জেলা প্রতিনিধি, নাটোরঃ নাটোরের বড়াইগ্রামে সরকারীভাবে খনন করা নদী ও খালের মাটি বিক্রি কোনভাবেই যেন থামছে না। বেপরোয়া মাটিখেকো চক্র প্রতিনিয়তই বিভিন্ন নদী ও খালের মাটি কেটে বিক্রি করছে। উপজেলার জোয়াড়ী এলাকায় বড়াল নদীর মাটি বিক্রি বন্ধ হলেও প্রায় সপ্তাহ খানেক যাবৎ পারগোপালপুরে খলিসাডাঙ্গা নদী এবং ধানাইদহ বিলে ঠেঙ্গামারা খাল খননের মাটি প্রকাশ্যে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
এভাবে প্রভাবশালীরা নদী-খালের মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মাটি বিক্রেতাদের দাবী, জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই তারা এ কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন।
জানা যায়, দুই বছর আগে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খলিসাডাঙ্গা নদী এবং এ নদীর শাখা ঠেঙ্গামারা খাল খনন করে দুই পাড়সহ পাশর্^বর্তী জমিতে মাটি রাখে। পরে একাধিক সরকারী প্রকল্পের আওতায় ঠেঙ্গামারা খাল খননের মাটি দিয়ে কৃষকসহ এলাকাবাসীর চলাচলের রাস্তা করে দেয়া হয়। নিয়মানুযায়ী এসব মাটি কোন ব্যক্তি বিক্রির কোন সুযোগ নেই। তারপরও বনপাড়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে পারগোপালপুর অংশে খলিসাডাঙ্গা নদী খননের মাটি এবং নগর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য রইস উদ্দিন রকেট, সাবেক সদস্য রেজাউল করিম ও আওয়ামীলীগ নেতা আবু সাঈদের নেতৃত্বে ধানাইদহ বিলে ঠেঙ্গামারা খালের মাটি কেটে গাড়ি প্রতি ১০০০-১৩০০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে রাত-দিনে দুটি এক্সকেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে এসব মাটি কেটে প্রতিদিন দুটি স্পট থেকে কমপক্ষে ৩০০-৩৫০ গাড়ি মাটি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে মাটি বিক্রি করে এ চক্রটি একদিনে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় কৃষকদের ফসল আনাসহ স্থানীয়দের চলাচলের পথ বন্ধের পাশাপাশি মাটি বোঝাই শত শত ট্রাক্টর চলাচলে পাকা রাস্তাঘাটও নষ্ট হচ্ছে।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পারগোপালপুর অংশে এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে খলিসাডাঙ্গা নদী খননের জমা করে রাখা মাটি প্রকাশ্যে দিনের বেলায় কেটে ট্রাক্টর দিয়ে দেদারছে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাটিখেকোরা প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকার মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। অপরদিকে, ধানাইদহ বিলে খালের ধারে একটি এক্সকেভেটর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
তারা সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায় রয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হবে মাটি কাটা। এখানে মাটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা শাহীন বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে জানিয়েই আমরা মাটি বিক্রি করছি। তবে নদী বা খাল খননের মাটি বিক্রি করার এখতিয়ার উনাদের আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
পারগোপালপুর গ্রামের আকরাম হোসেন জানান, আমার বাড়ি থেকে দুরত্ব কম হওয়ায় আমি প্রতি গাড়ি মাটি ৫শ’ টাকা দরে পাচ্ছি। আমি ৬০ গাড়ি মাটি নিচ্ছি। তবে ধানাইদহ গ্রামের সাজু জানান, আমার ৪০ গাড়ি মাটি লাগবে। আমি গাড়ি প্রতি এক হাজার টাকা করে মাটি কিনে নিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, রাতদিন ট্রাক্টর চলায় শব্দদূষণের পাশাপাশি ধূলাবালিতে জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। এছাড়া যেভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে তাতে বর্ষাকালে নদী তীরে আমাদের জমি ভেঙ্গে পড়বে।
ইউএনও আবু রাসেল জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।