেন।

তাদের কাছে প্রচণ্ড শীতেও শরীরে তাপ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ভবনের নিচের কারপার্কে তারা জড়োসড়ো হয়ে আতঙ্ক নিয়ে থাকছেন। তাদের ভবিষ্যৎ ও ভাগ্যে কী আছে; তা জানা নেই।

শহরের পাতাল রেলেও মানুষের ভিড়। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আর বোমা থেকে বাঁচতে তারা সেখানে জড়ো হয়েছেন। এরপরেই নেমে এসেছে শীত। গত দুসপ্তাহে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠানামা করছে। এর মধ্যেই লাখ লাখ মানুষ নিজ ভূখণ্ড ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছেন।

যুদ্ধের প্রথম পাঁচ দিনে পাঁচ হাজার ৭১০ রুশ সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। মঙ্গলবার (১ মার্চ) এক ফেসবুক পোস্টে দেশটির সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে দুই শতাধিক রুশ সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।

এছাড়াও রাশিয়ার ১৯৮টি রুশ ট্যাংক, ২৯টি প্লেন, ৮৪৬টি সাঁজোয়া যান ও ২৯টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে।